নিরাপদ সড়কের দাবিতে তিন বছর আগে রাজধানীতে তুমুল ছাত্র আন্দোলনের স্মৃতি ফিরে এসেছে সড়কে নটর ডেম কলেজের ছাত্র নিহতের ঘটনায়।
সে সময় ছাত্ররা নগরজুড়ে রাজপথে নেমে এসে প্রতিবাদের পাশাপাশি যান চলাচলে শৃঙ্খলা নিশ্চিতে যা যা করেছিল, বৃহস্পতিবার সেই একই ভূমিকা দেখা গেল ফার্মগেট এলাকায়।
বুধবার গুলিস্তান এলাকায় সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির চাপায় নটর ডেম কলেজের এক ছাত্র নিহতের ঘটনায় টানা দুই দিন ধরে চলা আন্দোলনে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের ভূমিকায় দেখা গেল সড়ক অবরোধকারী ছাত্রদের।
২০১৮ সালের মতোই কাজগপত্র ও লাইসেন্স পরীক্ষায় পুলিশের গাড়িতে প্রয়োজনীয় নথিপত্র না থাকার পর গাড়িতে মার্কার দিয়ে লিখে দেয়, ‘পুলিশের গাড়িতে লাইনেন্স নেই।’
পরে এক পুলিশ কর্মকর্তা এসে ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলেন। এই গাড়িটি পুলিশের নিজের নয়, রিকুইজিশন করা একটি বাহন ছিল।
ছাত্ররা তিন বছর আগের করা আন্দোলনে তাদের তোলা দাবিগুলোর বাস্তবায়ন না হওয়ার কথা তুলে ধরে ক্ষোভও প্রকাশ করেন। সড়ক নিরাপত্তা কেন নিশ্চিত করা যাচ্ছে না, সেই প্রশ্নও তোলেন তারা।
২০১৮ সালের জুলাইয়ের শেষে বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় ছাত্ররা রাজধানীজুড়ে রাজপথে নেমে এসে যান চলাচলে শৃঙ্খলা রক্ষায় উদ্যোগী হয়।
কয়েক দিন ধরে ছাত্রদের আন্দোলনে চলাচলে দুর্ভোগ হলেও নগরবাসী ব্যাপক সমর্থন দেন। তবে আন্দোলন দীর্ঘায়িত হওয়ার পর তাতে নানা স্বার্থগোষ্ঠীর অনুপ্রবেশ ঘটে আর এরপর সংঘর্ষ, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাও হয়।
তবে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আছে বিভিন্ন সড়কে যানবাহনগুলো সুশৃঙ্খলভাবে চলতে বাধ্য করে ছাত্ররা ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকা নেয়ার পর নানা ছবি ছড়িয়ে পড়লে প্রশংসাও হয়।
মতিঝিলে বিক্ষোভ শুরু করে ছাত্ররা এসে জড়ো হয় গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট এলাকায়ছাত্রদের টানা দ্বিতীয় দিনের এই বিক্ষোভে ছাত্রদের সবচেয়ে বড় জমায়েতটা হয় মতিঝিল এলাকায়। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে ছাত্ররা যায় নগরভবনে মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের কাছে। তারা ৯ দফা দাবি জানান।
শান্তিনগরসহ বিভিন্ন এলাকাতেও ছাত্ররা জড়ো হয়ে প্রতিবাদ করেন, যারা সবাই একযোগে বেলা ১১টার দিকেই রাজপথে নামে।
ফার্মগেটে ছাত্রদের এই অবস্থান থাকে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কাওরান বাজার থেকে ফার্মগেটের দিকে যেতে ব্যস্ত সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যায় কয়েকজনকে।
তাদের একজন মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী পলক রায়। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমাদের সহপাঠী এক শিক্ষার্থী গতকাল মারা গেছে। এর প্রতিবাদ স্বরূপ আমরা এখানে ট্রাফিক কন্ট্রোলে নেমেছি।’
তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর আগে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে, সড়ক শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ করা হবে। কিন্তু সড়কে আবার আমার এক ভাইয়ের রক্ত ঝরল।’
ফার্মগেট থাকে খামার বাড়ি মোড় পর্যন্ত যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা একদল শিক্ষার্থীর একজন বলেন, ‘রাষ্ট্র সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ব্যর্থ হওয়ায় আমরা নিজের হাতে এ দায়িত্ব নিয়েছি। এটা তাদের এক ধরনের প্রতিবাদ।’
রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় চালকের লাইসেন্স পরীক্ষা করছেন একজন ছাত্রসরকারি বিজ্ঞান কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে গাড়ির কাগজপত্র ও চালকের লাইসেন্স পরীক্ষা করছিল, যেমনটি দেখা গিয়েছিল ২০১৮ সালের আন্দোলনের সময়ও।
এই ছাত্রদের পিঠে ব্যাগ ছিল, এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ইউনিফর্ম পরা ছিল।
কাগজপত্র পরীক্ষার বিষয়ে এক প্রশ্নে একজন বলেন, ‘সিস্টেম চালুর দাবিতে আমরা আজকে রাস্তায় নেমেছি। কালকে যে একজন মারা গেছে আপনারা তো শুনেছেন। কিন্তু এর আগেও আশ্বাস দেয়ার পরেও এমন ঘটনা ঘটল।’
খামারবাড়ি- ফার্মগেট মোড়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ করছিলেন বেশকিছু শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে হলিক্রস গার্লস কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ছিলেন। এ সময় তারা নিরাপদ সড়ক ও ছাত্রদের চলাচলের স্বার্থ রক্ষায় নয় দফা দাবি তুলে ধরেন।
ছাত্ররা গাড়ির কাগজ পরীক্ষার সময় পুলিশ কর্মকর্তা এসে তাদেরকে শান্ত করার চেষ্টা করছেনহলিক্রস কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী আয়েশা মনি শ্রাবণী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এখানে আমাদের বন্ধু নাঈম হত্যার বিচার চাইতে এসেছি। কারণ এটা দুর্ঘটনা নয়, এটা হত্যাকাণ্ড।
তিনি বলেন, ‘যদি ময়লার গাড়ির নিচে শিক্ষা চাপা পড়ে যায়, তাহলে দেশের উন্নতি কীভাবে হবে?... যেখানে আমাদের জীবনের নিরাপত্তা নেই, তাহলে আমরা কীভাবে কলেজে আসব?
‘২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন হয়ে গেল, তবে সরকার কোনো কিছু চোখে দেখছে না। সরকার কেন এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে না?’