বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মেয়র আব্বাসকে শহরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা

  •    
  • ২৪ নভেম্বর, ২০২১ ১৭:১৬

রাজশাহীতে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপনের বিরোধিতা করায় কাটাখালীর পৌর মেয়র আব্বাস আলীকে শহরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা ও তাকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা।

রাজশাহীতে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপনের বিরোধিতা করায় কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা আব্বাস আলীকে শহরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে সাবেক ছাত্রলীগ ফোরাম।

নগরীতে বের করা বিক্ষোভ মিছিলে এ ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি। সেই সঙ্গে মেয়র আব্বাসকে দল থেকে বহিষ্কার ও শাস্তির আওতায় আনার দাবিও জানান সংগঠনের নেতারা।

রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শফিকুজ্জামান শফিক, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইশতিয়াক আহমেদ লিমনের নেতৃত্বে সাহেববাজার এলাকায় বিকেল সাড়ে চারটার দিকে এই মিছিল বের হয়। সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে মিছিল শেষে হয় প্রতিবাদ সমাবেশ। এ সময় আব্বাসের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়।

এর আগে মেয়র আব্বাসের বক্তব্যের প্রতিবাদে নগরীতে কয়েকটি মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। মেয়রকে বহিষ্কার ও গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়েছে এসব কর্মসূচি থেকে।

সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে বুধবার সকাল ১০টার দিকে মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ব্যানারে আয়োজিত এই কর্মসূচি থেকে মেয়র আব্বাসের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার ও দল থেকে বহিষ্কারের দাবি ওঠে।

বক্তব্য রাখেন মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান, সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিউল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম মতিন ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন প্রামাণিক।

সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার ও সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইশতিয়াক আহমেদ লিমন।

মেয়র আব্বাসের নিজ পৌর এলাকা কাটাখালীতেও এদিন বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিক্ষোভ করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলী

বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে মেয়র আব্বাসের বিরুদ্ধে দ্রুত সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি তাকে গ্রেপ্তারেরও দাবি জানানো হয়।

আওয়ামী লীগ নেতা মোতাহার হোসেন বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তির জন্য জন্য তার বিরুদ্ধে দ্রুত সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হবে। সেই সঙ্গে তাকে গ্রেপ্তার করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে আমরা আজ কর্মসূচি পালন করেছি। আগামীকালও কর্মসূচি পালন করা হবে। আমরা চাই দ্রুত সময়ের মধ্যে তাকে শাস্তির আওতায় আনা হোক।’

কাটাখালী পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক জনি ইসলাম বলেন, ‘আমরা চাই তার বিরুদ্ধে দ্রুত সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হোক এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাচ্ছি, তাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হোক। স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর কাছে দাবি করছি, মেয়র আব্বাসকে সরিয়ে দ্রুত এখানে সরকারি কোনো কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হোক।’

মেয়র আব্বাসের অডিও ইস্যুতে কাটাখালী এলাকায় উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। সকাল থেকে কাটাখালী বাজারে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বিক্ষোভ চলাকালে বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা কাটাখালী আব্বাস চত্বর ভাঙচুরের চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়।

এ সময় আব্দুল আওয়াল নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে ধরে থানায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ। তবে বিক্ষোভকারীরা এ সময় রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কে বসে প্রতিবাদ করে। পরে পুলিশ আওয়ালকে ছেড়ে দিলে তারা শান্ত হয়। বেলা দেড়টার দিকে বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষ করে আন্দোলনকারীরা কাটাখালী বাজার ত্যাগ করেন।

আব্বাস আলী রাজশাহীর কাটাখালী পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক। ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে তিনি প্রথমবার মেয়র নির্বাচিত হন। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন।

ঘরোয়া একটি আলোচনায় মেয়র আব্বাস বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপনের বিরোধিতা করে কথা বলেন। গত সোমবার এই আলোচনার অডিও ফেসবুকে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

১ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের বক্তব্য শোনা যাচ্ছে, তিনি একজনকে বলছেন, ‘সিটি গেট আমার অংশে। …ফ্রার্মকে দিয়েছে তারা বিদেশি স্টাইলে সাজিয়ে দিবে; ফুটপাত, সাইকেল লেন টোটাল আমার অংশটা। কিন্তু একটু থেমে গেছি, গেটটা নিয়ে। একটু চেঞ্জ করতে হচ্ছে… যে ম্যুরালটা দিয়েছে বঙ্গবন্ধুর সেটা ইসলামি শরিয়ত মতে সঠিক নয়। এ জন্য আমি ওটা থুব না (রাখব না), সব করব তবে শেষ মাথাতে যেটা… ওটা (ম্যুরাল)।’

মেয়র আব্বাস আলী বলছেন, ‘আমি দেখতে পাচ্ছি, ম্যুরালটা ঠিক হবে না দিলে। আমার পাপ হবে; তো কেন দিব, দিব না। আমি তো কানা না, যেভাবে বুঝাইছে তাতে আমার মনে হয়েছে, ম্যুরালটা হলে আমার ভুল করা হবে।

‘এ খবরটা যদি যায় তাহলে আমার রাজনীতির বারোটা বাজবে যে এই ম্যুরাল দিছে না। তাহলে বঙ্গবন্ধুকে খুশি করতে গিয়ে… আল্লাহকে নারাজ করব নাকি। এ জন্য কিছু করার নাই। মানুষকে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে, আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করা যাবে না।’

মেয়রের অডিওটি কোন সময়ে বা কাদের সঙ্গে আলাপের সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে কথা বলতে তার মোবাইলে কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি সাড়া দেননি। পরিচয় জানিয়ে তাকে এসএমএস করা হলেও জবাব দেননি মেয়র আব্বাস।

রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) অনিল কুমার সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মেয়র আব্বাসের অডিওর বিষয়ে আমরা অ্যাকশনে যাচ্ছি। এ বিষয়ে আমরা কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলেছি। কেন্দ্রীয় নেতাদের জানিয়েছি। তারা শাস্তিমূলক কী ব্যবস্থা নেয়া হবে সেটি জানাবেন।’

বহিষ্কার হতে পারেন কি না, জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘এটি কেন্দ্র থেকেই নিশ্চিত করা হবে। তবে আমি এবং জেলার সেক্রেটারি কথা বলে কেন্দ্রকে তার বিষয়টি জানিয়েছি। এখন কেন্দ্র থেকে কী জানাচ্ছে, সেটির জন্য একটু অপেক্ষা করতে হবে।’

ফেসবুকে মঙ্গলবার রাতে মেয়র আব্বাস দাবি করেন, ছড়িয়ে পড়া অডিওটি এডিট করা। এ রকম কথা তিনি বলেননি।

এ বিভাগের আরো খবর