বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রযুক্তি, ভালো জাত আর দামে কৃষিতে সুদিন

  •    
  • ২৫ নভেম্বর, ২০২১ ০৮:৪১

কুষ্টিয়ার বানিয়াপাড়ার কৃষক মুনসাফ শেখ বলেন, ‘লাভ পাওয়ায় ধানের চাষ বাড়াচ্ছি। কয় বছর আগে ৫০০-৬০০ টাকা মণ ধান বিক্রি করে লোকসান খেয়ে চাষ ছেড়েই দিয়েছিলাম। সরকার আবার ধানের দাম দিচ্ছে। তারাই কিনে নিচ্ছে। এখন ধানের আবাদ বাড়াচ্ছি। সব কৃষকই বাড়াচ্ছে।’

কয়েক বছর আগেও কৃষিতে একের পর এক লোকসান গুনেছেন কুষ্টিয়ার চাষিরা। অলাভজনক সেই কৃষিতেই এখন সফলতা দেখছেন তারা।

কৃষকরা বলছেন, নতুন প্রযুক্তি আর উচ্চ ফলনশীল জাতের কারণে ভালো ফলন পাচ্ছেন তারা। পাশাপাশি কৃষিপণ্যের দামও এখন ভালো পাওয়ায় লাভের মুখ দেখছেন। বিশেষ করে ধান, পেঁয়াজ ও সবজিতে ভালো লাভ হচ্ছে কুষ্টিয়ায়।

কৃষি বিভাগ বলছে, নতুন নতুন প্রযুক্তি ও উচ্চ ফলনশীল জাতে বেড়েছে ফলন। সেই সঙ্গে সরকারের ভর্তুকি ও প্রণোদনায় উৎপাদন খরচ কমেছে কৃষকের।

জেলার কয়া ইউনিয়নের বানিয়াপাড়ার কৃষক মুনসাফ শেখ এ বছর ধান চাষ করেছিলেন ৬ বিঘা জমিতে। প্রতি বিঘায় লাভ পেয়েছেন ১২-১৪ হাজার টাকা।

তিনি বলেন, ‘লাভ পাওয়ায় ধানের চাষ বাড়াচ্ছি। কয় বছর আগে ৫০০-৬০০ টাকা মণ ধান বিক্রি করে লোকসান খেয়ে চাষ ছেড়েই দিয়েছিলাম। সরকার আবার ধানের দাম দিচ্ছে। তারাই কিনে নিচ্ছে। এখন ধানের আবাদ বাড়াচ্ছি। সব কৃষকই বাড়াচ্ছে।’

ধান চাষের খরচ নিয়ে জানান, ধানে প্রতি বিঘায় খরচ হয় ৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে সার, সেচ, জমি চাষ, রোপন ও ধান কাটার শ্রমিক খরচ রয়েছে। বিঘায় এখন ১৮-২০ মণ ধান পাচ্ছেন। খড় বিক্রি করে আসে আরও ৪ হাজার টাকা। সেই হিসাবে হাজার টাকা মণে ধান বেচতে পারলে বিঘায় ১৪ হাজার টাকা লাভ থাকে।

মুনসাফ বলেন, ‘সব জমিতে এক রকম ফলন হয় না। কম-বেশি হয়। তবে গড় হিসাবে বিঘায় ১২-১৪ হাজার টাকা লাভ থাকছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কৃষিতে লাভবান হচ্ছি। ধান-পেঁয়াজের দাম ভালো আছে। সরকারের পক্ষ থেকে উচ্চ ফলনশীল ভালো বীজ দেয়া হয়েছে।

‘মাঠে সবাই ধান আর পেঁয়াজের আবাদ বাড়াচ্ছে। আমি নিজে আগে ৫ কাঠা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করতাম। বাড়াতে বাড়াতে এবার করছি ১২ বিঘায়। কয়েক বছর আগে একবার পেঁয়াজ ২২ টাকা কেজি বিক্রি করে অনেক টাকা লোকসান খেয়েছি। গতবার অবশ্য লাভ করেছি। মৌসুমে আমাদের পেঁয়াজ ওঠার সময় সরকার আমদানি বন্ধ রাখলে ভালো দাম পাব।

মূলকাটা পেঁয়াজে খরচ বেশি আর চারার পেঁয়াজে খরচ কম জানিয়ে কুষ্টিয়ার এ কৃষক বলেন, ‘মূলকাটায় এক বিঘা জমিতে সাত থেকে আট মণ বীজ দরকার হয়। এই পদ্ধতিতে ছোট সাইজের পেঁয়াজ রোপণ করা হয়। জমি প্রস্তুত, সেচ, সার, ওষুধ মিলিয়ে ২৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। অন্তত ৪৫ মণ পেঁয়াজ তুলতে পারব। হাজার টাকা মণ বিক্রি করতে পারলেও ১০ হাজার টাকার কাছে লাভ থাকবে।

‘পেঁয়াজ তোলার পর সব জমিতে ভুট্টা লাগিয়ে দেব। ওটাও এখন লাভজনক ফসল। সারা বছরই ক্ষেত করছি। কোনো জমিই পড়ে থাকছে না। আবহাওয়া খারাপ না হলে বা কোনো রোগ-বালাই না থাকলে এখন আর ক্ষতি নেই। লাভই হচ্ছে।’

একই এলাকার কৃষক হবিবার রহমান বলেন, ‘নতুন জাতের বিএডিসি রেড নাসিক এন-৫৩ পেঁয়াজের বীজ দিয়েছে সরকার। এক বিঘা জমি চাষের সার, কীটনাশকসহ সব খরচ দিচ্ছে তারা। বলেছে, এটার ভাল ফলন হবে। দেখি গ্রীষ্মকালীন এই পেঁয়াজ যদি ভালো হয়, তাহলে পরে আমরা এটাই করব।

‘ডিসেম্বরে মূলকাটা পেঁয়াজ আসার ২০-৩০ দিন পর উঠবে এই জাতের পেঁয়াজ। আর চারার পেঁয়াজ উঠবে মার্চ-এপ্রিলে। নতুন এই জাত আসায় বছরে এখন তিন ধাপে পেঁয়াজ উঠবে। এভাবে আগে পিছে উঠলে ভালো হবে। দাম ভালো পাওয়া যাবে।’

কয়ায় গড়াই নদী পাড়ের জমিতে লাল শাকের সঙ্গে টমেটো চাষ করেছেন কৃষক ফারুক শেখ। তিনি এরই মধ্যে ২০ হাজার টাকার লালশাক বিক্রি করেছেন। এতেই সব খরচ তুলে ১২ হাজার টাকা লাভ করেছেন। কিছু দিনের মধ্যে টমেটো ওঠা শুরু হবে। সেখানে আরও ৮-১০ হাজার টাকা লাভ করতে পারবেন।

ফারুক বলেন, ‘অল্প দিনের ফসল লাল শাক। ২০-২৫ দিনের মধ্যেই বেচাকেনা শেষ। এখন টমেটো ক্ষেতে মনোযোগ দিয়েছি। এটাও ভালো হচ্ছে।’

সারের দাম নিয়ে অবশ্য ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সরকার দাম ধরে দিলেও দোকানিরা বাড়িয়ে বেচছেন। অভিযোগ দিলেও কেউ সমাধানে এগিয়ে আসছেন না।’

সরেজমিনে কুষ্টিয়া অঞ্চলে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে দোল খাচ্ছে সোনালি ধানের শীষ। কোনো কোনো এলাকায় হালকা সবুজ আভার ছোট পেঁয়াজ কলিও দুলছে।

এর সঙ্গে দুলছে কৃষকের মন। তারা বলছে, ধানে মনপ্রতি আগের মতো দাম পেলে ভালো লাভ ঘরে তুলতে পারবেন তারা। আর পেঁয়াজের দাম এখনও পড়েনি। তারা এখনকার দামই পেতে চান।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে বাংলাদেশে সবচেয়ে ভালো পেঁয়াজ উৎপাদন হয় যে পাঁচ জেলায় তার মধ্যে কুষ্টিয়া অন্যতম। জেলায় এ বছর ১২ হাজার ৯১৪ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়েছে। এতে ১ লাখ ৮০ হাজার ৭১৪ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হবে বলে আশা তাদের।

নতুন জাতের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে ভর্তুকি দিয়েছে সরকার। আগামীতে এর উৎপাদন আরও বাড়বে বলছে কৃষি বিভাগ।

ধান উৎপাদনে কুষ্টিয়াকে অপার সম্ভাবনার জেলা হিসেবে ধরে কৃষি বিভাগ। তারা বলছে, গত বছর জেলায় ৮৮ হাজার ৮৬২ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়। সেখানে উৎপাদন হয় ৪ লাখ ৪৬ হাজার টন ধান। এ বছর আমন চাষে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৮ হাজার ৮৮৫ হেক্টর জমিতে, চাষ হয়েছে ৮৮ হাজার ৮৯৫ হেক্টর জমিতে। এবার ফসল ভালো হয়েছে, সাড়ে ৪ লাখ টন ধান উৎপাদন হবে বলে আশা তাদের।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বিত্তিপাড়ার আশপাশে হয় নানা রকমের সবজির চাষ। ভালো দাম পাওয়ায় সবজি চাষিরও লাভ ঘরে তুলতে পারছেন। তবে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার তারা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

ওই এলাকার কৃষক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘ডিজেলের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। সেচ ও জমি চাষ করতে এখন অনেকটা ডিজেলচালিত যন্ত্রের ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে। আর পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাপারিরা সবজির দাম কমিয়ে দিতে চাচ্ছেন।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কুষ্টিয়ার প্রধান কর্মকর্তা উপপরিচালক ড. হায়াত মাহমুদ বলেন, ‘কৃষি যান্ত্রিকীকরণের দিকে হাঁটছে সরকার। আধুনিক প্রযুক্তি দেয়া হচ্ছে কৃষকদের। ভালো মানের বীজ সরবরাহ করে সুষম সারের পরামর্শ দিয়ে ফলন বাড়িয়ে দিচ্ছেন সম্প্রসারণ কর্মীরা।

‘আবার কৃষিবান্ধব সরকার খেয়াল রাখছে কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্যের বিষয়টিও। সব মিলিয়ে কৃষি এখন লাভজনক।’

কৃষকদের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘অনেক কৃষক নিজেরাই এতটা অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন যে, বিশেষজ্ঞদেরও হার মানায়। এরা আবার অন্য কৃষকদেরও লাভজনক চাষের দিকে মনোযোগী করছেন। যেমন কুমারখালীর কৃষক আবু তালেব পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে অভিজ্ঞ। তিনি সব কৃষককে সহযোগিতা করে থাকেন।’

সারের দাম বেশি রাখার বিষয়ে এ কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ‘মনিটরিং করা হচ্ছে। এসব সমস্যারও সমাধান করা হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর