চিকিৎসক, প্রকৌশলী, অভিনেতা, শিল্পী, ব্যবসায়ী, খেলোয়াড়সহ বিভিন্ন শ্রেণিতে জাতীয় পর্যায়ে এবারও ১৪১ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সেরা করদাতার স্বীকৃতিস্বরূপ সম্মাননাপত্র দেয়া হয়েছে।
বুধবার রাজধানীর বেইলি রোডের অফিসার্স ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে তাদের হাতে ক্রেস্ট, ট্যাক্সকার্ড ও সম্মাননা সনদ তুলে দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
অনুষ্ঠানে জেলা ও সিটি করপোরেশন পর্যায়ে দীর্ঘসময় ধরে কর দেয়ার জন্য মোট ৫২৫ জনকে সন্মাননা দেয়া হয়। প্রতি জেলায় তিনজন এবং সিটি করপোরেশনে দুইজন করে এ সম্মাননা দেয়া হয়।
এবছর ব্যক্তি পর্যায়ে ৭৫, কোম্পানি ৫৪ ও অন্যান্য পর্যায়ে ১২ জন সেরা করদাতার সম্মাননা পান। ২০২০-২১ করবর্ষের জন্য তাদের এ পুরস্কার দেয়া হয়।
জাতীয় কর দিবস উদযাপনকে সামনে রেখে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
জনগণকে কর দেয়ায় উদ্ধুদ্ধ করতে ২০০৮ সাল থেকে কর দিবস পালন করে আসছে এনবিআর। ওই বছর থেকে সেরা করদাতাদের পুরস্কৃত করা হয়।
অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী।
বিশেষ অতিথি ছিলেন, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিমউদ্দিন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন এনবিআর সদস্য (কর প্রশাসন ও মানসম্পদ ব্যবস্থাপনা) শাহিনা আক্তার।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে দেশের উন্নয়নে সবাইকে কর দেয়ার আহ্বান জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘সম্পদশালী সবাইকে তাদের দায়বদ্ধতা থেকে কর দেয়া উচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘ব্যবসা করে অর্থ উপার্জন করা অপরাধ নয়, কিন্তু আমাদের সবারই দায়বদ্ধতা আছে। রাষ্ট্রের উন্নয়নে, দেশের উন্নয়নে কিছু করার জন্য সে দায়বদ্ধতা থেকেই যোগ্য সবাইকে কর দেয়া উচিত।’
বিত্তবানদের কর দিতে আহ্বান জানিয়ে মুস্তফা কামাল বলেন, ‘তাদের অনেক প্রতিবেশী আছেন তাদের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। যে কর দিচ্ছেন সেই করের টাকা দিয়ে সরকার বিনিয়োগ করে দেশের উন্নয়নের জন্য।’
বক্তব্যে গত এক দশকে দেশের উন্নয়নের চিত্রও তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী। জানান, গত ১০ বছরে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃত্তি অর্জিত হয়েছে। মাথাপিছু আয়ে দেশ ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে। অর্থনীতির সকল মানদণ্ডে করোনার মধ্যেও সবার ওপরে বাংলাদেশ।
উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত রাখতে সবার প্রতি আহ্বান জানান অর্থমন্ত্রী।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিমউদ্দিন বলেন, অগ্রিম কর আরোপ করায় ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ বাড়ছে। এই কর প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি। ট্যাক্স কার্ডের সুবিধা সবাই পান না। এটি নিশ্চিত করার কথা বলেন তিনি।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, কর কেন দেবো– এ প্রশ্নের উত্তর করদাতাদের কাছে যত সহজ হবে, কর দিতে তত উৎসাহিত হবেন তারা। আমরা আদায় প্রক্রিয়া ও আইন সহজ করার উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করছি এর সুফল পাবেন করদাতারা।
বিভিন্ন শাখায় যাদের সম্মাননা দেয়া হলো তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন : সিনিয়র সিটিজেন শাখায় পাট প্রতিমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী ও ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রয়াত লতিফুর রহমান, ব্যবসায়ী শাখায় এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার, চিকিৎসক শাখায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রাণ গোপাল দত্ত ও জাহাঙ্গীর কবির।
সাংবাদিক শাখায় চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম ও প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান।
আইনজীবী শাখায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ও মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি নিহাদ কবির।
খেলোয়াড় শাখায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদ উল্লাহ রিয়াদ, ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল খান ও ব্যাটার সৌম্য সরকার।
কোম্পানি পর্যায়ে ব্যাংকিং শাখায় ইসলামী ব্যাংক, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, এইচএসবিসি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক ও ডাচ বাংলা ব্যাংক; অব্যাংকিং শাখায় ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইডকল), ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ-আইসিবি।
টেলিকমিউনিকেশন শাখায় গ্রামীণফোন, প্রকৌশল শাখায় উত্তরা মোটরস, বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি ও উত্তরা অটোমোবাইলস।
খাদ্য ও আনুষঙ্গিক শাখায় নেসলে বাংলাদেশ, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, প্রাণ ডেইরি; জ্বালানি শাখায় তিতাস গ্যাস, গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড; পাট শিল্পে আকিজ জুট মিলস; ঔষুধ ও রসায়ন শাখায় ইউনিলিভার, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস, রেনাটা লিমিটেড।
প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া শাখায় মিডিয়া স্টার লিমিটেড, ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ, ট্রান্সক্রাফট লিমিটেড ও সময় মিডিয়া লিমিটেড; চামড়া শিল্পে বাটা সু কোম্পানি ও এপেক্স ফুটওয়্যার ইত্যাদি।