জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল বসানোয় আপত্তি তোলা রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক আব্বাস আলীকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াসিন আলী নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, দলীয় কার্যালয়ে পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের জরুরি বৈঠকে বুধবার দুপুরে আব্বাসকে পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়কের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে কেন দলীয় সদস্যপদ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হবে না, জানতে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
তিনি বলেন, আব্বাসকে তিন দিনের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলা হবে। বৃহস্পতিবার তাকে নোটিশটি পাঠানো হবে।
জবাব পাওয়ার পর তাকে বহিষ্কারের জন্য দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে সুপারিশ পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) অনিল কুমার সরকার নিউজবাংলাকে জানান, শুক্রবার তারা জেলায় সভা করে মেয়রকে বহিষ্কারের সুপারিশ করবেন কেন্দ্রে।
আব্বাস আলী রাজশাহীর কাটাখালী পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক। ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে তিনি প্রথমবার মেয়র নির্বাচিত হন। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন।
ঘরোয়া একটি আলোচনায় মেয়র আব্বাস বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপনের বিরোধিতা করে কথা বলেন। গত সোমবার এই আলোচনার অডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
১ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের বক্তব্য শোনা যাচ্ছে, তিনি একজনকে বলছেন, ‘সিটি গেট আমার অংশে। …ফ্রার্মকে দিয়েছে তারা বিদেশি স্টাইলে সাজিয়ে দিবে; ফুটপাত, সাইকেল লেন টোটাল আমার অংশটা। কিন্তু একটু থেমে গেছি, গেটটা নিয়ে। একটু চেঞ্জ করতে হচ্ছে… যে ম্যুরালটা দিয়েছে বঙ্গবন্ধুর সেটা ইসলামি শরিয়ত মতে সঠিক নয়। এ জন্য আমি ওটা থুব না (রাখব না), সব করব তবে শেষ মাথাতে যেটা… ওটা (ম্যুরাল)।’
মেয়র আব্বাস আলী বলছেন, ‘আমি দেখতে পাচ্ছি, ম্যুরালটা ঠিক হবে না দিলে। আমার পাপ হবে; তো কেন দিব, দিব না। আমি তো কানা না, যেভাবে বুঝাইছে তাতে আমার মনে হয়েছে, ম্যুরালটা হলে আমার ভুল করা হবে।
‘এ খবরটা যদি যায় তাহলে আমার রাজনীতির বারোটা বাজবে যে এই ম্যুরাল দিছে না। তাহলে বঙ্গবন্ধুকে খুশি করতে গিয়ে… আল্লাহকে নারাজ করব নাকি। এ জন্য কিছু করার নাই। মানুষকে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করা যাবে না।’
মেয়রের অডিওটি কোন সময়ে বা কাদের সঙ্গে আলাপের, সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে কথা বলতে তার মোবাইলে কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি সাড়া দেননি। পরিচয় জানিয়ে তাকে এসএমএস করা হলেও জবাব দেননি মেয়র আব্বাস।
ফেসবুকে মঙ্গলবার রাতে মেয়র আব্বাস দাবি করেন, ছড়িয়ে পড়া অডিওটি এডিট করা। এ রকম কথা তিনি বলেননি।
মেয়র আব্বাসের ওই বক্তব্যের প্রতিবাদে বুধবার দিনভর বিক্ষোভ হয়েছে রাজশাহীতে। আওয়ামী লীগ, এর সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন সংগঠন থেকে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে।
বিক্ষুব্ধরা মেয়র আব্বাসকে শহরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে, তাকে দল থেকে বহিষ্কার ও আইনের আওতায় আনার দাবিও তোলা হয়।