ছাত্রলীগের নির্মম নির্যাতনে নিহত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের মৃত্যুর দুই বছর পর বিশ্ববিদ্যালয়টির ভর্তি পরীক্ষায় পাস করেছেন আবরার নামের ১৯ জন।
তাদের নামের অংশে ‘আবরার’ শব্দটি রয়েছে। তবে তিন শিক্ষার্থীর নামের সঙ্গে যুক্ত আছে ‘ফাহাদ’ শব্দটি।
বুয়েটে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল বিশ্লেষণে এ তথ্য পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়টির ওয়েবসাইটে ফল প্রকাশ করা হয়।
প্রকৌশল এবং নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ এবং স্থাপত্য বিভাগের আওতায় বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রাক-নির্বাচনি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া ছয় হাজার শিক্ষার্থী গত ৬ নভেম্বর চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।
এবার প্রকৌশল, পুরকৌশল, যন্ত্রকৌশল, তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল এবং স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদের অধীনে ১২টি বিভাগে স্নাতকে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করা হবে। চূড়ান্ত পর্বে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া ১ হাজার ২১৫ জন ভর্তির সুযোগ পাবে। এ বছর বুয়েটে ভর্তির সুযোগ পাওয়া তালিকায় ১৫ শিক্ষার্থীর নামের অংশে ‘আবরার’ শব্দটি রয়েছে।
এ ছাড়া অপেক্ষমাণ তালিকায় আছেন আরও চারজন শিক্ষার্থী, যাদের নামের অংশেও ‘আবরার’ রয়েছে। ভর্তির সুযোগ পাওয়া তিন শিক্ষার্থীর নামের সঙ্গে যুক্ত আছে ‘ফাহাদ’ শব্দটি। তাদের মধ্যে দুজন অপেক্ষমাণ তালিকায় রয়েছেন।
ছাত্রলীগের নির্মম নির্যাতনে নিহত বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। ফাইল ছবি
বুয়েটে ভর্তির সুযোগ পাওয়া ‘আবরার’ নামের ওই শিক্ষার্থীরা হলেন, আবরার আসেম ফুয়াদ (চতুর্থ), আশিক আবরার নাইম (১১তম), আবরার জাহিন সরকার (২১তম), আবরার জামিল (৬৭তম), আবরার রহমান আবির (১০৪তম), হাদি মোহাম্মদ ফারদিন আবরার (৩১৭তম), আবরার শাহরিয়ার হোসাইন (৩১৮তম), ইসমাম আবরার ইউশা (৪১৭তম), আবরার জাহিন (৫৪৭তম), মো. আবরার ফায়াজ (৭৩৪তম), এ টি এম আবরার মোহতাদি (৭৮৭তম), আবরার ইয়াসির (৮৩৭তম), শেখ মাহির আবরার (৯০৭তম), ফাইয়াজ আবরার (৯৪৫তম) ও মো. আবরার শাহরিয়ার কবির (১০৬৬তম)।
অপেক্ষমাণ তালিকায় আছেন ফাহিম আবরার (১২৩৬তম), আবরার আহমেদ ফাহিম (১৩০০তম), আবরার ইহতাসুম আফিফ (১৩১৭তম) এবং আবরার হাফিজ রাব্বানী (১৭৮৬তম)। মূল তালিকায় ‘ফাহাদ’ নামের শিক্ষার্থীরা হলেন আতিকুল আলম ফাহাদ (৭৯৯তম)। অপেক্ষমাণ তালিকায় রয়েছেন মো. ফাহাদ ইসলাম দীপ্ত (১৩৫১তম) এবং নাবিল ফাহাদ (১৪৮৭তম)।
এর আগে আবরার ফাহাদ হত্যার বছর অর্থাৎ ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষেও বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায় ‘আবরার’ নামের ১৭ জন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভর্তির সুযোগ পান। তাদের মধ্যে মূল তালিকায় ছিলেন ১৫ জন আর অপেক্ষমাণ তালিকায় ২ জন।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরে বাংলা হলে পিটিয়ে হত্যা করা হয় তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে। এ ঘটনায় করা মামলায় ওই বছরের ১৩ নভেম্বর বুয়েটের ২৫ ছাত্রের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
গত বছরের ২১ জানুয়ারি অভিযোগপত্রটি আমলে নেয় আদালত। ওই বছরের ২ সেপ্টেম্বর তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এ বছরের ৪ মার্চ এই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।
আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ হয়েছে। ২৮ নভেম্বর রোববার রায় ঘোষণার দিন ঠিক করেছে আদালত। অভিযুক্তদের সবাই বুয়েট ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাদের মধ্যে বর্তমানে তিনজন পলাতক।