বাসে অর্ধেক ভাড়ার দাবি নিয়ে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএর সঙ্গে বাস মালিকদের বৈঠক শেষ হয়েছে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়া।
বৈঠক শেষে সড়ক সচিব বলেছেন, বেসরকারি বাসে তারা হাফ ভাড়া কার্যকরের বিষয়টি চাপিয়ে দিতে পারেন না। তার আশঙ্কা, এই সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিলে বাস মালিকরা ধর্মঘট ডেকে দুর্ভোগের কারণ হবে।
বাস মালিকরা বলেছেন, সরকার তাদেরকে কোনো ভর্তুকি দেয় না। এই অবস্থায় তাদের পক্ষে অর্ধেক ভাড়ার দাবি মেনে নেয়া সম্ভব নয়। এটা চাপিয়ে দিলে তাদের লোকসান হবে।
রাজধানীর বিআরটিএ ভবনে বৃহস্পতিবার বিকেলে সভাটি শুরু হয়। বৈঠকে বিআরটিএর পক্ষ থেকে মালিকদের একটি আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে বৈঠকে অংশ নিয়েছেন জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব, কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব ও পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি)।
এ ছাড়াও সভায় অংশ নিয়েছেন পরিবহন মালিক সমিতির প্রতিনিধি ও শ্রমিক ফেডারেশনের প্রতিনিধিরা।
সভার শুরুতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা বাসে হাফ ভাড়া নেয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। তাদের এই দাবিটি আমরা ইতিবাচকভাবে নিচ্ছি। এ বিষয়ে সবার মতামত প্রয়োজন।’
তবে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিট মিলনায়তনে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভা ও কাউন্সিল অধিবেশন থাকায় বৈঠকে অংশ নিতে পারেননি সংগঠনটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। তাই আসেনি কোনো সিদ্ধান্ত।
রমনায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেছেন, ‘বেসরকারি খাতে হাফ ভাড়া নেয়ার কোনো প্রভিশন নেই। গাড়িতে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নেয়ার কোনো প্রভিশন নেই। বিআরটিসিতে (সংস্থাটির গাড়ি) হাফ ভাড়া নেয়ার প্রভিশন আছে।’
শিক্ষার্থীদের অর্ধেক বাস ভাড়ার দাবি নিয়ে বাস মালিকদের সঙ্গে বিআরটিএর বৈঠক
বাসসহ গণপরিবহনে হাফ ভাড়ার দাবিতে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারাও।
বিআরটিএর ডাকা বৈঠকে দ্বিতীয় সারির যেসব পরিবহন নেতারা উপস্থিত ছিলেন, তারা জানিয়েছেন বেসরকারি বাসে সরকারের কোনো ভর্তুকি নেই। বেড়েছে পরিবহনের যন্ত্রাংশের দাম। তাই শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ পাস চালু করা হলে বাসমালিকদের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।
ফলে পরিবহন মালিকরা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা শেষে হাফ পাসের বিষয়ে তাদের একটি প্রস্তাব সরকারের কাছে তুলে ধরবে।
বৈঠক শেষে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকা মহানগরে শিক্ষার্থীরা বাসে হাফ ভাড়ার দাবিতে আন্দোলন করছেন। তাদের এই দাবির প্রতি গুরুত্ব দিয়ে সরকার এই সমস্যা সমাধানের জন্য আন্তরিক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’
সরকার শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছে বলেই বৈঠক করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। বলেন, ‘বেসরকারি বাসে অর্ধেক ভাড়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আমরা চাপিয়ে দিতে পারি না। কারণ বাসে কত শতাংশ ভাড়া ছাড় দিতে হবে আমরা আজ সেই সিদ্ধান্ত দেয়ার পর বাস মালিকরা ধর্মঘট ডাকতে পারেন। তাতে জনদুর্ভোগ বাড়বে।’
নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা পরিবহন মালিক সমিতিকে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে একটি যুক্তিসঙ্গত প্রস্তাব দেয়ার জন্য বলেছি। তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে এ প্রস্তাব আমাদের কাছে দেবেন।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিকেও প্রস্তাব জমা দিতে বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
শিক্ষার্থীদের জন্য দেশের সব ধরনের সরকারি-বেসরকারি বাস, লঞ্চ ও ট্রেনে ভাড়া অর্ধেক করতে সরকারের প্রতি নির্দেশনা চেয়ে রিট হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। সেটির শুনানির জন্য রোববার দিন ঠিক করা হয়েছে।
তবে শনিবারদিনই শিক্ষার্থীদের বাস ভাড়া নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এদিন বিআরটিএ কার্যালয়ে সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন তিনি।
তেলের দাম বাড়ানোর পর পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের দাবির মুখে বাস ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
সিটিং সার্ভিস বা ওয়েবিলের নামে বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগে বাস মালিকরা যখন সমালোচনার মুখে, এরই মধ্যে হাফ ভাড়ার দাবিতে সড়কে নেমেছে শিক্ষার্থীরা।
তাদের এই দাবিকে যৌক্তিক আখ্যা দিয়ে এতে সমর্থন দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনসহ বিভিন্ন সংগঠন।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) বহরে নতুন গাড়ি যুক্ত হওয়ায় নিজস্ব বাসে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সুবিধা দেয়ার কথা ভাবছে। শুক্রবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এ বিষয়ে ঘোষণা দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।