বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কয়লা বাদ দিয়ে হালনাগাদ হচ্ছে বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনা

  •    
  • ২৬ নভেম্বর, ২০২১ ০৮:১৮

বিদ্যুৎ খাতের মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হয় ২০১০ সালে। ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রণীত এ পরিকল্পনায় ধাপে ধাপে মোট ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়। এর মধ্যে কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র ছিল ৫০ শতাংশ। এই মাস্টারপ্ল্যান ২০১৬ সালে হালনাগাদ করা হয়। তাতে ২০৪১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন জ্বালানিভিত্তিক ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের উৎপাদন পরিকল্পনা দেখানো হয়। এতে কয়লার ব্যবহার ৩৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।

বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারের অস্থিতিশীলতা ও জলবায়ুর ক্ষতিকর পরিবর্তন সামনে রেখে বিদ্যুৎ খাতের মাস্টারপ্ল্যানে (পিএসএমপি) পরিবর্তন আসছে। জ্বালানি খাত অন্তর্ভুক্ত করে সমন্বিত মাস্টারপ্ল্যান (পিইএমপি) প্রণয়নের কাজ চলছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ নিউজবাংলাকে বলেন, সমন্বিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মাস্টারপ্ল্যান জ্বালানি নিরাপত্তা ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে সহযোগিতা করবে।

‘এই মহাপরিকল্পনায় ২০৫০ সাল অবদি জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত উন্নয়নের পরিকল্পনা এবং দিকনির্দেশনা রয়েছে। অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে এটি চূড়ান্ত করা হবে।’

জ্বালানি বিভাগের মতে, মহাপরিকল্পনায় পরিবেশ দূষণ রোধে ভবিষ্যতের বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনায় কয়লার ব্যবহার কমানো হচ্ছে। বিপরীতে বাড়ানো হবে আমদানি করা গ্যাসভিত্তিক (এলএনজি) বিদ্যুৎ প্রকল্পের সংখ্যা। জোর দেয়া হবে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপরও।

মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের অংশ হিসেবে বিদ্যুৎ-জ্বালানি সঞ্চালন ও বিতরণ এবং মূল্য ও সরবরাহব্যবস্থা নিয়েও আলোচনা করা হবে।

জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি-জাইকা এই মহাপরিকল্পনা প্রণয়নে সহযোগিতা করছে। এ জন্য ইতিমধ্যে একটি স্টিয়ারিং কমিটি গঠিত হয়েছে। এর অধীনে খাতভিত্তিক কয়েকটি কারিগরি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। জাইকাকে এ কাজে সহযোগিতা করছে স্থানীয় দুটি ফার্ম।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিদ্যমান মাস্টারপ্ল্যান পর্যালোচনা করে প্রযুক্তি ও নীতিমালা যুগোপযোগী করা, জ্বালানি তথ্য ব্যবস্থাপনা সিস্টেম উন্নয়ন করা, প্রাথমিক জ্বালানি সরবরাহ চূড়ান্ত করে বিশ্লেষণ, চাহিদার পূর্বাভাস, পাওয়ার সিস্টেম পরিকল্পনা গ্রহণ, এলএনজি আমদানি, পরিবেশ ও সামাজিক অবস্থা বিবেচনা- এই সমন্বিত মহাপরিকল্পনায় স্থান পেয়েছে। এখানে চাহিদার পূর্বাভাস বিষয়ে বিভিন্ন মডেল তুলে ধরা হয়েছে।

নসরুল হামিদ বলেন, ন্যাশনাল ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন (এনডিসি) ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত ৪৮ দশমিক ৯ শতাংশ গ্রিন হাউস গ্যাস কমানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। সোলার হোম সিস্টেম স্থাপনে বাংলাদেশ সারা বিশ্বের মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে। সরকার কার্বন নিঃসরণ কমানোকে প্রাধান্য দিয়ে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, মহাপরিকল্পনা প্রণয়নে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে বাংলাদেশের অঙ্গীকারকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে। বাস্তবায়ন অগ্রগতি কম- এমন ১০টি কয়লাভিত্তিক প্রকল্প ইতিমধ্যে বাতিল করা হয়েছে। উদ্যোক্তারা চাইলে কয়লার পরিবর্তে এই প্রকল্পগুলো এলএনজিভিত্তিক করার উদ্যোগ নিতে পারে।

দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া ও পটুয়াখালীর পায়রায় কয়লাভিত্তিক তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রয়েছে। এগুলোর উৎপাদনক্ষমতা এক হাজার ৬৮৮ মেগাওয়াট, যা মোট উৎপাদনের ৮ শতাংশ। নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে ৩ শতাংশ বা ৭২২ মেগাওয়াট, যা ২০৩০ সালের মধ্যে ২০ শতাংশে উন্নীত করার চিন্তা রয়েছে সরকারের।

প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় বিদ্যুৎ বিভাগ গ্রিন ও ক্লিন এনার্জির প্রসারে জোর দিয়েছে। তাছাড়া কপ-২৬-এ বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে প্রায় ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। তাই পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয় এমন জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জোর দেয়া হচ্ছে। প্রযুক্তির উন্নতি হচ্ছে, সোলার বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ কমে আসছে। এ খাতে আরও উন্নতির সুযোগ রয়েছে।

পাওয়ারসেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, সারা বিশ্ব পরিবেশবান্ধব জ্বালানির দিকে ঝুঁকছে। চীন কয়লার ব্যবহার কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। বিশ্বব্যাংকসহ উন্নয়ন সহযোগী অনেক সংস্থাও কয়লাভিত্তিক প্রকল্পে বিনিয়োগ না করার ঘোষণা দিয়েছে। সব মিলিয়ে সামনে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও নিউক্লিয়ার বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়বে। বাংলাদেশও সেদিকে এগোচ্ছে।

হালনাগাদ হচ্ছে মাস্টারপ্ল্যান

জাইকার সহযোগিতায় বিদ্যুৎ খাতের মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হয় ২০১০ সালে। ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রণীত এ পরিকল্পনায় ধাপে ধাপে মোট ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়। এর মধ্যে কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র ছিল ৫০ শতাংশ। এই মাস্টারপ্ল্যান ২০১৬ সালে হালনাগাদ করা হয়। তাতে ২০৪১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন জ্বালানিভিত্তিক ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের উৎপাদন পরিকল্পনা দেখানো হয়। এতে কয়লার ব্যবহার ৩৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।

জ্বালানি বিভাগ বলছে, বিদ্যুতের মাস্টারপ্ল্যান হালনাগাদে কয়লার ব্যবহার কমবে। গ্রিন ও ক্লিন এনার্জির দিকে বেশি জোর দেয়া হবে।

বাতিল ১০ বিদ্যুৎ প্রকল্প

মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প।

তালিকায় বাদ পড়া কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে- সরকারি প্রতিষ্ঠান আশুগঞ্জ পাওয়ার কোম্পানির (এপিএসসিএল) পটুয়াখালী এক হাজার ৩২০ ও উত্তরবঙ্গে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট (গাইবান্ধা) কেন্দ্র এবং ওরিয়নের মাওয়া ৫২২, ঢাকা ২৮২, চট্টগ্রাম ২৮২ ও খুলনা ৫৬৫ মেগাওয়াট কেন্দ্র। এর মধ্যে খুলনার কেন্দ্রটির স্থান পরিবর্তন করে মহেশখালীতে ৭২৬ মেগাওয়াটের এলএনজিভিত্তিক করার প্রস্তাব দিয়েছে ওরিয়ন।

মহেশখালীতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট করে দুটি প্রকল্প বাতিল করেছে সরকার। এর একটি নির্মাণ করার কথা ছিল পিডিবি ও চায়না হুয়াদিয়ান হংকং (সিএইচডিএইচকে) কোম্পানির যৌথ অংশীদারত্বে প্রতিষ্ঠিত বে অব বেঙ্গল পাওয়ার কোম্পানি। এটি কয়লার পরিবর্তে এলএনজিভিত্তিক প্রকল্পে রূপান্তর হতে পারে। মহেশখালীর অন্য প্রকল্পটি দক্ষিণ কোরিয়ার কেপকোর সঙ্গে যৌথ অংশীদারত্বে নির্মাণের কথা ছিল।

বাতিলের তালিকায় আরও রয়েছে মাতারবাড়ীতে প্রস্তাবিত কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির (সিপিজিসিবিএল) এক হাজার ২৫০ মেগাওয়াট প্রকল্প। জাপানের সুমিতোমোর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এটি নির্মাণের কথা ছিল। এ প্রকল্পটি এলএনজিভিত্তিক প্রকল্পে রূপান্তরিত হতে পারে। এ ছাড়া কোল পাওয়ার কোম্পানির ৭০০ মেগাওয়াটের একটি প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে। সিঙ্গাপুরের সিম্বকোর্পের সঙ্গে যৌথ অংশীদারত্বে এটি স্থাপনের কথা ছিল।

এ ছাড়া ওরিয়নের গজারিয়া ৬৩৫ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক প্রকল্পটি এলএনজিতে রূপান্তরের কথা রয়েছে।

নির্মাণাধীন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে অগ্রগতি

ছয় হাজার ৬৯১ মেগাওয়াট ক্ষমতার ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। এর মধ্যে সিপিজিসিবিএলের কক্সবাজারের মাতারবাড়ী ১২০০ মেগাওয়াট কেন্দ্রটির নির্মাণকাজে অগ্রগতি ৪৬ শতাংশ। জাইকার আর্থিক সহযোগিতায় দেশটির সুমিতোমো করপোরেশন এটি বাস্তবায়ন করছে।

বাগেরহাটের রামপালে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানির (বিআইএফপিসিএল) এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কেন্দ্রের বাস্তবায়ন অগ্রগতি ৭০ শতাংশ। এটি পিডিবি ও ভারতের এনটিপিসির যৌথ মালিকানায় নির্মিত হচ্ছে।

রুরাল পাওয়ার কোম্পানি (আরপিসিএল) ও চীনের নরিনকো ইন্টারন্যাশনালের যৌথ উদ্যোগে নির্মাণাধীন পটুয়াখালীর এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের বাস্তবায়ন অগ্রগতি ৩৬ শতাংশ। পায়রায় বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানির (বিসিপিসিএল) দ্বিতীয় পর্যায়ের এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কেন্দ্রের অগ্রগতি ২০ শতাংশ। চীনের সিএমসির সঙ্গে যৌথ অংশীদারত্বে কেন্দ্রটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশের নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (এনডব্লিউপিজিসিএল)।

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে এস আলমের (এসএস পাওয়ার) এক হাজার ২২৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের ৮২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বরগুনায় নির্মাণাধীন আইসোটেকের বরিশাল ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানির ৩০৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের বাস্তবায়ন অগ্রগতি ৫৮ শতাংশ। এ ছাড়া চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে হাংঝু চায়নার ১২৪০ মেগাওয়াট প্রকল্পের এলওআই ইস্যু করা হয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পটির স্পন্সর বদলের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বলে জানা গেছে।

এলএনজিভিত্তিক প্রকল্প

বাগেরহাটের এলএনজি প্রকল্প।

এলএনজিভিত্তিক দুই হাজার ৭৬৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার চারটি কেন্দ্রের নির্মাণকাজ চলছে। এর মধ্যে একটি দ্বৈত জ্বালানির। খুলনার রূপসায় এনডব্লিউপিজিসিএলের ৮৮০ মেগাওয়াট প্রকল্পের অগ্রগতি ৪০ শতাংশ।

নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাটে সামিটের ৫৮৩ মেগাওয়াটের একটি দ্বৈত জ্বালানির (এলএনজি/ডিজেল) নির্মাণ অগ্রগতি ৩৩ শতাংশ। একই স্থানে ইউনিক গ্রুপের ৫৮৪ মেগাওয়াটের এলএনজিভিত্তিক প্রকল্পের কাজ এগিয়েছে ২২ শতাংশ।

মেঘনাঘাটেই ভারতের রিলায়েন্সের ৭১৮ মেগাওয়াট প্রকল্পের অগ্রগতি ৪৭ শতাংশ। চুক্তি প্রক্রিয়াধীন মেঘনাঘাটে আনলিমা পাওয়ারের ৪৫০ ও চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ইউনাইটেড গ্রুপের ৫৯০ মেগাওয়াটের দুটি প্রকল্প।

এ ছাড়া ২০৩০ সালের মধ্যে পায়রায় এনডব্লিউপিজিসিএল ও জার্মানির সিমেন্সের যৌথ অংশীদারত্বের ২৪০০ মেগাওয়াট, মহেশখালীতে পিডিবি ও যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল ইলেকট্রিকের (জিই) যৌথ মালিকানায় ২৪০০ মেগাওয়াট, পিডিবির হরিপুরে ২৫০, সিদ্ধিরগঞ্জে ৬০০, ভেড়ামারায় ৬০০ ও ঘোড়াশালে ২২৫ মেগাওয়াট; গজারিয়ায় আরপিসিএলের ৬০০ মেগাওয়াট, ফেনীর সোনাগাজীতে ইলেকট্রিসিটি পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির (ইজিসিবি) ৬০০ মেগাওয়াট এবং মহেশখালীতে জাপান-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে ৬০০ মেগাওয়াটসহ আট হাজার ২৭৫ মেগাওয়াটের মোট ৯টি এলএনজিভিত্তিক প্রকল্প নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এসব প্রকল্পের অধিকাংশের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। যৌথ প্রকল্পগুলোর যৌথ মূলধনি কোম্পানি গঠনের বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন।

নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে ঝুঁকছে দেশ

কক্সবাজারে বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প।

সিরাজগঞ্জে পিডিবির দুই মেগাওয়াটের একটি বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে। বরিশালে পিডিবির ১, ফেনীতে ইজিসিবির ৫০, মোংলার দুর্গাপুরে এনারগনের ১০০, লালমনিরহাটের পাটগ্রামে বাংলাদেশের জিএইচইএল ও চীনের সিইটিসির ৫, সিলেটের গোয়াইনঘাটে ইকি সুজি সান সোলার পাওয়ারের ৫, রংপুরের গঙ্গাচড়ায় ইন্ট্রাকো সোলারের ৩০, গাইবান্ধার লাটশালে তিস্তা সোলারের (বেক্সিমকো গ্রুপ) ২০০, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় করতোয়া সোলারের ৩০ এবং সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় এডিসন-হাওরবাংলা-কোরিয়া গ্রিন এনার্জির ৩২ মেগাওয়াটসহ মোট ৪৫১ মেগাওয়াটের ৯টি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন পর্যায়ে রয়েছে। কক্সবাজারে ইউএস-ডিকে গ্রিন এনার্জির ৬০ মেগাওয়াটের একটি বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্পও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় রয়েছে।

চুক্তি স্বাক্ষর প্রক্রিয়ায় থাকা প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে- জামালপুরের মাদারগঞ্জে সিআইআরবিআর পাওয়ার জোনের ১০০, মৌলভীবাজারে ১০, সিঙ্গাপুর হোল্ডিংসের পঞ্চগড়ে ৫০, অ্যাপোলো ইঞ্জিনিয়ারিং ও এসএমই ইলেকট্রিক্যালের চাঁদপুরে সাত, নীলফামারীর ডিমলায় এসকেটিকের ৫০, পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে রহিমআফরোজের ২০, ঢাকার ধামরাইয়ে আইবিভি-এসএস অ্যাগ্রোর ৫০, পাবনায় ভারতের সাপরজি পালনজির ১০০, চট্টগ্রামের বারইয়ারহাটে ৫০, পাবনার বেড়ায় মোস্তফা মোটরের ৩ দশমিক ৭৭ ও রাঙ্গুনিয়ায় ৫৫ মেগাওয়াট এবং জামালপুরে ৮১৩ কিলোওয়াটসহ মোট ৪৯৬ মেগাওয়াটের ১২টি সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র।

বর্জ্যভিত্তিক দুটি প্রকল্পও বাস্তবায়নের কথা রয়েছে। ছয় মেগাওয়াটের একটি বর্জ্যভিত্তিক কেন্দ্র হবে নারায়ণগঞ্জে। চীনের সিএমসির সঙ্গে ৪২ দশমিক ৫ মেগাওয়াটের বর্জ্যভিত্তিক আরেকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।

বায়ুভিত্তিক দুটি প্রকল্প চুক্তি স্বাক্ষরের পর্যায়ে রয়েছে। এগুলো হলো ফেনীর সোনাগাজীতে ৩০ ও মোংলায় ৫০ মেগাওয়াটের বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প। সোনাগাজীর প্রকল্পটি যৌথভাবে করবে ভাগতী প্রোডাক্টস ও রেগান পাওয়ার টেক।

দরপত্র প্রক্রিয়াধীন রয়েছে ৩৩২ মেগাওয়াটের ছয়টি প্রকল্পে। এর মধ্যে এনডব্লিউপিজিসিএল এবং চীনের সিএমসি যৌথভাবে দুটি সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র করবে পাবনা (৬৪ মেগাওয়াট) ও সিরাজগঞ্জে (৬৮ মেগাওয়াট)। এ জন্য বাংলাদেশ-চায়না রিনিউয়েবল এনার্জি কোম্পানি (বিসিআরইসিএল) নামে যৌথ মূলধনি কোম্পানি গঠন করা হয়েছে।

বেসরকারি উদ্যোগে নেত্রকোণা ও চুয়াডাঙ্গায় ৫০ মেগাওয়াট করে দুটি এবং চাঁদপুর ও কক্সবাজারের ইনানীতে ৫০ মেগাওয়াট করে দুটি বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প হওয়ার কথা রয়েছে।

পরিকল্পনায় ২০৩০ সাল পর্যন্ত সরকারি পর্যায়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির এক হাজার ৯৯ মেগাওয়াটের ১৭টি প্রকল্প নির্মাণের কথা রয়েছে। এর মধ্যে ২২১ মেগাওয়াটের চারটি বায়ুভিত্তিক প্রকল্প রয়েছে। এগুলো হলো- চট্টগ্রামের আনোয়ারার পার্কি বিচে পিডিবির ২ ও ইজিসিবির ১০০, পটুয়াখালীতে আরপিসিএলের ১০ এবং মাতারবাড়ীতে কোল পাওয়ার কোম্পানির ১০০ মেগাওয়াট প্রকল্প।

সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো হলো- পিডিবির সেন্ট মার্টিনে ৫০০ কিলোওয়াট, সোনাগাজীতে ৮৩, রংপুরের গঙ্গাচড়ায় ৬৯ ও বরিশালে ১০০ মেগাওয়াট করে দুটি প্রকল্প; আরপিসিএলের পঞ্চগড়ে ৩০, জামালপুরের মাদারগঞ্জে ১০০ ও গজারিয়ায় ৫০; ইজিসিবির সোনাগাজীতে প্রতিটি ১০০ মেগাওয়াটের দুটি, সিপিজিসিবিএলের মাতারবাড়ীতে ৫০, এসপিএসসিএলের পটুয়াখালীতে ২০০ ও সাতকানিয়ায় ১০০ মেগাওয়াট কেন্দ্র।

এই প্রকল্পগুলো সম্ভাব্যতা যাচাই, দরপত্র আহ্বান বা ভূমি অধিগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। যৌথ অংশীদারত্বে বিসিআরইসিএলের ৫০ মেগাওয়াটের একটি বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে পায়রায়।

এ ছাড়া বেসরকারি খাতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৪৫ ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন ৩৫ মেগাওয়াটের দুটি বর্জ্যভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্প দুটি স্পন্সর করছে ক্যানভাস এনভায়রনমেন্টাল ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি।

পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প।

পাবনার রূপপুরে দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াটের একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। এটি ২০২৪ সালে উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। একই স্থানে সমান ক্ষমতার আরেকটি পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এ ছাড়া দক্ষিণাঞ্চলে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য জায়গা খোঁজা হচ্ছে।

বিদ্যুৎ খাতের বর্তমান পরিস্থিতি

দেশে স্থাপিত ১৪৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে গ্যাসভিত্তিক ১১ হাজার ১০০, ফার্নেস অয়েলভিত্তিক পাঁচ হাজার ৩৪১, ডিজেল এক হাজার ২৮৬, কয়লা এক হাজার ৬৮৮, হাইড্রো ২৩০, আমদানি এক হাজার ১৬০, অন-গ্রিড সৌরবিদ্যুৎ ১২৯ মেগাওয়াট এবং ক্যাপটিভ দুই হাজার ৮০০ ও অফ-গ্রিড নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৪০৪ মেগাওয়াটসহ বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৪ হাজার ১৩৮ মেগাওয়াট।

তবে চাহিদা না থাকায় এবং সঞ্চালনব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার কারণে পুরো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় না। চাহিদার বিপরীতে ২০২১ সালের ২৭ এপ্রিল দেশে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় ১৩ হাজার ৭৯২ মেগাওয়াট।

এ বিভাগের আরো খবর