প্রথম বারের মতো দেশে তৈরি বিশ্বখ্যাত নোকিয়া মোবাইলের জি সিরিজের দুটি স্মাটফোন বাজারে আনার ঘোষণা দিয়েছে এইচএমডি গ্লোবাল বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বনানীস্থ শেরাটন হোটেলে আনুষ্ঠানিকভাবে নোকিয়া জি-১০ ও জি-২০ ফোন দুটি বাজারজাত কারার ঘোষণা দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানে এইচএমডি গ্লোবাল বাংলাদেশের হেড অব বিজনেস ফারহান রশিদ, ইউনিয়ন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাকিবুল কবির, পরিচালক আলভী রানাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে অবস্থিত নোকিয়া কারখানায় স্মার্টফোন দুটি তৈরি হয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক কোম্পানি ভাইব্রেন্ট সফটওয়্যার ও ইউনিয়ন গ্রুপ বাংলাদেশ-এর সমন্বয়ে গঠিত ‘ভাইব্রেন্ট সফটওয়্যার (বাংলাদেশ) লিমিটেড’ কারখানাটি স্থাপন করেছে।
নতুন স্মার্টফোন বাজারে আনা প্রসঙ্গে এইচএমডি গ্লোবাল-এর জেনারেল ম্যানেজার (প্যান এশিয়া) রাভি কুনওয়ার বলেন, ‘আজ আমাদের জন্য স্মরনীয় একটি দিন। নিঃসন্দেহে বিগত বছরটি আমাদের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল। তবে এ সময়টি আমাদের পরবর্তী বড় পদক্ষেপ গ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছে। বাংলাদেশে কারখানা স্থাপন ও এখানে সংযোজিত হ্যান্ডসেটের উন্মোচন আমাদের যাত্রার একটি মাইলফলক।’
এইচএমডি গ্লোবাল বাংলাদেশের হেড অব বিজনেস ফারহান রশিদ বলেন, ‘আগের আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গা থেকে আবারও মোবাইল শিল্পে নিজের জায়গা করে নিতে চায় নোকিয়া। আগামী দুই বছরের মধ্যেই স্মার্টফোন ব্যবহারের দিক থেকে নোকিয়া দেশের প্রথম তিনটি কোম্পানির একটি হতে চায়।’
ইউনিয়ন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাকিবুল কবির বলেন, ‘এখন আমাদের প্রথম লক্ষ্য স্থানীয় বাজার ধরে সুনাম অক্ষুন্ন রাখা। শিগগিরই আমরা মেড ইন বাংলাদেশ ফোন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানির আশা করছি।’
নোকিয়া জি-সিরিজের ফোন দুটি তিন দিনের ব্যাটারি ব্যাকআপ দিতে সক্ষম। আঙ্গুলের ছাপ ও ব্যবহারকারীর ফেইস রিকগনিশনের মাধ্যমে ফোন আনলক সুবিধা থাকবে এই এগুলোতে। থাকছে ৬.৫ ইঞ্চি টিয়ারড্রপ ডিসপ্লে ও ৫০৫০ এমএএইচ এর ব্যটারি।
জি-২০ সেটটি নোকিয়া স্মার্টফোনের সিগনেচার ‘অ্যান্ড্রয়েড প্রতিশ্রুতি’ দ্বারা সমর্থিত। এটি ব্যাবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য যতটা সম্ভব সুরক্ষিত রাখতে তিন বছর পর্যন্ত মাসিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং দুই বছর পর্যন্ত অপারেটিং সিস্টেম হালনাগাদ করবে। এতে রয়েছে চারটি ব্যাক ক্যামেরা এবং ওজো সারাউন্ড অডিওসহ আকর্ষণীয় ৪৮ মেগাপিক্সেলের ওয়াইড এঙ্গেল ব্যাক ক্যামেরা। ৪ জিবি র্যাম ও ৬৪ জিবি স্টোরেজের সেটটির দাম ১৪ হাজার ৯৯৯ টাকা।
নোকিয়া জি-১০ মোবাইলে আছে ত্রিপল রিয়ার ক্যামেরা আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্বলিত শুটিং মোড; যার মাধ্যমে কম আলোতেও অত্যন্ত ভালো ছবি তোলা যাবে। এতে রয়েছে ৮ মেগাপিক্সেলের সেলফি ক্যামেরা ও ১৩ মেগাপিক্সেলের ব্যাক ক্যামেরা। ৩ জিবি র্যাম ও ৩২ জিবি স্টোরেজের সেটটির দাম হবে ১৩ হাজার ৪৯৯ টাকা।
ইউনিয়ন গ্রুপের পরিচালক আলভী রানা বলেন, ‘মোবাইল ফোন যুগের শুরুতে সম্ভবত দেশে এমন কোনো পরিবার ছিল না যেখানে অন্তত একটি নোকিয়া ফোন ছিল না। সেই হারানো দিন ফিরে আসবে মেইড ইন বাংলাদেশ নোকিয়া ফোনের হাত ধরে। দেশে তৈরি হওয়ায় এসব হ্যান্ডসেট ভোক্তারা সাশ্রয়ী মূল্যে পাবে।’
গাজীপুরের হাইটেক সিটি-র ব্লক ৫-এ নোকিয়া ফোনের কারখানায় শুরুতে প্রতিদিন ৩০০ ফোন সংযোজন করা হচ্ছে। ক্রমান্বয়ে তা দিনে ৩ হাজারে উন্নীত হবে। স্থানীয়ভাবে তৈরি এসব স্মার্টফোন আমদানিকৃত ফোনের তুলনায় ৩০ শতাংশ কম দামে পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে মোবাইল সেট তৈরি শুরু হয় ২০১৭ সালে ওয়াল্টনের হাত ধরে। তখন থেকে ১০/১২টি ব্র্যান্ড স্থানীয়ভাবে মোবাইল তৈরি করছে। এর মধ্যে আছে স্যামসাং, সিম্ফনি, ওপ্পো, রিয়েলমি, শাওমির মতো বৈশ্বিক স্মার্টফোন কোম্পানিগুলোও। এসব প্রতিষ্ঠান স্থানীয় বাজারের স্মার্টফোন চাহিদার ৮৫ শতাংশ তৈরি করে এবং মোট ফোন (ফিচার ও স্মার্ট মিলিয়ে) চাহিদার ৫৫ শতাংশ পূরণ করে।
বিটিআরসির তথ্য মতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে আমদানিকৃত ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মোট মোবাইল সেটের সংখ্যা ২৯.৪৮ মিলিয়ন। যার মধ্যে ১৩.২৭ মিলিয়ন আমদানিকৃত এবং ১৬.২১ মিলিয়ন স্থানীয়ভাবে তৈরি করেছে ১০টি কোম্পানি।