আওয়ামী লীগ ক্ষমতাকে ভোগের বস্তু হিসেবে নয়, বরং জনগণের জন্য সেবা ও ভাগ্য পরিবর্তনের সুযোগ হিসেবে দেখে বলে সংসদকে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
একাদশ জাতীয় সংসদের পঞ্চদশ অধিবেশনে বুধবার বিকেলে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিশেষ আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ক্ষমতাকে ভোগের বস্তু হিসেবে নেইনি। ক্ষমতা মানে হচ্ছে জনগণের সেবা করার সুযোগ পাওয়া, জনগণের জন্য কাজ করার সুযোগ পাওয়া, জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করার সুযোগ পাওয়া।’
সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ ধারায় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বিশেষ আলোচনার প্রস্তাব উত্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে দারিদ্র্যের হার ২০ ভাগে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। যদি করোনা মহামারি না থাকতো তাহলে আমরা এটা ১৭ ভাগে নামিয়ে আনতে পারতাম।’
বৈশ্বিক করোনা মোকাবিলায় সরকারের সফলতা তুলে ধরে সংসদ নেতা বলেন, ‘ইতোমধ্যে ৯ কোটি ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। ভ্যাকসিনের কোনো অভাব হবে না। ইতোমধ্যে আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে যেভাবে পারি সংগ্রহ করছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘গত ১২ বছরে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। এই অগ্রযাত্রার পেছনের কারণ সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা। আমরা পরিকল্পিতভাবে সব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছি বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।
‘আমাদের আরও এগিয়ে যেতে হবে। সেই পরিকল্পনা কাঠামোও করে রেখেছি। আমরা ২০৪১ সালের বাংলাদেশকে কীভাবে দেখতে চাই, সেই প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি।’
এসডিজির বিষয়গুলো অষ্টম পঞ্চম বার্ষিক পরিকল্পনায় সংযুক্ত করে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে জানান শেখ হাসিনা।
চতুর্থ শিল্প-বিপ্লবের জন্য দেশের নাগরিকদের প্রস্তুত করার লক্ষ্য জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশকে আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দেশ হিসেবে এবং বাঙালি জাতিকে উন্নত সমৃদ্ধ আধুনিক জ্ঞানসম্পন্ন জাতি হিসেবে উন্নীত করতে চাই। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে সোনার বাংলা গড়ে তোলার যে স্বপ্নটা জাতির পিতা দেখেছিলেন, সেই সোনার বাংলা আমরা গড়তে পারব।’
দেশের স্বাধীনতা অর্জনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অসামান্য ভূমিকার কথাও উঠে আসে প্রধানমন্ত্রীর আলোচনায়। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু লন্ডন হয়ে ভারত ঘুরে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের স্মৃতিচারণ করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আমরা বাবাকে পাই পরে, জনগণ পায় আগে। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। তার কাছে জনগণই ছিল সবচেয়ে বড়।’
যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে আমরা যে জায়গায় আসতে পেরেছি, সেই জায়গায় আমরা স্বাধীনতার ১০ বছরের মধ্যে পৌঁছে যেতে পারতাম, যদি জাতির পিতা বেঁচে থাকতেন। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর দেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়।’
‘জাতির পিতা একটি কথা সবসময় বলতেন, ভিক্ষুক জাতির কোনো ইজ্জত থাকে না। আসলে আমাদের ভিক্ষুক জাতিতে পরিণত করা হয়েছিল।’
আওয়ামী লীগ ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশকে আবারও উন্নয়নের পথে পরিচালনা শুরু করে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। ২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগ টানা ক্ষমতায় থাকায় দেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘জনগণ আমাদের ওপর আস্থা রেখেছে, বিশ্বাস রেখেছে, বার বার ভোট দিয়েছে। সরকার গঠন করতে পেরেছি বলেই আজ আমরা বাংলাদেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে আনতে পেরেছি।’