বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মিথ্যা বললে রক্ষা নেই

  •    
  • ২৫ নভেম্বর, ২০২১ ১৩:৫৬

মিথ্যাবাদীর চেহারায় তার মনের ভাবের ছাপ পড়ে এমন ধারণা নতুন নয়। চার্লস ডারউইনের আমল থেকে এ ধারণা চলে এসেছে। তিনি নিজেও বেশ কিছু মনোবিদ্যার পরীক্ষা করেছিলেন। ১৮৭২ সালে এক গবেষণায় তিনি দেখেন, ‘মুখের যে সব পেশি আমাদের ইচ্ছার অধীনে নেই সেগুলো কখনও কখনও নিজে থেকে কোনো অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তুলতে পারে।’
কিছু মানুষ অবলীলায় বলে যান একের পর এক মিথ্যা। তাদের ভাবলেশহীন চোখ-মুখ দেখে মিথ্যা ধরা কঠিন। তবে এসব চতুর মিথ্যাবাদীর সামনে আসছে দুঃসময়। বিজ্ঞানীরা এমন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন, যাতে মিথ্যা বলে পার পাওয়া হবে কঠিন। এই প্রযুক্তির বিশেষ সেন্সর মুখের পেশির অতি ক্ষুদ্র কম্পনকেও ঠিক ধরে ফেলতে সক্ষম। আর এর মাধ্যমে বোঝা যাবে, মনের ভেতরে কথা লুকিয়ে রেখে বাইরে আপনি কতটা মিথ্যা বলছেন। বিজ্ঞান বিষয়ক সাইট সায়েন্স অ্যালার্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই প্রযুক্তি গড়পড়তা যে কোনো ব্যক্তির চেয়ে মিথ্যা কথা শনাক্তে অনেক ভালো কাজ করে।ইসরায়েলের তেল আভিভ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের তৈরি এই সিস্টেম ৭৩ শতাংশ ক্ষেত্রে ঠিকঠাক মিথ্যা ধরতে পেরেছে। এই প্রক্রিয়ায় দুই ধরনের মিথ্যাবাদীকে ধরা গেছে। বিহেভিওরাল নিওরোসায়েন্টিস্ট ডিনো লিভি বলেন, ‘এটি পুরোপুরি নিঁখুত নয়, কিন্তু অন্য অনেক ফেশিয়াল রেকগনিশন প্রযুক্তির চেয়ে বেশ ভালো।’সত্যি ও মিথ্যা কথা বলা ৪০ জন স্বেচ্ছাসেবকের শরীরে লাগানো ইলেক্ট্রোড মুখের পেশির নড়াচড়া মেপে মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদমকে তথ্য দিয়েছে। এতে করে ওই অ্যালগরিদমে মানুষের মুখের ভাবভঙ্গী থেকে ইঙ্গিতগুলো চিনতে শিখেছে আর্টিফিসিয়াল প্রযুক্তি।গবেষকেরা বলছেন, পলিগ্রাফের মতো প্রচলিত সাধারণ মিথ্যা ধরার যন্ত্রগুলো হৃৎকম্পন, রক্তচাপ ও নিঃশ্বাসের মাত্রার হেরফেরের মতো শরীরিক বৈশিষ্ট্যগুলোর ওপর নির্ভর করে। তবে যে কেউ এ বৈশিষ্ট্যগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পলিগ্রাফ মেশিন ব্যবহার করলেও এ থেকে পাওয়া ফলকে নিঁখুত বলার উপায় নেই। মিথ্যাবাদীর চেহারায় তার মনের ভাবের ছাপ পড়ে এমন ধারণা নতুন নয়। চার্লস ডারউইনের আমল থেকে এ ধারণা চলে এসেছে। তিনি নিজেও বেশ কিছু মনোবিদ্যার পরীক্ষা করেছিলেন। ১৮৭২ সালে এক গবেষণায় তিনি দেখেন, ‘মুখের যে সব পেশি আমাদের ইচ্ছার অধীনে নেই সেগুলো কখনও কখনও নিজে থেকে কোনো অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তুলতে পারে।’তবে এসব পেশির পরিমাপ, নিয়ন্ত্রণ বা চিহ্নিত করা সহজ নয়। অনিচ্ছাকৃত, অনিয়ন্ত্রিত ক্ষুদ্র-অভিব্যক্তিগুলো শুধু এক সেকেন্ডের ভগ্নাংশের জন্য দেখা যায়। ৪০ থেকে ৬০ মিলিসেকেন্ডের পরে অভিব্যক্তিগুলো অদৃশ্য হয়ে যায়।অভিব্যক্তি তৈরি করে মুখের এমন নির্দিষ্ট পেশি শনাক্ত করার জন্য বেশিরভাগ গবেষণায় ফেসিয়াল সারফেস ইলেক্ট্রোমাইয়োগ্রাফি বা এসইএমজি নামের একটি কৌশল ব্যবহার করা হয়। এটি মুখের পেশির বৈদ্যুতিক কর্মকাণ্ড পরিমাপ করে এবং মানুষের পক্ষে শনাক্ত করা কঠিন এমন সব সূক্ষ্ম অভিব্যক্তি চিহ্নিত করতে পারে। ইসরায়েলি বিজ্ঞানীদের গবেষণায় একটি নতুন ধরনের পরিধানযোগ্য ইলেক্ট্রোড পরীক্ষা করা হয়েছে। এটি এসইএমজি ডিভাইসের চেয়ে বেশি সংবেদনশীল ও আরামদায়ক। ভিডিও ফুটেজে মুখের অভিব্যক্তি পড়ার জন্য প্রশিক্ষিত একটি মেশিন লার্নিং টুলকেও গবেষণায় ব্যবহার করা হয়েছে। লিভি ব্যাখ্যা করেন, ‘এটা শুরুর দিককার একটা গবেষণা ছিল, যে কারণে খুব সাধারণ মিথ্যা কথা দিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে।’ পরীক্ষায় দুই জন ব্যক্তিকে সামনাসামনি ইলেক্ট্রোড লাগিয়ে বসানো হয়। একজন হেডফোন লাগিয়ে কানে যা শুনছেন সেটা বলেন বা ভিন্ন কিছু বলেন। আর তার সামনে বসা ব্যক্তি ধরার চেষ্টা করেন কখন তিনি সঠিক কথা বলছেন।দুই অংশগ্রহণকারী যখন অডিও শুনছে, কথা বলছে ও প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে সে সময় গবেষকেরা তাদের দুই ভ্রুর মাঝের পেশি (যাকে করুগেটর সুপারসিলিয়া বলা হয়) ও গালের পেশির (জাইগোম্যাটিকাস মেজর) কার্যকলাপ রেকর্ড করেন। গবেষণায় ৪৮ জন অংশগ্রহণকারীর মিথ্যা বলার ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন নিদর্শন বা ‘সূত্র’ পাওয়া গেছে। কিছু লোক মিথ্যা বলার সময় তাদের গালের পেশিগুলিকে সক্রিয় করে, কেউ বা তাদের ভ্রুর কাছে পেশি কুঁচকে ফেলে।লিভি ও তার সহকর্মীরা গবেষণাপত্রে লিখেছেন, ‘আমরা সব অংশগ্রহণকারীর মিথ্যা সফলভাবে ধরতে পেরেছি। মানুষের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ পাওয়া যন্ত্রের চেয়ে এর সফলতা অনেক বেশি।’ মিথ্যা কথা ধরার অ্যালগরিদমটি দিয়ে লিভি ও তার দল ২২ থেকে ৭৩ শতাংশ সময় যথাযথভাবে মিথ্যা কথা ধরতে পেরেছে। গবেষকেরা বলছেন, পরীক্ষামূলক অ্যালগরিদমটির আরও উন্নতি দরকার। কারণ দেখা গেছে, মানুষের যেসব পেশি তথ্য প্রকাশ করে সেগুলো বদলাতে থাকে। তবে দুর্ভাবনার বিষয় হলো, যেসব ব্যক্তি সফলভাবে তাদের পার্টনারকে প্রতারিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন, তাদেরকে মেশিন-লার্নিং অ্যালগরিদমও খুব একটা শনাক্ত করতে পারেনি।বিজ্ঞানীরা বলছেন, বাস্তব জীবনে বা জটিল পরিস্থিতিতে মিথ্যা শনাক্ত করা আরও চ্যালেঞ্জিং। মিথ্যাবাদীরা সাধারণত মিথ্যা ও অর্ধ-সত্য মেশানো দীর্ঘ গল্প শোনান। এছাড়া মিথ্যা বলার সময় অনেকে শব্দ বাদ দিয়ে দেন, এড়িয়ে যান বা সত্য ঢাকতে দুর্বোধ্যভাবে কথা বলেন, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। দ্য টাইমস অফ ইসরায়েলকে লিভি বলেন, ‘ আমরা আশা অরি আরও উন্নতি ও সফল পরীক্ষার পর এটি পলিগ্রাফের শক্ত বিকল্প হিসেবে দাঁড়াবে।’লিভি ও তার সহকর্মীদের ধারণা, ইমেজ প্রসেস করার যে যন্ত্র সেটিকে আরও উন্নত করে কণ্ঠের পরিবর্তন নিয়ে যে সব প্রযুক্তি কাজ করে সেগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা যাবে।

এ বিভাগের আরো খবর