‘আমি মুজিব কোট খুলে ওসির চেম্বারে গিয়ে তার চেয়ারে বসিয়ে ৪-৫টি কেনু (মারধর) দিয়েছি ভাই। যে শালা তুই (ওসি) কীভাবে আমার ভোটটা ঘুরাও (বদল করো)। সব কনস্টেবল আমার পক্ষে ছিল। তারা বলছে, স্যার আগেই বলছিলাম মিলন মেয়া কি জিনিস, যে থানায় আইয়া গুতাইবে (মারধর)। এহন গুতা খাইছেন? আমি এই মুজিব কোট খুইলা ওসিরে ওই রুমের মধ্যে গুতাইছি।’
এ কথাগুলো ভোটারদের উদ্দেশে বলছিলেন বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর ইউনিয়ন পরিষদের নৌকার প্রার্থী মৃধা মু. আক্তার-উজ-জামান মিলন। ইউনিয়নের মীরগঞ্জ বাজারের কাছে রাজগুরু গ্রামে বুধবার সন্ধ্যায় উঠান বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
‘বাবুগঞ্জ দর্পণ’ নামের একটি ফেসবুক পেজে সেই সভার লাইভ সম্প্রচার করে। সেখান থেকে মিলনের ওই বক্তব্য ভাইরাল হয়।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা জানিয়েছেন, ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্যই নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ওসিকে মারধরের কথা এভাবে প্রচার করেছেন। এটি নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘন বলে জানিয়েছে উপজেলা নির্বাচন অফিস।
ভাইরাল ভিডিওতে মিলনকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি আপনাদের একটি সম্পদ। এর আগের নির্বাচনে আমার ভোট রাশেদ খান মেনন চুরি করে নিয়ে গেছে। বাবুগঞ্জের ওসি মাহাবুব, সে গৌরনদীর জামাই ছিল। এই সুফিয়ান ভাই (পাশের এক সমর্থককে দেখিয়ে) সেদিন বলতেছিল, আমার ভোট ঘুরানোর জন্য ওসি নির্দেশ দিয়েছে।
‘সে (ওসি) গত নির্বাচনে সরোয়ার মাহমুদের পক্ষ নিয়ে বিভিন্ন সেন্টারে আমার ভোট কেটেছে। সেন্টারে সেন্টারে গুলি করেছে। এই কথা জানতে পেরে আমি মুজিব কোট খুলে ওসির চেম্বারে গিয়ে তার চেয়ারে বসিয়ে ৪-৫টি কেনু (মারধর) দিয়েছি ভাই। যে শালা তুই (ওসি) কীভাবে আমার ভোটটা ঘুরাও (বদল করো)।’
তার প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহীন মিয়া বলেন, ‘আমরা তার বক্তব্য শুনেছি। তিনি ভোটারদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করছেন যেন ভোটাররা নির্বাচনের দিন কেন্দ্রে না যায়। তিনি শুধু ওসিকে মারধরের বক্তব্য দিয়েছেন এমন নয়, অন্যান্য উপজেলার চেয়ারম্যান, বহিরাগতদের এনে জড়ো করেছেন। সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ নষ্ট করতেই তার এসব চেষ্টা।’
তিনি জানান, ওই ভিডিও সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে পাঠিয়েছেন।
বক্তব্যের বিষয়ে নৌকার প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিলন বলেন, ‘গত নির্বাচনের সময় বাবুগঞ্জের তৎকালীন ওসি মাহাবুব আমার তিনটি কেন্দ্রে গুলি করেছে। সেই তিনটি কেন্দ্রে আমি বিজয়ী হতাম। ওসি টাকা খেয়ে আমাকে হারিয়ে দিয়ে গেছে।
‘সাবেক ডিআইজি হুমায়ুন ফোন করে আমাকে গালি দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বলেছে। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক ডিসি রায়হান সাহেব আমাকে ফোন করে হুমকি দিয়েছিল। বক্তব্যে মানুষ অনেক কথাই বলে। বক্তব্য আর বাস্তবতা এক না। থানার ওসিকে মারধরের ঘটনা সত্য নয়। তবে নির্বাচনে পক্ষপাতিত্ব নিয়ে আমার লোকজনের সঙ্গে তার কথা-কাটাকাটি হয়েছিল। তবে বুধবারের সভায় মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ভোট পাওয়ার জন্য এটুকু বলতে হয়েছে।’
এ বিষয়ে বাবুগঞ্জ থানার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘আগের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী মিলন থানায় ঢুকে ওসিকে মারধর করেছেন এমন বক্তব্য আমি এখনও শুনিনি। বিষয়টি জেনে আমি জানাব।’
বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, ওসিকে মারধর করার বক্তব্য অবশ্যই নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন। তা ছাড়া কাউকে চাকরি দেয়ার কথা প্রচার করা, পেশিশক্তি ব্যবহারের হুমকি দেয়াও লঙ্ঘন। প্রচারে এমন আচরণ করলে ওই প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তবে মিলনের বিষয়ে এখনও কোনো অভিযোগ আসেনি বলে তিনি জানিয়েছেন। অভিযোগ পেলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন।
তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রহমতপুর ইউনিয়নে ২৮ নভেম্বর ইভিএমে ভোট হবে।