সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি নেতা সম্পাদক আব্দুল মোমিন তালুকদার ওরফে খোকাকে একাত্তরে হত্যা, লুণ্ঠনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃতুদণ্ড দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
পলাতক থাকায় তার অনুপস্থিতিতেই এ রায় ঘোষণা করে আদালত।
এর আগে বিচারপতি শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল রায়ের জন্য বুধবার তারিখ নির্ধারণ করে দিয়েছিল।
গত ৩১ অক্টোবর এ মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে যেকোনো দিন রায় দেয়া হবে মর্মে সিএভি করে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন সুলতান মাহমুদ সীমন, মোখলেছুর রহমান বাদল, রেজিয়া সুলতানা চমন। আর আসামি পলাতক থাকায় তার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন রাষ্ট্র নিয়োজিত আবুল হাসান।
ট্রাইব্যুনালের রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন।
তিনি বলেন, ‘আব্দুল মোমিন তালুকদারের বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ ছিল। একটা অভিযোগ ছিল ২৪ এপ্রিল তারিখে। সেদিন সান্তাহারে প্রথম হানাদার বাহিনী আসে। ১৯৭১ সালের ২২ এপ্রিল তারিখে শান্তাহারে প্রথম পাকিস্তানী সেনারা আসে। সেদিন সে সেনাবাহিনীর সাথে মিলে তার দলবল নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের জমিদার সুরেন্দ্রনাথ দাসের বাড়িতে আক্রমণ করে। সেখানে তাকে এবং তার স্ত্রীসহ পরিবারের ৬ জনকে গুলি করে হত্যা করে। এ ছাড়া সেদিনই চারজন নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করে। এটাকে মাননীয় ট্রাইব্যুনাল গণহত্যা হিসেবে সাব্যস্ত করেছে এবং গণহত্যা হিসেবেই তার জাজমেন্টের আদেশ দেয়া হয়েছে।’
সীমন বলেন, ‘দ্বিতীয় অভিযোগ ছিল কাশিমালা যে গ্রামটি ছিল আদমদিঘী থানায়। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের লোকজন আসত। মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিত বলে সেখানে সেনাবাহিনী ও রাজাকাররা মোমিন তালুকদারের নেতৃত্বে অন স্পট দুজনকে হত্যা করে। অন্য তিনজনকে ধরে আদমদিঘী রেলস্টেশনে আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করে। সেটাও ট্রাইব্যুনাল সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করে। তার দায়েও সাজা দেয়া হয়েছে।’
এই আইনজীবী বলেন, ‘তৃতীয় অভিযোগ ছিল চার মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যার। তারা নিরস্ত্র ছিলেন। বাড়ি ফেরার পথে তাদের গ্রেপ্তার করে আদমদিঘী থানায় নেয়া হয়। এরপর সেখানে নির্যাতনের পর শ্মশানঘাটে নিয়ে হত্যা করা হয়। মোমিন তালুকদার তাকে নিজ হাতে গুলি করে হত্যা করেন।’
এই তিন অভিযোগই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হওয়ায় তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের রায় দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
এ মামলার তদন্ত শেষ করে ২০১৮ সালের ৩ মে প্রসিকিউশনের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
তদন্ত সংস্থা জানায়, একাত্তরে আটক, নির্যাতন, অপহরণ, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগসহ ১৯ জনকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে বগুড়া জেলার আদমদিঘী থানার কালাইকুড়ি গ্রামের আব্দুল মজিদ তালুকদারের ছেলে আব্দুল মোমিন তালুকদারের বিরুদ্ধে। তিনটি অভিযোগে তদন্ত হয়েছে।
১৯৭১ সালে মোমিন তালুকদার ছিলেন মুসলিম লীগের কর্মী। কিন্তু পাকিস্তান দখলদার বাহিনীকে সহযোগিতা করতে তিনি সশস্ত্র রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। আদমদিঘী থানার রাজাকার কমান্ডার হিসেবে তিনি বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ করেন। ১৯৭৮ সালে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। পরে আদমদিঘী উপজেলা বিএনপির সভাপতি হন।
মোমিন তালুকদার বর্তমানে বগুড়া জেলা বিএনপির সহসভাপতি এবং রাজশাহী বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তিনি বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন। মোমিন ২০০১ ও ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।