জাতিসংঘের আনুষ্ঠানিক অনুমোদনে স্বল্পোন্নত দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে চূড়ান্তভাবে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হলেও বিভিন্ন দেশে শুল্কমুক্ত পণ্য রপ্তানিসহ বাণিজ্যিক সুবিধা আরও পাঁচ বছর পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। সংসদকে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
একাদশ জাতীয় সংসদের পঞ্চদশ অধিবেশনে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিশেষ আলোচনায় অংশ নিয়ে কথা বলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।
শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘গতকাল জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে রেজ্যুলেশন গৃহীত হয়েছে। জাতিসংঘের নিয়ম মেনে যে পরপর দুই বছর তিনটি ক্রাইটেরিয়াতে উত্তীর্ণ হতে হয়, বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে নিয়মতান্ত্রিকভাবে তা পূরণ করেছে।’
উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়ায় বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে যে আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছে, সেটাও উড়িয়ে দেন তিনি।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যেভাবে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মহল থেকে সহযোগিতা পেয়ে এসেছে, বাণিজ্য এবং অন্যান্য সব সহযোগিতার ক্ষেত্রে সেটা অব্যাহত থাকবে।’
তিনি সংসদকে জানান, ‘তিন বছরের পরিবর্তে বাংলাদেশ পাঁচবছর সময় পেয়েছে। যেটার ক্লক হ্যাজ স্টার্টেড টিকিং ফ্রম ইয়েস্টারডে।’
এর আগে আলোচনায় অংশ নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থার সূচকে পিছিয়ে পড়া নিয়ে সরকারের সমালোচনা করেন বিএনপির এমপি রুমিন ফারহানা।
তিনি বলেন, ‘বয়ানের লড়াই হবে পাল্টা বয়ান দিয়ে সেটার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। কোনো একটি নির্দিষ্ট বয়ানকে আইন দিয়ে, সংবিধান দিয়ে বেধে ফেলবার চেষ্টা সেই বয়ানের অন্তর্নিহিত দুর্বলতাকেই প্রমাণ করে। এই ধরনের চেষ্টা স্পষ্ট ফ্যাসিবাদের লক্ষণ। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে ইতিহাসকে সংবিধান ও আইন দিয়ে বেঁধে ফেলবার ভয়ঙ্কর চর্চাটি আমরা দেখতে পাচ্ছি।’
নির্বাচনি ব্যবস্থার সমালোচনা করেন সরকারবিরোধী এই সাংসদ বলেন, ‘স্বাধীনতার একটামাত্র চেতনার কথা বলতে গেলে সেটা হবে ইলেক্টোরাল ডেমোক্রেসি বা নির্বাচনি গণতন্ত্র। যেকোনো প্রসঙ্গে ৭০ সালের নির্বাচনের কথা এলেই, আজকেও ভাবতে অবাক লাগে ইয়াহিয়ার মতো ঘৃণিত সামরিক স্বৈরশাসকের অধীনেও একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছিল। যেখানে বঞ্চিত, শোষিত পূর্ব পাকিস্তানের কোনো দল ১৬৭টি আসন পেয়ে মেজরিটি অর্জন করে।’
গত এক দশকে গণতন্ত্রকে তিনি তুলনা করেন, পাকিস্তান আমলের সামরিক শাসক আইয়ুব খানের ‘বুনিয়াদি গণতন্ত্র’-এর সঙ্গে।
রুমিন ফারহানা বলেন, ‘যে গণতন্ত্রকে মূলমন্ত্র ধরে একটা স্বাধীন দেশের জন্ম হয়েছিল, সেই দেশে গত এক যুগে চালু হয়েছে আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র, সীমিত গণতন্ত্র, বেশি উন্নয়ন কম গণতন্ত্র। উন্নয়নের গণতন্ত্র নামের অদ্ভুত সব স্লোগান। ঠিক যেন আইয়ুবের বুনিয়াদি গণতন্ত্র। সামরিক শাসক আইয়ুব খান তার ক্ষমতায় থাকার বয়ান হিসেবে উন্নয়নকে বেছে নিয়েছিল, বর্তমান সরকারও একদমই তাই।’
রুমিন ফারহানার বক্তব্যেরও জবাব দেন শাহরিয়ার আলম। বলেন, ‘সমস্যা সেটি, যে রাজনৈতিক দল বিদেশিদের কথা মতো তাদের রাজনীতি পরিচালনা করে, সে রাজনৈতিক দলের ভবিষ্যত যে অন্ধকার গহ্বরে মিলিয়ে গেছে, এটা প্রমাণিত আজকে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা জনগণের কাছ থেকে রিপোর্ট কার্ড নেই, বিদেশি কোনো দাতা সংস্থার কাছ থেকে রিপোর্ট কার্ড নেই না। কারও মুখাপেক্ষী হয়ে থাকি না।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশ ইস্যুতে দুই শতাধিক রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান এবং সংস্থা প্রধানদের বক্তব্যের সংকলনটি সবাইকে পড়ার অনুরোধ জানান তিনি। তার দাবি, এই সংকলন পড়লেই বোঝা যাবে বাংলাদেশ নিয়ে বিশ্বের ইতিবাচক মূল্যায়ন।
শাহরিয়ার বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন আর মুখাপেক্ষী নয়, কারণ বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনেক কিছু করে যাচ্ছে, অনেক কিছু অর্জন করেছে। কোথাও ডেকে বাংলাদেশকে ছবক দিতে হয় না। কারণ এখন জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ডাকা হয় বিশ্ববাসীকে ছবক দেয়ার জন্য, তার অভিজ্ঞতাগুলোকে শেয়ার করার জন্য।’