এখন পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) অনুষ্ঠিত সব নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা।
বুধবার ইউপি নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক বিশেষ সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
মন্ত্রী-এমপিরাও যাতে আচরণবিধি লংঘন করতে না পারে তার জন্য কমিশনের মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনকে কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। সেই সঙ্গে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়ে সহিংসতাপূর্ণ এলাকায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এর আগে বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক হয়। বৈঠকে সিইসি ছাড়াও চার নির্বাচন কমিশনার, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধি ও ইসির কর্মকর্তারা অংশ নেন।
সভায় সূচনা বক্তব্যে এরই মধ্যে শেষ হওয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সফল হয়েছে বলে দাবি করে সিইসি বলেন, ‘যে নির্বাচনগুলো হয়েছে তাতে আমরা দাবি করি যে নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে। অল্প কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনা ঘটেছে, হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। যেগুলো কিছুতেই কাম্য নয়। তবুও নির্বাচনের মানদণ্ড যদি ভোট প্রদান হয়, তাহলে আমি বলব গত নির্বাচনগুলোতে গড়ে ৭৪ শতাংশ ভোট পড়েছে। সামগ্রিক অর্থে নির্বাচন সফল হয়েছে।’
পরে সভা শেষে সিইসি বলেন, ‘নির্বাচনে সহিংসতা কোনোভাবেই কাম্য নয়। যেখানে যেখানে, যেসব পকেটে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আগাম খবর পাওয়া যাবে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে সেখানে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক্ষেত্রে গ্রাম পুলিশ, আনসার-ভিডিপি, কমিউনিটি পুলিশ এদের মাধ্যমে আগাম তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা হবে। কোথায় যখন অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা থাকবে। সেখানে আগে থেকেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
নূরুল হুদা বলেন, ‘যেসব রাজনীতিবিদ যারা ইউনিয়ন পরিষদ পর্যায়ে নির্বাচনকালীন কর্মকাণ্ড চালাতে পারেন না যেমন এমপি-মন্ত্রীরা, তারা নির্বাচনের সময় কখনই এলাকায় থাকতে পারবেন না। এ বিষয়ে নির্বাচন সচিবালয় থেকে একটি জেনারেল সার্কুলার দেয়া হয়েছে। আজকেও সভায় আলোচনা হয়েছে, তারা নির্বাচনী এলাকায় থাকতে পারবেন না।
‘কোনভাবে আচরণবিধি লংঘন করতে পারবেন না। আচরণবিধি প্রতিপালনে ম্যাজিস্ট্রেট যেন তৎপর থাকেন, তারা যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেন, সে নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। অলরেডি গত নির্বাচনের সময় অনেককে ফাইন করা হয়েছে, অনেককে হাজতে দিয়েছেন। কিছু কিছু অফিসার এমপিদের চিঠিও দিয়েছেন, সে অনুযায়ী তারা এলাকা ত্যাগ করেছেন। কোন এমপি যদি চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এলাকা ছেড়ে চলে না যান, তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আগে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। মামলা পর্যন্ত করা হয়েছিল। এখনও প্রয়োজন হলে তা করা হবে।’
তবে এমপি-মন্ত্রীদের অধিকাংশই নির্বাচনি আচরণবিধি মেনে চলেন। তবে দু’চার জন মানছেন না বলে অভিযোগ এসেছে বলে জানান সিইসি।
বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী মাস্তানদের আগাম গ্রেপ্তার করতে নির্দেশ দিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এলাকার মাস্তান যারা বিশৃঙ্খলা করতে পারে তাদের আগাম গ্রেপ্তারের জন্য ইন্সট্রাকশন দিয়েছি। আগামী নির্বাচনগুলোয় সহিংসতা রোধে অপ্রাণ চেষ্টা করা হবে। তবে, একটাও সহিংস ঘটনা হবে না, মারামারি হবে না এমন নিশ্চয়তা আমরা দিতে পারি না। আমরা চেষ্টা করবো এগুলো নিয়ন্ত্রণ করার জন্য।’
ডিসেম্বরে একটি নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন করা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসএসসি পরীক্ষা, নিয়োগ পরীক্ষা এগুলো করোনা মহামারির কারণে আগে হতে পারে নাই। যেখানে নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এসব পরীক্ষার সিডিউল আছে। আবার এই সময় আমাদের নির্বাচন আছে। তাই আলোচনা করে নির্বাচনের ফাঁকে ফাঁকে এসব পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। যেমন আগামী ২৩ ডিসেম্বর তফসিল অনুসারে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল কিন্তু ঐদিন বড় দুটি নিয়োগ পরীক্ষা রয়েছে। সেই কারণে ২৩ তারিখে নির্বাচন করা যাবে না। সেটা পরবর্তীতে করা হবে হয়তো জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বা তারপরে।’