ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির ৩৬টি ব্যাংক হিসাবে (অ্যাকাউন্ট) গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এরমধ্যে অধিকাংশ টাকাই অন্যান্য অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার হয়েছে। তবে ইভ্যালির অ্যাকাউন্টে আছে মাত্র ২ কোটি ১৩ লাখ টাকা।
ই-কমার্স নিয়ে আলাদা তিনটি রিটের পর আদালতের আদেশে হাইকোর্টে জমা দেয়া প্রতিবেদনে এমনটি উঠে এসেছে।
বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে বৃহস্পতিবার এ প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়। পরে আদালত এ বিষয়ে অধিকতর প্রতিবেদন জমা দিতে ২৮ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী দিন ঠিক করে দেয়।
ফিনান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিটের জমা দেয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি ডটকমের ৩৬ ব্যাংক হিসাবে মোট ৩ হাজার ৮৯৮ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে।
ফাইল ছবি
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইভ্যালি ডটকমের চেয়ারম্যান, এমডি এবং তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের নামে ১৩টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৬৭টি হিসাবের আনুষাঙ্গিক দলিলাদি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। হিসাবগুলোর লেনদেনের বিবরণী থেকে দেখা যায় যে, ইভ্যালি ডটকম লিমিটেড ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের নামে প্রাপ্ত ৩৬টি হিসাবে (সঞ্চয়ী, চলতি) মোট ৩ হাজার ৮শ ৯৮ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। তার মধ্যে জমা প্রায় ১ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা আর উত্তোলন হয়েছে ১ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা।
এর মধ্যে আরও ১০টি হিসাব শনাক্ত হওয়ায় চলতি বছরের ১০ আগস্টে সিআইডির কাছে ৭৭টি (৬৭ ও১০) হিসাবের কথা পাঠানো হয়েছে। কার কার নামে কখন এসব টাকা উত্তোলন করা হয়েছে তাও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে রিটকারীদের আইনজীবী হুমায়ন কবির পল্লব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আদালতের আদেশে বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে লিখিত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য দিন ঠিক করা ছিল। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিনান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট থেকে একটি প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। যেখানে শুধুমাত্র ইভ্যালির অর্থের হিসাব প্রতিবেদনে তুলে ধরেছেন। সেখানে তারা দেখিছেন ইভ্যালির মাধ্যমে ৩ হাজার ৮শ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। এরমধ্যে অধিকাংশ টাকাই অন্যান্য অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করা হয়েছে। বর্তমানে মাত্র ২ কোটি ১৩ লাখ টাকা তাদের অ্যাকাউন্টে রয়েছে।’
ইভ্যালি ছাড়া অন্যান্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের তথ্য তারা জমা দেয়নি।
অন্যদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। যেখানে তাদের কার্যপরিধি কি সেটা তারা বলেছেন। এটা ছাড়াও তারা বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন যেটা দেখে আমরা মনে করি তারা এরই মধ্যে ভালো কিছু কাজ করেছেন। এই কমিটি পূর্ণাঙ্গ একটি প্রতিবেদন জমা করবেন আমরা তেমনটি প্রত্যাশা করছি।’
গত ২০ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর তারিখে আলাদা তিনটি রিট করেন মো. আনোয়ারুল ইসলাম, মানবাধিকার সংগঠন ল অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন ও আইনজীবী শিশির মনির।
এই তিনটি রিটের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থপাচারের অভিযোগের বিষয়ে বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট কী পদক্ষেপ নিয়েছে, ই-কর্মাস প্রতিষ্ঠান থেকে ভ্যাট-ট্যাক্স আদায়ে এনবিআরের পলিসি কী এবং ই-কমার্স খাতের স্বার্থে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের করা ১৬ সদস্যের কারিগরি কমিটির কার্যপরিধি কী তাও জানতে চেয়েছিলেন।
আদালতের এ আদেশের পর আজকে এ প্রতিবেদন জমা করা হয়।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী হুমায়ন কবির পল্লব, মোহাম্মদ শিশির মনির ও আনোয়ারুল ইসলাম বাধন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।