জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে দলীয় পদ হারানোর পর মেয়র হিসেবেও বরখাস্ত হয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়রকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়।
সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম।
মন্ত্রী বলেন, ‘গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ মন্ত্রণালয়ে দাখিল হয়েছিল। সেগুলোকে পর্যালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তের জন্য গ্রহণ করা হয়েছে।
‘যেহেতু আইন অনুযায়ী কোনো নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, বিশেষ করে মেয়রের বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ আসে এবং তা যদি তদন্তের মাধ্যমে নিষ্পত্তির জন্য আমলে নেয়া হয়, তাহলে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার বাধ্যবাধকতা আছে। সে কারণে মেয়র জাহাঙ্গীরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।’
মেয়র জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো তদন্তে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মুস্তাকিম বিল্লাহ ফারুকীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘তার (জাহাঙ্গীর) বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে অপসারণ করা হবে।’
মেয়রের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো কী জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ আছে। বেশ কয়েকটি অভিযোগ আছে। সেসব যেহেতু তদন্ত হবে, তখন আপনারা জানতে পারবেন।
‘অভিযোগ, যেমন: কোথাও অবৈধভাবে জায়গা দখল করা, জনগণের স্বার্থ পরিপন্থি কাজ করা। কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, সেখানে অনেক অবকাঠামো ক্ষতিপূরণ না দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। জোর জবরদস্তি করা; এ ধরনের কিছু অভিযোগ এসেছে।’
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তির কোনো অভিযোগ এসেছে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী তাজুল বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বাংলাদেশের কোনো নাগরিক, সে যেই হোক না কেন, কথা বলা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ও ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণ। এটাকে একজন নাগরিক হিসেবে আমি ঘৃণা করি। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে, যিনি বাংলাদেশকে স্বীকার করেন, তাহলে বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা না করার কোনো কারণ নেই।
‘যারা বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা করবেন না, সে তো বাংলাদেশকেই স্বীকার করে না। সে কারণে আমরা সবাই জানি, আপনারাও জানেন। সে অভিযোগটা দলের কাছে দিয়েছে এবং দলের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে; তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের আইন অনুযায়ী আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত প্রতিষ্ঠান সিটি করপোরেশনসহ অন্যান্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান আছে। সেই প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি দায়িত্ব পালনে যদি গর্হিত কাজ করে, সেসব ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা আমাদের দেয়া আছে।
‘সেই ক্ষমতাই আমরা প্রয়োগ করছি। আইনে আমাদের যেসব অপশন দেয়া আছে, সেগুলো অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।’
তিন দিনের মধ্যে দায়িত্ব নিচ্ছেন নতুন মেয়র
মেয়র জাহাঙ্গীর সাময়িক বরখাস্ত হওয়ায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনে মেয়রদের প্যানেল গঠন করা হয়েছে বলে জানান স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘সেখানে মেয়রদের প্যানেল গঠন করা হয়েছে। যিনি জ্যেষ্ঠতার বিচারে এক নম্বরে আছেন, তিনি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তাকেই দায়িত্ব হস্তান্তর করা হবে।
‘আজকে আমরা বহিষ্কার আদেশ জারি করছি। পত্রপ্রাপ্তির তিন দিনের মধ্যে নতুন ভারপ্রাপ্ত মেয়র দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। এর মধ্যেই ক্ষমতা হস্তান্তরের নির্দেশ দেয়া হচ্ছে।’
মেয়র জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের তদন্ত শেষ হতে কতদিন লাগতে পারে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আমলে নিয়েছি। এখন তদন্ত শুরু হবে অনতিবিলম্বে। তদন্ত করতে মাঠ পর্যায়ে কতদিন লাগবে, সেটা এখনই বলা যাবে না। হয়তো বেশি সময় লাগতে পারে। আরও নতুন বিষয় যোগ হতে পারে।
‘তার বিরুদ্ধে যে চার্জগুলো গঠন করা হবে, আমরা তদন্ত করে যেগুলো পাব, সেগুলো বিষয়ে তাকে শোকজ করা হবে। আত্মপক্ষ সমর্থনের প্রত্যেক নাগরিকের সাংবিধানিকভাবে অধিকার আছে। সে অধিকার তিনিও ভোগ করতে পারবেন।’
গত ২২ সেপ্টেম্বর মেয়র জাহাঙ্গীরের ঘরোয়া আলোচনার রেকর্ড ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভিডিওতে তাকে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করতে শোনা যায়। এরপর আওয়ামী লীগের একটি অংশ জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে দলীয় ও আইনি ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে বিক্ষোভে নামে।
ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে গত ৩ অক্টোবর জাহাঙ্গীরের ব্যাখ্যা চায় আওয়ামী লীগ। তাকে ১৫ দিন সময় দেয়া হয়। ১৮ অক্টোবর সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই মেয়র তার ব্যাখ্যা দেন বলে নিউজবাংলাকে জানান।
২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, ১৯ নভেম্বর দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে জাহাঙ্গীরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। পরে নির্ধারিত দিনের বৈঠকে জাহাঙ্গীরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।