বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চাকরি দিতে ‘টাকা নিয়ে আত্মসাৎ’ প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির

  •    
  • ২৬ নভেম্বর, ২০২১ ১৫:১১

বুড়িদহ গ্রামের সুজন কুমার ও দীপঙ্কর চৌধুরী জানান, ফারুকের স্ত্রীর চাকরির জন্য দেড় থেকে দুই মাস আগে স্কুলের প্রধান শিক্ষককে ৫ লাখ টাকা এবং সভাপতি সুজয়কে ৩ লাখ টাকা দেয়ার সময় তারা সঙ্গে ছিলেন। টাকাগুলো তাদের সামনেই ফারুক হস্তান্তর করেছেন। তারা বিষয়টি জানেন।

নওগাঁর মান্দায় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে আয়ার চাকরি দেয়ার কথা বলে মোটা অংকের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে।

তাদের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন উপজেলার শামুকখোল গ্রামের ফারুক হোসেন নামে একজন। সংবাদ সম্মেলনও করেছেন তিনি।

মান্দার বুড়িদহ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তৃপ্তিস মণ্ডল এবং ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সুজয় প্রামাণিকের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেছেন ফারুক।

তার অভিযোগ, বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী পদে নিয়োগের জন্য আড়াই মাস আগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সেই বিজ্ঞপ্তি মেসেঞ্জারে পাঠিয়ে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সুজয় প্রামাণিক তাকে যোগাযোগ করতে বলেন। দেখা করলে ফারুকের স্ত্রী শরিফুন নাহারকে আয়া পদে চাকরি দেবেন বলে জানান সভাপতি। এরপর তাকে নিয়ে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে বসে চাকরির বিষয়ে মৌখিক চুক্তি করেন।

আর চাকরির জন্য টাকার বিষয়ে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আহাদ আলীর সঙ্গে বসে কথা বলতে বলেন। ফারুক তার সঙ্গে দেখা করলে, স্কুলের উন্নয়নের জন্য ১২ লাখ টাকা দাবি করা হয়। পরে ৯ লাখ টাকায় দফা হয়।

চুক্তি অনুযায়ী, আগাম টাকা পরিশোধ করতে হবে বলে জানান সভাপতি সুজয়। পরে জমি বিক্রি করে ও উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে তিন ধাপে ৯ লাখ টাকা স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি সুজয় প্রামাণিককে দেন ফারুক।

মান্দার বুড়িদহ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তৃপ্তিস মণ্ডল (বাঁয়ে) ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সুজয় প্রামাণিক

তবে টাকা পাওয়ার পর দলীয়ভাবে নিয়োগ দেয়া হবে জানিয়ে নানা টালবাহানা শুরু করেন সুজয়। এখন টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করে ফারুককে হয়রানি ও বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন প্রধান শিক্ষক তিপ্তিস মণ্ডল ও সভাপতি সুজয়।

ফারুক নিউজবাংলাকে জানান, মৌখিক চুক্তির পর স্ত্রীর জমি বিক্রি করে ৬ লাখ ও এক ব্যক্তির কাছ থেকে চড়া সুদে ৩ লাখ টাকা সংগ্রহ করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘প্রথম ধাপে প্রধান শিক্ষককে ৫ লাখ টাকা দিয়ে চাকরি কনফার্ম করি। দ্বিতীয় ধাপে সভাপতি সুজয়কে তার অফিসে রাতে ৩ লাখ টাকা দেই এবং তৃতীয় ধাপে আরও ১ লাখ টাকা দেই।

‘টাকা দেয়ার সময় আমাদের গ্রামের তিনজনকে সাক্ষী হিসেবে সঙ্গে নিয়ে গেছি। তাদের সামনেই টাকা লেনদেন হয়েছে।’

ফারুক আরও বলেন, ‘পরবর্তীতে তারা আরও ১ লাখ টাকা দাবি করে। আমি সে টাকা না দিতে পারায় কিছু দিন পর তারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। আমি তাদের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তারা আমাকে এড়িয়ে যান।

‘এর বেশ কিছু দিন পরে তারা জানান, চাকরি দলীয় নেতা-কর্মীরা দেবে। আমাদের হাতে কিছু নেই। আমি আমার টাকা ফেরত চাইলে তালবাহানা শুরু করেন তারা। পরবর্তীতে টাকা চাইতে গেলে আমাকে বিভিন্ন হুমকি ও ভয়ভীতি দেখায় তারা।’

বুড়িদহ গ্রামের সুজন কুমার ও দীপঙ্কর চৌধুরী জানান, ফারুকের স্ত্রীর চাকরির জন্য দেড়-দুই মাস আগে স্কুলের প্রধান শিক্ষককে ৫ লাখ টাকা এবং সভাপতি সুজয়কে ৩ লাখ টাকা দেয়ার সময় তার সঙ্গে ছিলেন। টাকাগুলো তাদের সামনেই ফারুক হস্তান্তর করেছেন। তারা বিষয়টি জানেন।

স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আহাদ আলী বলেন, ‘যেহেতু একটা অভিযোগ উঠেছে, অবশ্যই কেউ না কেউ কিছু নিয়েছে। নয়ত কথা আসবে কী করে। তবে কে কত টাকা নিয়েছে তা আমার জানা নেই।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তিপ্তিস মণ্ডল অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘ফারুকের কাছ থেকে কোনো প্রকার টাকা আমি নেই নাই। এটা ভিত্তিহীন অভিযোগ। ফারুক আমার কাছে তার স্ত্রীর চাকরির বিষয়ে এসেছিল। আমি বলেছি, দরখাস্ত করুক, ভাগ্যে থাকলে হবে।’

লেনদেনের বিষয়ে সাক্ষী আছে জানালে তিনি বলেন, ‘এখন তো তথ্য প্রযুক্তির যুগ। আমার কথা কেউ নকল করতে পারে। এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।’

ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সুজয় প্রামাণিকও অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘অভিযোগ করলেই যে তার সত্যতা থাকবে সেটা কে বলেছে? ফারুক আমার কাছে আসেনি বা আমার সঙ্গে তার কোনো লেনদেন হয়নি। এটা মিথ্যা ও বানোয়াট কথা।’

মান্দা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ্ আলম শেখ বলেন, ‘বুড়িদহ স্কুলের বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের বিষয়ে ব্যস্ত আছি। পরে তদন্ত করে সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর