যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে হতে যাওয়া ‘শীর্ষ গণতন্ত্র সম্মেলনে’ দুর্বল গণতন্ত্রের দেশগুলোকে ডাকা হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের নাম না থাকা দেশের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ নয়।
গত কয়েক দিন ধরে বিষয়টি নিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যে বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এক সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘যারা গণতন্ত্রে দুর্বল, তাদেরই হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের এই সম্মেলনে ডাকা হয়েছে।’
অবশ্য মন্ত্রী এও বলেন, এই সম্মেলন থেকে বাংলাদেশ বাদ পড়েনি।
দ্বিতীয় ধাপে আমন্ত্রণ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
সেমিনারের বিষয় ছিল ‘ক্লাইমেট জাস্টিস অ্যান্ড পিস ইন দ্য কনটেক্সট অব বাংলাদেশ’। এর আয়োজক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগ।
সেমিনার শেষে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশের নাম না থাকার বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জানতে চান সাংবাদিকরা।
জবাবে তিনি বলেন, ‘অনেক বছর ধরে আমাদের একটি স্থির এবং স্বচ্ছ গণতন্ত্র রয়েছে। প্রতি বছর হওয়া ফ্রি এবং ফেয়ার ইলেকশনে মানুষ ভোট দিচ্ছে। যে দাঁড়াতে চায় সে দাঁড়ানোর সুযোগ পাচ্ছে।
‘আফগানিস্তান, মিয়ানমারে বহু দল ভোটই দিতে পারে না। কিন্তু আমাদের দেশে সব লোক ভোট দিতে পারে। আর যে যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র সম্মেলন ডেকেছে, তাদের ২৫০ বছরের পুরোনো গণতন্ত্র ক’দিন আগে ঝামেলায় পড়েছে।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আরেকজন আমাকে উপদেশ দেবে, আর আমি সে অনুযায়ী গণতন্ত্র পালন করব, এটি হতে পারে না। আমরাই আমাদের গণতন্ত্র তৈরি করব; অন্যের পরামর্শে আমরা কাজ করি না।’
সম্মেলন থেকে বাংলাদেশকে বাদ দেয়া হয়নি দাবি করে মন্ত্রী বলেন, ‘এই সম্মেলন তারা দুই পর্বে করবে বলেছে। প্রথম পর্বে কয়েকটি দেশকে ডেকেছে। পরের পর্বে হয়তো আমাদের ডাকবে।’
বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে পদার্পণ নিয়েও কথা বলেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা খুবই আনন্দিত। তবে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার ফলে আমাদের কিছু চ্যালেঞ্জ আসবে। আমরা এলডিসি হিসেবে অনেকগুলো বেনিফিট পেতাম। আগামীতে সেগুলো আমরা হারাব। আমরা যেন সেসব বেনিফিট না হারাই, তার জন্য আমরা কাজ করছি।’
এর আগে সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, ‘বড় বড় দেশগুলো দোষ করে আর ক্ষতি পোহাতে হয় আমাদের। তাদের কারণে আমাদের কষ্ট হয়। এটি জাস্টিস নয়। জলবায়ু বিপর্যের কারণে গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের ১৬ লক্ষ লোক মারা গেছে।
‘জলবায়ু ইস্যুতে প্রতি বছর আমরা পাঁচ বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত খরচ করছি। এই টাকাটা আমরা মানুষের চাকরি সৃষ্টিসহ অন্যান্য উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য খরচ করতে পারতাম।’
জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণে প্রতি বছর জিডিপির ২ শতাংশ নষ্ট হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন যেভাবে চলছে সেভাবে চললে আগামীতে আমাদের জিডিপির ৯ ভাগ লস হবে।
‘এক দেশের পক্ষে জলবায়ু সমস্যা দূর করা সম্ভব নয়। এটির জন্য পার্টনারশিপ এবং কোলাবোরেশন প্রয়োজন। প্রতিটি দেশকে আন্তরিকতার সঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে।’
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পশ্চিম) রাষ্ট্রদূত সাব্বির আহমেদ চৌধুরীও সেখানে বক্তব্য দেন।