টানা ১৪ বারের মতো সেরা করতাদার সম্মাননা পাওয়া ‘নীরব ব্যবসায়ী’ কাউছ মিয়া জানালেন, দেশ ভালো চলছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটছে। আর দেশ ভালো আছে বলে ভালো আছেন তিনিও।
রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে বুধবার ২০২০-২১ করবর্ষে সেরা ১৪১ জন সেরা করদাতাকে সম্মাননা দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। ব্যবসায়ী ক্যাটাগরিতে সেরা করদাতার পুরস্কার পেয়েছেন হাকিমপুরী জর্দার স্বত্বাধিকারী কাউছ মিয়া।
পুরস্কার নেয়ার পর নিউজবাংলাকে প্রতিক্রিয়া জানালেন স্বল্পভাষী কাউছ মিয়া। বললেন, ‘দেশ ভালো আছে, আমি ভালো আছি। দেশ খারাপ থাকলে আমি খারাপ থাকি। ব্যবসা বাড়ছে। আমার ব্যবসা ভালো হয়েছে। তাই আমি বেশি কর দিয়েছি।’
যাদের বেশি সম্পদ আছে তাদের বেশি করে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে কাউছ মিয়া বলেন, ‘এখন আগের চেয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য বেশি প্রসার হচ্ছে। মানুষের আয়ও বাড়ছে। তাই যাদের কর দেয়ার সামর্থ আছে, তাদের সকলকে কর দেয়া উচিত।’
কাউছ মিয়া ১৯৯৮ সাল থেকেই দেশের সর্বোচ্চ করদাতার একজন। হাকিমপুরী জর্দার স্বত্বাধিকারী এই ব্যবসায়ীর জন্ম ১৯৩১ সালের ২৬ আগস্ট চাঁদপুর শহরে। বাবা আব্বাস আলী মিয়া ব্যাপারী ও মা ফাতেমা খাতুন। পূর্বপুরুষরা তৎকালীন ত্রিপুরা রাজ্যে বাস করতেন।
নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নের সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটে কাউছ মিয়ার। যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে কিশোর বয়সেই চাঁদপুর শহরে ব্যবসায়ী হিসেবে পেশাগত জীবন শুরু করেন।
সে সময় তিনি ১৮টি ব্র্যান্ডের বিস্কুট, সাবান ও সিগারেটের এজেন্ট হন। পরে আলোচনায় আসেন তামাক ব্যবসা দিয়ে। তার হাকিমপুরী জর্দা দেশে এক নামে পরিচিত হয়ে ওঠে।
২০ বছর ব্যবসা করার পর ১৯৭০ সালে নারায়ণগঞ্জে এসে ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে ৪০টি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কাউছ মিয়া। আগা নবাব দেউড়ীতে থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন।
একেবারে তৃণমূল থেকে উঠে আসা এই ব্যবসায়ী সরকারকে কর দিতে শুরু করেন ১৯৬৮ সাল থেকে। ৬৩ বছর ধরে সততা, আন্তরিকতা ও স্বপ্রণোদনার স্বীকৃতিস্বরূপ কাউছকে জাতীয় রাজস্ব খাতের গুরুত্বপূর্ণ অ্যাওয়ার্ড সিআইপি মর্যাদায় ভূষিত করা হয়েছে।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে কাউছ মিয়াকে ঢাকা জেলার ‘কর বাহাদুর’ পরিবার হিসেবে স্বীকৃতি দেয় সরকার।
বয়স ৯০ পেরিয়েছে আগেই। তবে আগের মতই সচল কাউছ মিয়া। বললেন, ‘এই ৯২ বছর বয়সেও আমি নিয়মিত অফিস করি। আমার ব্যবসাগুলো দেখি। সকাল ১০টায় অফিসে আসি, আর রাত ৮টায় কাজ শেষ করি। পরিশ্রম, অধ্যবসায়ের কারণেই আজকে আমার এই সফলতা।’