বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ফলন ভালো হলেও দামে হতাশ কপি চাষিরা

  •    
  • ২৬ নভেম্বর, ২০২১ ০৮:২৫

কৃষকরা বলছেন, বিঘাপ্রতি কপি চাষে যে খরচ হয় সেই হিসাবে বর্তমান বাজারদর কম। এভাবে দাম কমতে থাকলে লাভ তো দূরের কথা, উৎপাদন খরচই উঠবে না।

নওগাঁ জেলায় এবার রেকর্ড পরিমাণ জমিতে ফুলকপি ও বাঁধাকপির চাষ হয়েছে। বাজারে উঠতেও শুরু করেছে শীতকালীন সবজিটি। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে দাম ১০-৫ টাকা কমায় হতাশা প্রকাশ করেছেন জেলার কপি চাষিরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ির তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে নওগাঁয় ১ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে কপির চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং রোগ কম হওয়ায় ফলনও ভালো হয়েছে।

জেলায় সবচেয়ে বেশি কপির চাষ হয়েছে সদর উপজেলার কৃত্তিপুর, সালেবাস, বর্ষাইল ও চকআতিতা এলাকায়। এসব এলাকার চাষিরা প্রতিবছরই শীতকালীন এই সবজি চাষ করেন। এবার লাভের আশায় অনেকে কপি চাষ করলেও দাম কমতে থাকায় হতাশা প্রকাশ করেছেন তারা।

কৃষকরা বলছেন, বিঘাপ্রতি কপি চাষে যে খরচ হয় সেই হিসাবে বর্তমান বাজারদর কম। এভাবে দাম কমতে থাকলে লাভ তো দূরের কথা উৎপাদন খরচই উঠবে না।

তবে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, উৎপাদন বেশি হওয়ায় দাম কিছুটা কম।

সদর উপজেলার চকআতিতা গ্রামের মুহাম্মদ আলী জানান, এ বছর তিনি এক বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করেছেন। গত সপ্তাহে প্রতি পিস কপি ২০ টাকায় বিক্রি করেছেন। সেই কপিই এখন ১২-১৫ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, প্রতি বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষে সেচ, সার, বীজ, ওষুধের পেছনে খরচ হয় ২০-২৫ হাজার টাকার মতো। দেড় হাত দূরত্বে একটি করে বীজ হিসাবে প্রতি বিঘায় কপির বীজ থাকে ৩ হাজার পিস। কিছু নষ্টও হয়। আবার কপি হাটে নিয়ে বিক্রি করতে পরিবহন ও শ্রমিক খরচও হয়।

সেই হিসাবে বর্তমানে বাজার দরে খুব বেশি লাভ হবে না। যদি প্রতি পিস ২৫-৩০ টাকায় বিক্রি করা যায়, তাহলে ভালো লাভ থাকে।

তিনি বলেন, ‘এক সপ্তাহে অর্ধেকের মতো দাম কমে গেছে। আশঙ্কা করছি, যদি আরও দাম কমে যায় তবে লস হবে। কারণ গত বছর শীতের শেষের দিকে ৩ টাকা পিস কপি বিক্রি করতে হয়েছে।’

সালেবাজ গ্রামের চাষি আবুল কালাম আজাদ জানান, ‘এ বছর হামি দেড় বিঘা জমিত বাঁধাকপির চাষ করিছি। ৫-৬ দিন আগেও প্রতি পিস কপি ৩০ টেক্যা দরে পাইকারি বিক্রি করিছি। বর্তমানে ১৫-১৮ টেক্যা করা বিক্রি করা লাগিচ্ছে।

‘কপি চাষে প্রতি বিঘাত খরচ হয় ২০-২৫ হাজার টেক্যার মতো। একন দাম যদি এত কম পাই তালে লাভ বেশি হবে। যেহেতু দাম কমা গেছে আর বাড়বে বলা মনে হচ্চে না। যদি দাম আর কমবার লাগে তালে লস হইয়া যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যদি এক বিঘাত ক্ষেতের কপি ৩০ টেক্যা দরে বিক্রি করবার পারি, তালে সব খরচ বাদ দিয়া ৬০-৭০ হাজার টেক্যার মতো লাভ করা যাবে। একন দাম কমার লাগিচ্ছে কী যে হয় বুঝবার পারিচ্চি না।

‘গত বছর কিন্তু শীতের শেষের দিকে ২-৩ টেক্যা করাও বিক্রি করা লাগিছে। অনেকে কপি বিক্রি না করা গরু দিয়া খাইয়াইছি মনের দুক্কে।’

সদর উপজেলার হাটচকগৌড়ি বাজারের পাইকারি বিক্রেতা রবিউল ইসলাম জানান, কপির দাম কমছে। গত সপ্তাহে ফুলকপি পিস হিসেবে ৩০ টাকায় কিনে ৩৫ টাকায় বিক্রি করেছেন। বাঁধাকপি ৪০ টাকায় কিনে বেচেছেন ৪৫ টাকায়।

এখন ফুলকপি পাইকারিতে ১০-১২ টাকায় কিনে ১৫-২০ টাকা দরে এবং বাঁধাকপি প্রতি পিস ২০-২৫ টাকায় কিনে ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি করছেন।

নওগাঁয় কপির উৎপাদন বেশি হওয়ায় দাম কিছুটা কমেছে বলেও জানান তিনি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁর প্রশিক্ষণ বিষয়ক কর্মকর্তা এ কে এম মনজুরে মাওলা জানান, চলতি বছর জেলায় বাঁধাকপির চাষ হয়েছে ৫১০ হেক্টর জমিতে এবং ফুলকপি চাষ হয়েছে ৬১০ হেক্টরে। জেলায় সবজির আবাদ গত বছরের চেয়ে কিছু বেড়েছে।

কপির দাম কমা নিয়ে তিনি বলেন, ‘নওগাঁসহ দেশের সব জেলায় কপিসহ সবজির সরবরাহ বাড়ায় বর্তমানে দাম কিছুটা কম। তবে শীত মৌসুমজুড়েই কপি উৎপাদন হয়ে থাকে। আশা করছি, কপি চাষিরা লাভবান হবেন।

‘কৃষি অফিস থেকে আমরা চাষি ভাইদের সব সময় মাঠপর্যায়ে গিয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকি। চলতি মৌসুমে কপি চাষে তেমন কোনো রোগবালাই নেই। যার কারণে জেলায় কপির ফলন ভালো হয়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর