বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ওয়েবিল নিয়ে টানাটানি

  •    
  • ২৪ নভেম্বর, ২০২১ ২২:০২

বাসমালিকদের বক্তব্য, ওয়েবিল না থাকলে প্রকৃত আয়ের হিসাব পাওয়া যায় না। বিকল্প ব্যবস্থা ছাড়া এটা বন্ধ করা যাবে না। শ্রমিকরা বলছেন, মালিকদের চাহিদা মেটাতে তারা বাড়তি ভাড়া নিতে বাধ্য হচ্ছেন। বিআরটিএ বলছে, কাগজ-কলমে ওয়েবিল বন্ধ; না মানলে ব্যবস্থা। অপরদিকে প্রতিবাদী অবস্থানে যাত্রীরা।

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর ওয়েবিলব্যবস্থা উঠিয়ে দেয়ার কথা বলেছিলেন পরিবহনমালিকরা। বাস্তবে তা কার্যকর হচ্ছে না। কারণ মুখে যা-ই বলুক, মালিকরাই চান না ওয়েবিল বন্ধ হোক।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) বলছে, কাগজে-কলমে ওয়েবিল বন্ধ। তারপরও যারা ওয়েবিলের নামে বাড়তি ভাড়া আদায় করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

বাস্তব চিত্র হলো, রাজধানীর বিভিন্ন রুটে ওয়েবিলের নাম করে বাড়তি ভাড়া আদায় চলছেই। এ নিয়ে যাত্রী-শ্রমিক বাগ্‌বিতণ্ডা চলছে। কখনও তা হাতাহাতির পর্যায়েও গড়াচ্ছে। এ অবস্থায় ওয়েবিলের নামে বাড়তি ভাড়া আদায় নির্বিঘ্ন করার দাবিতে পরিবহনশ্রমিকরা বিভিন্ন সড়কে বাস চলাচল সীমিত করেছেন, কোথাও কোথাও বন্ধও রাখা হয়েছে।

পরিবহনশ্রমিকরা বলছেন, তারাও চান ওয়েবিল ব্যবস্থা বন্ধ হোক। কিন্তু মালিকরা ওয়েবিলের হিসাব ধরে বাড়তি টাকা দাবি করেন। এ অবস্থায় বাড়তি ভাড়া না নিলে তারা মালিকের চাহিদা মেটাবেন কীভাবে।

একটি নির্ধারিত টার্মিনাল বা স্টপেজ থেকে বাস ছাড়ার পর বিভিন্ন পয়েন্টে চেকার থাকেন। তারা ওই পয়েন্ট পর্যন্ত কতজন যাত্রী উঠলেন, কত ভাড়া দিলেন তার হিসাব রাখেন। একটি শিট নিয়ে চলেন চালকরা। প্রতিটি পয়েন্টে হিসাবটা যাচাই করে ওই শিটে লিখে দেন চেকার। দিন শেষে এই হিসাব অনুযায়ী বাসমালিকদের প্রতিদিনের ভাড়ার টাকা বুঝিয়ে দেন শ্রমিকরা।

অতিরিক্ত বাস ভাড়া আদায় নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। বিআরটিএ ভাড়া বেঁধে দিলেও তাতে গা নেই ড্রাইভার-হেলপারদের। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস/নিউজবাংলা

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে নতুন ভাড়া কার্যকর হওয়ার পর ওয়েবিল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতি। অথচ এই সমিতির সদস্যরাই ওয়েবিল ব্যবস্থার পক্ষে। তারা বলছেন, ওয়েবিলব্যবস্থা না থাকলে বাসে স্টাফরা কত টাকা ভাড়া কাটছেন, তার সঠিক হিসাব মালিকরা পান না।

ওদিকে পরিবহনশ্রমিকরা বলছেন, নতুন ভাড়া কার্যকর হওয়ায় ওয়েবিল অনুযায়ী যে ভাড়া নেয়ার কথা তা আদায় করা যাচ্ছে না। তারাও চান ওয়েবিল বন্ধ হোক। তাহলে তাদের আয় বাড়বে।

গত কয়েক দিনে রাজধানীর ধানমন্ডি, নিউ মার্কেট, মালিবাগ, বাড্ডা, মহাখালী, মিরপুর ও উত্তরা এলাকায় ওয়েবিল নিয়ে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করেছেন যাত্রীরা। বিশেষ করে বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সর্বনিম্ন ভাড়া ও ওয়েবিলের প্রতিবাদ করছে। ছাত্রদের এ প্রতিবাদে যুক্ত হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও।

বাড়তি ভাড়া দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় ইব্রাহিম খলিল নামে এক যাত্রীকে দেখে নেয়ার হুমকি দেন মিডলাইন পরিবহনের এক সহকারী। উপায় না দেখে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরে কল দেন তিনি। যথারীতি ট্রাফিক পুলিশ ওই বাসটি থামিয়ে ব্যবস্থা নেয়।

গত ১৭ নভেম্বর সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকা থেকে মুগদা যাওয়ার পথে এ ঘটনা ঘটে।

ইব্রাহিম খলিল বলেন, ‘সায়েন্স ল্যাব থেকে মুগদা পর্যন্ত বর্তমান চার্ট অনুযায়ী ভাড়া ১৬ টাকা। মিডলাইন বাসে করে যাচ্ছিলাম। ১৭ টাকা ভাড়া দিতে চেয়েছি কিন্তু সহকারী নেবে না। সে ২৫ টাকা ওয়েবিলের ভাড়া চায়। তাতে ব্যর্থ হয়ে সে হুমকি দেয় খিলগাঁওয়ে তাদের কাউন্টারে নিয়ে আমাকে ভাড়া দেয়া শেখাবে। তার কথায় বুঝলাম সে ঝামেলা করবে। এ অবস্থায় ৯৯৯ নম্বরে কল করে ইনফর্ম করলাম। আমাকে বলা হলো সামনের টিটিপাড়া পুলিশ বক্সে জানাতে। টিটিপাড়া যাওয়ার পর গাড়িটি আটকে ব্যবস্থা নেয়া হয়।

‘বাড়তি ভাড়া নিয়ে আমি যখন প্রতিবাদ করি, আমাকে অন্য যাত্রীরা সমর্থন দেয়নি। উল্টো তারা বাড়তি ভাড়াই দিচ্ছিল। যাত্রীরা সম্মিলিত প্রতিবাদ করলে ভাড়া নিয়ে পরিবহন চালক-শ্রমিকরা নৈরাজ্য করতে পারবে না।’

বাড়তি ভাড়া আদায়ে প্রতিরোধের মুখে পড়ে একাধিক পরিবহন একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তাদের বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে।

ভাড়া নিয়ে বাড়াবাড়ির জেরে গত মঙ্গল ও বুধবার মিরপুরের পরিবহনশ্রমিকরা অঘোষিত ধর্মঘট করে সড়কে গাড়ির সংখ্যা কমিয়ে দেন। একই ঘটনা ঘটেছে মহাখালী ওয়্যারলেস এলাকায়। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বৈশাখী পরিবহনের বাসগুলোও বন্ধ রাখেন শ্রমিকরা।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শ্রমিকরা বলছেন, সড়কে গাড়ি চালাতে তাদের সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে ওয়েবিলে ভাড়া নেয়া যাচ্ছে না। সিটিং সার্ভিসও বন্ধ। ওদিকে মালিক বেশি ভাড়া হিসাবে টাকা চাচ্ছেন।

বিকাশ পরিবহনের সহকারী রাজন বলেন, ‘গাড়ি চালাইতে খরচ বাড়ছে, মহাজনও জমা বাড়াই দিছে। ভাড়া বাড়ছে, কিন্তু যাত্রীরা তো ঠিকমতো ভাড়া দিতে চায় না। ভাড়া চাইতে গেলে গরম দেহায় সবাই। এহন আমরা মালিকরে বাড়তি টাকাটা দিমু কইত্তে।’

যাত্রীরা বলছেন, মালিকের দোহাই দিয়ে চালক-শ্রমিকরা তাদের গলা কাটতে চাচ্ছেন।

মিরপুরের বাসিন্দা মুনতাসির বলেন, ‘সরকার বলে সর্বনিম্ন ভাড়া ৮ টাকা। তা না হয় মানলাম। কিন্তু আবার বলা আছে, কিলোমিটার হিসাবে ভাড়া হবে। দূরে যেতে গেলে তারা আবার কিলোমিটার হিসাবে ভাড়া নেবে না। তখন তারা নেবে ওয়েবিল হিসাবে। ওরা আসলে কোনটা ধরে ভাড়া নিচ্ছে, এটাই আমরা বুঝতে পারি না।’

জাতীয় জরুরি সেবার অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক মোহাম্মদ তবারক উল্লাহ বলেন, ‘৯৯৯ নম্বরটি জরুরি সেবা নম্বর হলেও বাড়তি ভাড়া নিয়েও আমাদের কাছে কলাররা কল করেন। আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।’

৯৯৯-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত এক কর্মকর্তা জানান, বাড়তি ভাড়া আদায় ও তা বন্ধে ৯৯৯ নম্বরে অনেকে কল করছেন। যেসব কলে জরুরি কিছু পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো সমাধানে যথাযথ ইউনিটকে জানানো হচ্ছে। তারা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছে।

পরিবহন সংগঠনগুলো ওয়েবিল বাতিলের ঘোষণা দিলেও যেসব পরিবহন আগে থেকে ওয়েবিলে চলছিল, সেসব বাসের মালিক তা বন্ধ করতে চান না। তাদের দাবি, ওয়েবিল থাকলে ভাড়ার হিসাব সঠিকভাবে পাওয়া যায়। ওয়েবিল না থাকলে সেটা সম্ভব হয় না।

বিকাশ পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহরাব হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওয়েবিল ছাড়া প্রকৃত তথ্য পাওয়া কঠিন। এখন এটা নিয়ে বহুমাত্রিক সমস্যা হচ্ছে। পক্ষ-বিপক্ষ তৈরি হয়েছে। মালিকের ন্যায্য পাওনা প্রাপ্তিটা নিশ্চিত হবে এমন ব্যবস্থাপনা চালু হওয়া দরকার। নয়তো এই ওয়েবিল চালু রাখার পক্ষে আমরা।’

হাফ পাসের দাবিতে চলা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে ওয়েবিল বন্ধের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব এনায়েত উল্লাহ।

তিনি বলেন, ‘আমরা মালিকদের ডেকে ওয়েবিল বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছি। যারা নির্দেশনা মানছেন না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। বিআরটিএর ম্যাজিস্ট্রেটরা জরিমানা করছেন। যারা বারবার এই নির্দেশনা অমান্য করছে তাদের বিরুদ্ধে রুট পারমিট বাতিলের মতো কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

বিআরটিএ জানে ওয়েবিল বন্ধ

ওয়েবিল ঘোষণা দিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। বিআরটিএ জানে ওয়েবিল বন্ধ। তবে কেউ ওয়েবিলের নামে বাড়তি ভাড়া নিলে তাদের ম্যাজিস্ট্রেটরা জরিমানা করছেন। যারা একই অপরাধ বারবার করছেন সেসব পরিবহনের রুট পারমিট বাতিল করা হবে বলে জানান বিআরটিএর চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওয়েবিল তো বন্ধ। কাগজে কোথাও ওয়েবিল নেই। যারা চালাচ্ছে, তাদের জরিমানা করা হচ্ছে। নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত কেউ নিলেই আমাদের ম্যাজিস্ট্রেটরা জরিমানা করছেন। আমরা কঠোর অবস্থানে আছি।

‘যারা একই অপরাধ একাধিকবার করছে, তাদের রুট পারমিট বাতিলের নোটিশ করেছি। সহসাই এমন ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর