ঢাকার সড়কগুলোতে কবে নাগাদ নিরাপদে হাঁটা যাবে, তা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের কাছে জানতে চেয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। মেয়রের কাছে আরও কিছু দাবি তুলে ধরেছেন তারা।
শিক্ষার্থীদের সব দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন মেয়র। সেই সঙ্গে বলেছেন, ডিএসসিসির ময়লার গাড়ির ধাক্কায় নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসানের নামে একটি ফুটওভারব্রিজ করা হবে।
নাঈমের নিহতের ঘটনায় বিচার চেয়ে আন্দোলনে নামা শিক্ষার্থীরা ১০ দফা দাবি নিয়ে বৃহস্পতিবার বেলা ২টা থেকে গুলিস্তানে নগর ভবনে অবস্থান নেন। বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে তাদের সামনে আসেন মেয়র তাপস।
এ সময় মেয়রের কাছে শিক্ষার্থীদের একজন তাদের ১০ দফা তুলে ধরেন। নাঈম হাসানের মৃত্যুকে ‘সিস্টেমেটিক হত্যা’ বলে আখ্যা দেন ওই শিক্ষার্থী। এই সিস্টেমের সঙ্গে যারা যারা জড়িত প্রত্যেকের বিচার দাবি করেন তিনি।
ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত হতে চাই, কবে নাগাদ নিরাপদে আমরা হাঁটতে পারব। আমরা নিরাপদে চলার স্বাধীনতা চাই।
‘আমাদের দাবি ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক গুলিস্তানের জিপিওর সামনে নাঈমের নামে একটি ফুটওভারব্রিজ করতে হবে। বাসে শিক্ষার্থীদের হাফ পাসের দাবি নিশ্চিত করতে হবে।’
শিক্ষার্থীদের দাবির জবাবে মেয়র তাপস বলেন, ‘আপনাদের দাবিগুলো বাস্তবায়নে সরকারের উচ্চপর্যায়ে কথা বলে ব্যবস্থা নেব। ঢাকা শহরে নিরাপদ সড়ক হবে। আমাদের নির্বাচনি ইশতেহার ছিল সচল ঢাকা। সচল ঢাকার মূল উপাদান হলো নিরাপদ সড়ক।’
নটর ডেমের শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় শোক প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমি আমার সন্তানের সঙ্গে ছুটি কাটিয়ে যেদিন এসেছি সেদিনই আমার আরেক সন্তান নাঈমকে হারাব, তা আমি কল্পনাও করতে পারিনি। নাঈম শুধু আপনাদের ভাই না, বন্ধু না আমারও সন্তান। সন্তানহারা পিতা-মাতাকে সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা আমাদের নাই।
‘সকল দাবির সঙ্গে শুধু একমতই না। সঙ্গে দাবি তুলতে চাই যার কারণে নাঈম মারা গেছে তার যেন ফাঁসি হয়।’
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন ডিএসসিসি মেয়র তাপস। ছবি: নিউজবাংলানাঈমের স্মরণে ফুটওভারব্রিজ করে দেবেন বলেও জানান তাপস। তিনি বলেন, ‘যে যে কর্মকর্তা-কর্মচারী এই হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত সকলের বিচার অবশ্যই হবে। আমাদের সন্তান নাঈমের নামে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে এ বছরের মধ্যেই একটি ফুটওভারব্রিজ করে দেব। শহীদ নামের নামে আমরা এই ফুটওভারব্রিজ করে দেব।’
‘আমাদের এই আশ্বাসের কথা আমরা ছাত্রদের কাছে লিখিত দেব। ছাত্রদের দাবিগুলো ডিও লেটার আকারে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পেশ করব।’
মেয়র তাপসের আশ্বাস পেয়ে বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে নগর ভবন ছাড়েন শিক্ষার্থীরা।
নাঈমের নিহতের ঘটনায় বিচার চেয়ে বেলা ১১টা থেকে রাজধানীর কয়েকটি পয়েন্টে বিক্ষোভে নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এতে রাজধানীর ফার্মগেট, মতিঝিল ও গুলিস্তানে দেখা দেয় তীব্র যানজট।
গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে নটর ডেমের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ থেকে ১০ দফা দাবি ঘোষণা করা হয়। নাঈমের নিহতের ঘটনার বিচারের পাশাপাাশি অন্য দাবির মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থীদের জন্য বাস ভাড়া অর্ধেক করা, প্রতিটি জেলা শহরে তাদের জন্য বাসের ব্যবস্থা করা, ট্রাফিক আইনের যথাযথ প্রয়োগ। এর বাইরে নাঈম হাসানের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবিও জানিয়েছে আন্দোলনকারীরা।
তারা বলছে, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দাবি আদায় না হলে রোববার আরও আন্দোলন আরও কঠোর হবে।
গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে শিক্ষার্থীদের অবস্থান। ছবি: নিউজবাংলাশিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো:
০১. যথাযথ তদন্ত করে নাঈমের ‘হত্যাকারীদের’ সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান।
০২. জেলা শহরের বিভিন্ন রুটে শুধু শিক্ষার্থীদের জন্য বাস সার্ভিস চালু।
০৩. স্কুল-কলেজের সামনে হর্ন ও ওভারস্পিডের জন্য স্টুডেন্টদের কাছে জরিমানা এবং প্রশাসনের কাছে হস্তান্তরের অধিকার প্রদান।
০৪. সব ছাত্রের জন্য হাফ পাস নিশ্চিতকরণ।
০৫. প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে একাধিক স্পিড ব্রেকার নির্মাণ।
০৬. শহরের প্রতিটি অচল ট্রাফিক লাইটের সংস্কার এবং সঠিক ব্যবহার করা।
০৭. ট্রাফিক আইনের সঠিক প্রয়োগ।
০৮. জেব্রা ক্রসিংয়ের পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার নিশ্চিতকরণ।
০৯. চলন্ত বাসে যাত্রী ওঠানামা করালে প্রত্যেক বাসকে আইনের আওতায় আনা।
১০. নিরাপদ সড়ক আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন।
বুধবার সকাল ১১টার দিকে গুলিস্তান বঙ্গবন্ধু স্কয়ারের দক্ষিণ পাশে নটর ডেম কলেজের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী নাঈম হাসানকে ধাক্কা দেয় দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একটি ট্রাক। এ ট্রাকের রেজিস্ট্রেশন নম্বর ঢাকা মেট্রো শ ১১-১২৪৪।
দুর্ঘটনার সময় গাড়িটি চালাচ্ছিলেন সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মী রাসেল খান। পরে গাড়িটি নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় লোকজন ও এলাকার টহল পুলিশ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগ অফিসের পূর্বপাশ থেকে ট্রাক ও চালকের আসনে থাকা রাসেল খানকে আটক করা হয়। পরে নাঈমের বাবার করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
বৃহস্পতিবার বিকেলে রাসেলকে আদালতে তোলা হলে তাকে তিন দিনের রিমান্ডে পাঠান বিচারক।