জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল স্থাপনে আপত্তি তোলা নিয়ে ছড়িয়ে পড়া অডিও এডিট করা বলে দাবি করেছেন রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলী।
ঘটনাটিকে ষড়যন্ত্র দাবি করে নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দেন তিনি।
ফেসবুকে মঙ্গলবার অডিও ভাইরাল হওয়ার পর মেয়রের সঙ্গে যোগাযোগের নানা চেষ্টা করা হয়, তবে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে রাতে তিনি ফেসবুকে পোস্ট দেন।
ওই পোস্টে আব্বাস লেখেন, ‘গতকাল থেকে কিছু সংবাদমাধ্যম ও ফেসবুকে আমার কথোপকথনের একটি অডিও ব্যাপকভাবে প্রচার করা হচ্ছে। অডিওটি সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনুন। আপনারা বুঝতে পারবেন অডিওটি এডিট করে তৈরি করা হয়েছে।
‘আমি কখনো কারও সামনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালসহ গেট নির্মাণ করা হবে না কিংবা কেউ ম্যুরাল নির্মাণ করলে বাধা দেয়া হবে, এ রকম কথা বলিনি।’
মেয়র আরও লেখেন, ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে লালন করি এবং মমতাময়ী জননী বাংলাদেশের সফল প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার দেখানো পথে একজন সাধারণ কর্মী হয়ে পৌরসভার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি।’
আব্বাস পৌরসভা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক। তিনি জেলা আওয়ামী লীগেরও সদস্য।
ফাঁস হওয়া ১ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের বক্তব্যে আব্বাসকে বলতে শোনা যায়, ‘সিটি গেট আমার অংশে…ফ্রার্মকে দিয়েছে তারা বিদেশি স্টাইলে সাজিয়ে দিবে; ফুটপাত, সাইকেল লেন টোটাল আমার অংশটা, কিন্তু একটু থেমে গেছি, গেটটা নিয়ে। একটু চেঞ্জ করতে হচ্ছে…যে ম্যুরালটা দিয়েছে বঙ্গবন্ধুর, সেটা ইসলামি শরিয়ত মতে সঠিক নয়। এ জন্য আমি ওটা থুব না (রাখব না), সব করব, তবে শেষ মাথাতে যেটা…ওটা (ম্যুরাল)।’
মেয়র আরও বলেন, ‘আমি দেখতে পাচ্ছি, ম্যুরালটা ঠিক হবে না দিলে। আমার পাপ হবে; তো কেন দিব, দিব না। আমি তো কানা না। যেভাবে বুঝাইছে তাতে আমার মনে হয়েছে, ম্যুরালটা হলে আমার ভুল করা হবে।
‘এ খবরটা যদি যায় তাহলে আমার রাজনীতির ১২টা বাজবে যে এই ম্যুরাল দিছে না। তাহলে বঙ্গবন্ধুকে খুশি করতে গিয়ে…আল্লাহকে নারাজ করব নাকি। এ জন্য কিছু করার নাই। মানুষকে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করা যাবে না।’
মেয়রের অডিওটি কোন সময়ে বা কাদের সঙ্গে আলাপের, সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি ও ১৩ নম্বর কাউন্সিলর আব্দুল মোমিন বোয়ালিয়া থানায় আব্বাস আলীর নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন।
একই আইনে যুবলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তহিদুল হক সুমান চন্দ্রিমা থানায় এবং ১৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন রাজপাড়া থানায় মামলার আবেদন করেন।
অডিও ফাঁসের ঘটনায় আব্বাসের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না, সে বিষয়ে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অনিল কুমার সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মেয়র আব্বাসের অডিওর বিষয়ে আমরা অ্যাকশনে যাচ্ছি। এ বিষয়ে আমরা কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলেছি। কেন্দ্রীয় নেতাদের জানিয়েছি। তারা শাস্তিমূলক কী ব্যবস্থা নেয়া হবে, সেটি জানাবেন।’
বহিষ্কার হতে পারেন কি না জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, ‘এটি কেন্দ্র থেকেই নিশ্চিত করা হবে, তবে আমি ও জেলার সেক্রেটারি কথা বলে কেন্দ্রকে তার বিষয়টি জানিয়েছি। এখন কেন্দ্র থেকে কী জানাচ্ছে, সেটির জন্য একটু অপেক্ষা করতে হবে।’
ঘরোয়া আলোচনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তি করার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় সম্প্রতি গাজীপুরের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।