প্রতিদিনের মতো দুপুরে মাকে খাইয়ে বাড়ি থেকে বের হন হরিপদ সাহা। এরপর যান কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দ মো. সোহেলের অফিসে।
এই যাওয়াই শেষ। সেখানে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হন হরিপদ। হয়ে গেছে শেষকৃত্যও। তবে প্রায় ১০৩ বছর বয়সী রেনুবালা সাহা সেই সংবাদ এখনও জানেন না।
হরিপদর বাড়ি নগরীর সাহাপাড়ায়। তিনি ১৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন। সবসময় সোহেলের সঙ্গে থাকতেন।
প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনওয়ারুল আজিম নিউজবাংলাকে জানান, গত সোমবার বিকেল ৪টার দিকে কাউন্সিলর সোহেল সুজানগরে তার কার্যালয়ে বসে ছিলেন। এ সময় মুখোশ পরা ১৫ থেকে ২০ জন সাতটি মোটরসাইকেলে এসে তাকে গুলি করে। এতে কাউন্সিলর সোহেল লুটিয়ে পড়েন।
এ সময় গুলিবিদ্ধ হন হরিপদ সাহা, পাথুরীয়াপাড়ার মো. রিজু ও মো. জুয়েল এবং সুজানগর এলাকার সোহেল চৌধুরী ও মাজেদুল।
স্থানীয়রা তাকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে টিক্কারচর শ্মশানে তার শেষকৃত্য হয়েছে।
রেনুবালার ছয় মেয়ে ও এক ছেলে। হরিপদ ছিলেন সবার ছোট। পাঁচ মাস আগে হরিপদের স্ত্রী হৃদরোগে মারা যান। মায়ের সেবা-যত্ন নিঃসন্তান হরিপদই করতেন।
প্রতিবেশী দুলাল সাহা বলেন, ‘আমাদের এলাকায় যে কারো বিপদ হুনলে হরিপদ আগাইয়া যাইত। সকালে ঘুম থেকে উইঠা মারে সাফ কইরা দিনের কাম শুরু করত। মা ছাড়া কিচ্ছু বুঝত না।’
দুই দিন ধরে ছেলে বাড়ি ফিরছে না রেনুবালার। বাড়িতে কেউ গেলেই তার দিকে তাকিয়ে থাকেন। ইশারায় জিজ্ঞেস করেন হরিপদ কোথায়।
তার মেজ বোন বুলু বলেন, ‘সোমবার গোলাগুলির ঘটনা শুনে এগিয়ে যাই। পরে দেখি আমার ভাইকে হাসপাতাল নিতাছে। এরপরে রাইতে হুনি আমার ভাই মইরা গেছে। আমার মা এহনও জানে না আমার ভাই মইরা গেছে।’