বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ধনী দেশ থেকে বেশি সুবিধা আদায়ে সরব এলডিসি

  •    
  • ২৪ নভেম্বর, ২০২১ ১৭:৩৫

জেনেভায় ডব্লিউটিওর মন্ত্রিপর্যায়ের দ্বাদশ সম্মেলনে এবার মূল এজেন্ডা থাকবে করোনায় দেশগুলোর ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ঐক্যবদ্ধ আওয়াজ। এলডিসি থেকে বের হওয়ার পর নতুন উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য সুবিধা আদায়ের বিষয়ে নেতৃত্ব দেবে বাংলাদেশ।

করোনাকেন্দ্রিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ধনী দেশগুলো থেকে এবার বেশি বাণিজ্য, সেবা ও প্রযুক্তিগত সুবিধা চাইবে স্বল্পোন্নত দেশগুলো (এলডিসি)।

বিভিন্ন যৌক্তিক সুবিধা পেতে ঐক্যবদ্ধ ও সরব হচ্ছে এ তালিকার ৪৭টি দেশ। বাংলাদেশসহ উত্তরণ স্তরে থাকা বিশ্বের ছোট-বড় অর্থনীতির ১৬টি দেশও রয়েছে এ তালিকায়।

স্বল্পোন্নত দেশগুলো তাদের এই অবস্থান জানান দেবে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মন্ত্রিপর্যায়ের দ্বাদশ সম্মেলনে, সংক্ষেপে যা ‘এমসি-১২’ নামে পরিচিতি পাচ্ছে।

৩০ নভেম্বর থেকে সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় চার দিনের এ সম্মেলন শুরু হচ্ছে। এতে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশসহ বিশ্বের মোট ১৬৪টি দেশ।

বর্তমানে এলডিসির সমন্বয়ক হচ্ছে আফ্রিকার দেশ চাদ। তবে এলডিসি থেকে বের হওয়ার পর নতুন উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য সুবিধা আদায়ের বিষয়ে ডব্লিউটিওর সম্মেলনে নেতৃত্ব দেবে বাংলাদেশ।

জেনেভায় ডব্লিউটিওর এই সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির নেতৃত্বে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধিসহ বাংলাদেশের চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল যোগ দিচ্ছেন।

এ সম্মেলনে এবার মূল এজেন্ডা থাকবে করোনায় দেশগুলোর ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ঐক্যবদ্ধ আওয়াজ।

এ আলোচনায় আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, এশিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার ধনী দেশগুলোও। ফলে এ সম্মেলনে এলডিসিসহ ধনী-দরিদ্র সব দেশের জন্য এটিই আলোচনার প্রথম ও অভিন্ন আলোচ্য।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য থেকে যাতে ডব্লিউটিওর ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন এবং টেকনোলজি ট্রান্সফার কর্মসূচির আওতায় প্রদেয় সুবিধাগুলোর পরিধি বাড়ানো যায় এবং তা প্রাপ্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়, সে লক্ষ্যে জোটবদ্ধ আওয়াজ তুলবে এলডিসি এবং এলডিসি থেকে উত্তরণের পর্যায়ে থাকা দেশগুলো, যেখানে বাংলাদেশ থাকবে নেতৃস্থানীয় ভূমিকায়।

এ ছাড়া করোনা ভ্যাকসিনের প্রতিষেধক এবং এর মেধাস্বত্ব যেন উন্নত দেশগুলো আটকে না রেখে সক্ষম অন্যান্য উৎপাদনকারী দেশগুলোর জন্য উন্মুক্ত করে দেয়, তারও জোরালো দাবি তোলা হবে।

বর্তমানে এলডিসিভূক্ত ৪৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশসহ ১৬টি দেশ উত্তরণ স্তরে রয়েছে। এসব দেশ এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ পরবর্তী সময় ডব্লিউটিওর বিদ্যমান শুল্ক সুবিধা বহাল রাখা-না-রাখা ইস্যুতেও সরব হবে।

ওষুধ উৎপাদনে মেধাস্বত্ব থেকে অব্যাহতি পেয়ে আসছে বাংলাদেশ। ওষুধের ক্ষেত্রে স্বল্পোন্নত দেশগুলো এ সুবিধা ২০৩৩ সাল পর্যন্ত পাবে। কিন্তু এলডিসি থেকে উত্তরণের পর এসব সুবিধা আর থাকবে না। ফলে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়বে। শুধু মেধাস্বত্ব সুবিধা প্রাপ্তিতেই নয়, উত্তরণের পর রফতানি বাজারও নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ শুল্ক বাড়বে।

এভাবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাড়তি শুল্কের চাপে পড়বে স্বল্পোন্নত দেশগুলো। এমন পরিস্থিতিতে পণ্য রপ্তানিতে চাপমুক্ত থাকতে উত্তরণকারী দেশগুলোর সম্মেলনে অবস্থানও হবে অভিন্ন।

অন্যদিকে বিশ্বের উন্নত দেশগুলো তাদের দেশের মৎস্য খাতে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিয়ে থাকে। বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ ও সামুদ্রিক মৎস্য আহরণের ক্ষেত্রে মাছ ধরার ট্রলারকে বিনামূল্যে তেল দেয়া হয়। বিশেষায়িত ট্রলার তৈরিতেও ঋণ সুবিধা দেয়া হয়। বেশি মৎস্য আহরণের লক্ষ্যে খাতসংশ্লিষ্ট অবকাঠামো উন্নয়ন, গবেষণায়ও ভর্তুকি দেয় দেশগুলো। এর ফলে এসব দেশ অনেক বেশি মৎস্য আহরণ করে। এটি ভৌগলিক পরিবেশ-প্রতিবেশ এবং স্বল্পোন্নত ও দরিদ্র দেশগুলোর জন্য হুমকি।

এ ধরনের অনিয়ন্ত্রিত মৎস্য আহরণ বন্ধে এ খাতে ভর্তুকি তুলে দেয়া এবং দুর্বল দেশগুলোকে এ খাতের সক্ষমতা উন্নয়নে প্রযুক্তিগত সুবিধা দিতে জোর দাবি তুলবে স্বল্পোন্নত দেশগুলো।

ওই সম্মেলনে বাংলাদেশ কোন কোন বিষয় উত্থাপন করবে, এলডিসিভূক্ত দেশগুলোর ভূমিকা কী হবে, শুল্ক সুবিধা প্রদানকারী ধনী দেশগুলোর ভূমিকা কেমন থাকবে এবং তাদের থেকে কী ধরনের ফলাফল আশা করা হচ্ছে- এমন প্রশ্ন তোলা হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের কাছে।

এর জবাবে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ নিউজবাংলাকে বলেন, এবারের ডব্লিটিও মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্সে তিনটি বিষয় গুরুত্ব দেবে বাংলাদেশ। এটি সব এলডিসিরও কমন ইস্যু। বিষয়গুলো হলো: কোভিড-১৯ রিকভারি, এলডিসি গ্রাজুয়েশন সাবমিশন এবং ফিশারিজ সাবসিডি।

এলডিসি গ্রাজুয়েশন সাবমিশন সম্পর্কে বাণিজ্য সচিব জানান, গ্রাজুয়েশনের পর ১২ বছর জিএসপি সুবিধার প্রস্তাব ছিল এলডিসি গ্রুপের, যা পরে ৬-৯ বছরে নামিয়ে আনা হয়েছে। এই সম্মেলনে সেটি আদায়ে চেষ্টা থাকবে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের এই দাবির সঙ্গে উত্তরণকারী দেশগুলো ছাড়াও সব এলডিসিরাই থাকবে। কারণ বাংলাদেশ যদি উত্তরণের পর চলমান সুবিধা ৯ বছর ভোগ করতে পারে, তাহলে বাংলাদেশকে মডেল দেখিয়ে একই রকম সুবিধা এলডিসিভূক্ত অন্যান্য দেশগুলোও ভোগ করতে পারবে।’

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হাফিজুর রহমান এ প্রসঙ্গে নিউজবাংলাকে বলেন, এবারের সম্মেলনে আলোচনার বিষয়বস্তু হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কিত বাণিজ্য, সেবা ও প্রযুক্তিগত অগ্রাধিকার সুবিধা প্রাপ্তি এবং এ ক্ষেত্রে অসামাঞ্জস্য থাকলে তা সমাধানে করণীয় নির্ধারণের নানা দিক। এরপর সেখানে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর আলোচনার ভিত্তিতে যেটা চূড়ান্ত হবে, সেটাই সিদ্ধান্ত আকারে আসতে পারে।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কার্যালয়

হাফিজুর রহমান বলেন, তবে মোটাদাগে কোভিড-১৯ রিকভারি, এলডিসি গ্রাজুয়েশন সাবমিশন এবং ফিশারিজ সাবসিডি’ এই তিনটি ইস্যুই গুরুত্ব পাবে।

তিনি জানান, সম্মেলনে মূল এজেন্ডার বাইরে সাইডলাইনে আলোচনা হতে পারে এলডিসি প্রেফারেন্সিয়াল ইস্যু, রুলস অফ অরিজিনের শর্ত শিথিল, এলডিসিদের জন্য সার্ভিস ওয়েভার বৃদ্ধি, ই-কমার্সসহ ডব্লিউটিও সংস্কারের মতো আরও কিছু বিষয়ে।

এক প্রশ্নের জবাবে ডব্লিউটিও সেলের এই মহাপরিচালক জানান, ফিশারিজ ভর্তুকির ক্ষেত্রে অনেক জায়গায় বিধিনিষেধ আসবে, অনিয়ন্ত্রিত সামুদ্রিক মৎস্য আহরণের ক্ষেত্রে ভর্তুকি দিতে পারবে না। ওভার ফিশিং, স্টক ফিশিং বা সাসটেইনেবল লেভেলের চেয়ে বেশি ফিশিং হয়ে গেছে এমন ক্ষেত্রে ভর্তুকি দিতে পারবে না। ওভার ক্যাপাসিটি বা অধিক সক্ষমতা থাকলেও ভর্তুকি দেয়া যাবে না। আলোচনায় বাংলাদেশ এ দাবি তুলবে। পাশাপাশি অন্যদের মতো বাংলাদেশও এই সক্ষমতা উন্নয়নে প্রযুক্তিগত সুবিধা দাবি করবে।

এলডিসির এসব দাবির বিষয়ে উন্নত দেশগুলোর মনোভাব কী জানতে চাইলে হাফিজুর রহমান বলেন, গত প্রায় দুই বছর বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট মন্দায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে স্বল্পোন্নত দেশগুলো। এমন পরিস্থিতিতে সংস্থাটির প্রভাবশালী সদস্যরা এরই মধ্যে নিম্ন আয়ের দেশগুলোর এলডিসি থেকে উত্তরণের পরও সেসব দেশকে বিশেষ কোনো বাণিজ্য সুবিধা দেয়া যায় কিনা, সে ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করছে।

এ বিভাগের আরো খবর