বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরেই রোগীদের নিয়ে দালালদের টানাহ্যাঁচড়া

  •    
  • ২৬ নভেম্বর, ২০২১ ০৮:৫০

রোগীদের অভিযোগ, শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জনবল সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। দক্ষ লোকবলের অভাবে এখানে অনেক সেবা না মিললেও এখানকার চিকিৎসকরাই বাইরের ক্লিনিকে গেলে স্বনামধন্য চিকিৎসক বনে যান।

ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হওয়া মাত্রই হাত থেকে ব্যবস্থাপত্র কেড়ে নেন দালালরা। পরে তারা তাদের পছন্দমতো ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নাম বলে দেন। তাদের ক্লিনিকে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন, এ পরীক্ষাটা শুধু সেখানেই করা হয়।

শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগী এভাবেই তার ভোগান্তির কথা জানান।

তবে শুধু ওই রোগী নন, উপজেলার ১৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার বাসিন্দাদের জন্য একমাত্র সরকারি হাসপাতালটির বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে এসে প্রতিদিনই দালালদের হয়রানির শিকার হন অনেকে।

রোগীদের অভিযোগ, শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জনবল সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। দক্ষ লোকবলের অভাবে এখানে অনেক সেবা না মিললেও এখানকার চিকিৎসকরাই বাইরের ক্লিনিকে গেলে স্বনামধন্য চিকিৎসক বনে যান।

সিজার থেকে শুরু করে ক্লিনিকে সব ধরনের জটিল রোগের চিকিৎসাই করেন তারা। উপজেলা হাসপাতালের চিকিৎসক দিয়েই চলে শিবচরের ১৮ থেকে ২০টি ক্লিনিক ও ডায়াগস্টিক সেন্টার। মূলত তাদের সহযোগিতায় হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম্য দিন দিন সীমা ছাড়াচ্ছে।

তাদের অভিযোগ, শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০ বছর সিজারিয়ান অপারেশন না হলেও ক্লিনিকগুলোতে এক্সরে-আলট্রাসনোগ্রামসহ অহরহই প্রসূতিদের সিজার করানো হয়।

হাসপাতালের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার শশাংক চন্দ্র ঘোষ নিজেও শিবচর বাজারের ‘মা ও শিশু হাসপাতালে’ নিয়মিত রোগী দেখেন। সেখানে সিজার থেকে শুরু করে সব রোগের চিকিৎসা দিলেও সরকারি হাসপাতালে সেই সেবা মেলে না।

শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা রোগী মাহবুবুল আলম অভিযোগ করেন, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালালরা সব সময় হাসপাতালের ভেতরে ঘোরাঘুরি করে। অনেকে আবার চিকিৎসকের চেম্বারের মধ্যে অবস্থান করে। চিকিৎসকরা রোগীদের ব্যবস্থাপত্র দিলেই এসব দালাল পাগল হয়ে যায় তাদের প্রতিষ্ঠানে নেয়ার জন্য। এতে রোগী ও স্বজনদের প্রতিদিনই নাজেহাল হতে হয়।

কাঁঠালবাড়ি এলাকা থেকে আসা রোগী ফয়জুল শেখের অভিযোগ, শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শৌচাগারের অবস্থা বেহাল। সুস্থ মানুষও এখানে একদিন থাকলে রোগী হয়ে যাবে।

আরেক রোগী বাবুল খাঁ জানান, হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা তিন থেকে চার দিন পর আসেন। দুর্গন্ধে হাসপাতালে থাকা যায় না। কেউ কোনো ব্যবস্থাও নেয় না।

মাদারীপুর জেলা পরিষদের সদস্য আয়শা সিদ্দিকা জানান, উপজেলায় অবকাঠামো, শিক্ষা, যোগাযোগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি হলেও স্বাস্থ্য সেবায় করুণ অবস্থা বিরাজ করছে। উপজেলার ১৯ ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভার বাসিন্দা বঞ্চিত হচ্ছে উন্নত চিকিৎসা থেকে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি কিছুদিন আগে ৩১ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও সেবার মান কমে গেছে। কোনো রাগী এলে চিকিৎসকরা রেফার্ড করে দেন অন্য হাসপাতালে। পাঠিয়ে দেন তাদের পছন্দমতো ক্লিনিকে। চিকিৎসকরা কোনো দায়িত্বই নিতে চান না।

শিরুয়াইল থেকে আসা রোগী বজলুর রহমান জানান, প্রতিদিনই শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অবস্থান নেয় নির্দিষ্ট কিছু দালাল সিন্ডিকেট। তাদের সঙ্গে চিকিৎসকদের যোগসাজশ রয়েছে। কারণ প্রায় সব চিকিৎসকই কোনো না কোনো ক্লিনিক বা ডায়াগস্টিক সেন্টারে বসে রোগী দেখেন। বিনিময়ে এসব দালালকে দেন কমিশনের টাকা।

খানকান্দি গ্রামের রাজু খান অভিযোগ করেন, হাসপাতালের সামনের গেটে বেশ কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স সার্বক্ষণিক রাখা থাকে। রোগী পাঠাতে এদের অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হয়। সেই অতিরিক্ত ভাড়া থেকেও কমিশন নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস থেকে জানা যায়, এখানে ২৭ জন চিকিৎসক আছেন। এ ছাড়া নার্স রয়েছেন ২৪ জন, অফিস সহকারী তিনজন, ইপিআই দুজন, পরিচ্ছন্নতাকর্মী একজন, এমএলএস ও ঝাড়ুদার রয়েছেন দুজন করে।

রোগীরা জানান, শিবচরে প্রায় ১৮ থেকে ২০টি ক্লিনিক রয়েছে। হাসপাতালের ভেতরে প্রতিদিনই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং চক্রের ১০-১৫ সদস্য সক্রিয় থাকেন। হাসপাতালের চিকিৎসকরাই সেসব ক্লিনিকে গিয়ে রোগী দেখেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, দালালদের উৎপাতের বিষয়টি একাধিকবার ঊর্ধ্বতনদের নজরে দিয়েও সমাধান হয়নি। এমনকি ক্লিনিক মালিকপক্ষের সঙ্গেও আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু তারা কথা দিয়েও কথা রাখেননি।

দালালদের উৎপাতে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে বলেও স্বীকার করেন তিনি।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার মিঠুন বিশ্বাস বলেন, ‘হাসপাতালের অভ্যন্তরে অনেক সময় বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কাজ করে এমন ছেলে-মেয়েদের দেখা যায়। ক্লিনিকের দালালদের দৌরাত্ম্য চরম আকার ধারণ করেছে। আমরা কয়েকবার এর সমাধান করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু ক্লিনিক মালিকদের কোনোভাবে দমানো যায় না।

‘আর ক্লিনিকগুলো চালিয়ে রাখেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তাররাই। এখানকার ডাক্তাররা ক্লিনিকে গেলেই তো অভিজ্ঞ হয়ে যান। দালালরা এসে চোখাচোখি হলে তারা সালাম দিয়ে কেটে পড়ে। কখনোই চেম্বারে প্রবেশ করেনি।’

শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শশাঙ্ক চন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘হাসপাতালে দালালের দৌরাত্ম্যের অভিযোগ শুনেছি। হাসপাতাল প্রাঙ্গণে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালালদের প্রবেশ নিষেধ করা হবে। তবে দালাল নির্মূল করা আমার একার দায়িত্ব না।’

কর্মঘণ্টার বাইরে কোনো চিকিৎসক ক্লিনিকে রোগী দেখলে তার কিছু করার নেই দাবি করে বলেন, ‘অফিস টাইমের বাইরে কোথায় কে কী করল, তা দেখার দায়িত্ব আমার নয়। ডাক্তাররা ক্লিনিকে বা অন্য কোথাও প্র্যাকটিস করতেই পারে।’

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে জানান, হাসপাতালে মাত্র একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী কাজ করেন। এ বিষয়ে অনেকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েও সমাধান পাননি।

এ বিভাগের আরো খবর