বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাসমালিকরা ‘গরিব’, তাই লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি

  •    
  • ২৪ নভেম্বর, ২০২১ ০৮:১৬

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব ও ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাজধানীর বেশির ভাগ বাসের মালিক গরিব। এ কারণে গাড়ি পুরোনো হলে তা সংস্কারের সক্ষমতা অনেকে রাখেন না। ফলে রাজধানীর বেশির ভাগ গাড়ির দশা লক্কড়ঝক্কড়।’

দিনের ট্রিপ শেষে মঙ্গলবার ভিক্টর পরিবহনের একটি বাস পার্কিংয়ে রাখা হয় রামপুরা ইউলুপের গোড়ায়। বাসের বাহ্যিক ও ভেতরকার চিত্র এক ঝলক দেখলে মনে হওয়া কঠিন, এটি যাত্রী পরিবহনের উপযুক্ত।

বাসের অগ্রভাগ ও পেছনের অংশ এবরোখেবড়ো। দুই পাশের জানালার বেশির ভাগের কাচ নেই। ফ্রেম বাঁকাচোরা। তেল চিটচিটে নোংরা আসন। কয়েকটি আসনের হাতল ভাঙা। একাধিক সিটের পেছনের অংশে স্ক্রু উঠে স্টিল প্লেট বাঁকা হয়ে গেছে, যাত্রীর নিরাপত্তার জন্য যা হুমকি।

এ পরিবহনের অন্যান্য বাসের একই অবস্থা।

প্রগতি সরণি রুটে চলাচলকারী যাত্রীবাহী তুরাগ পরিবহন, আকাশ, রাইদা, অনাবিল, মক্কা, অছিম, আসমানিসহ বেশির ভাগ গণপরিবহনের কোনো বাসেরই অবস্থা বিশেষ ভালো নয়।

ঢাকার ২৯৮টি রুটে চলাচলকারী আড়াই হাজার কোম্পানির ৩০ হাজারের বেশি যাত্রীবাহী বাসের বেশির ভাগের অবস্থা লক্কড়ঝক্কড়। উপায় না পেয়ে এসব বাসেই গাদাগাদি করে উঠতে হয় যাত্রীদের। ভাড়া বাড়ছে। অথচ বাসের সেবার মান কমছে।

বাংলাদেশে যাত্রী কল্যাণ সমিতিরি এক সমীক্ষায় দেখে গেছে, বর্তমানে সারা দেশে নিবন্ধিত ৩১ লাখ যানবাহনের সাথে পাল্লা দিয়ে অনিবন্ধিত, ভুয়া নম্বরধারী ও অযান্ত্রিক যান মিলিয়ে প্রায় ৫০ লাখ যানবহান রাস্তায় চলে, যার ৭২ শতাংশ ফিটনেস অযোগ্য।

ঢাকা মহানগরীতে পরিবহন পরিচালনা ও রুট পারমিট ইস্যুর দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা মেট্রো আঞ্চলিক পরিবহন কমিটি বা মেট্রো আরটিসি। এই কমিটিতে পেশাদার কোনো লোকজন নেই, নেই কোনো যাত্রী প্রতিনিধি। প্রভাবশালী মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের কয়েকজন নেতা এই কমিটি পরিচালনা করছেন। ঢাকা মহানগরীর পরিবহন পরিচালনায় সেবার মান তাদের দেখার কথা। কিন্তু পরিবহন সেবার মান উন্নয়নে এই কমিটির কার্যত কোনো ভূমিকা নেই৷

বাসমালিকরাও অনেকটা স্বেচ্ছাচারী আচরণ করছেন। তারা মুনাফাকেই বড় করে দেখছেন। কম সেবা দিয়ে বাড়তি ভাড়া আদায়ে মালিকরা পরিকল্পিতভাবে দৈনিক চুক্তিভিত্তিক ইজারায় তাদের বাস-মিনিবাসের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন চালকদের হাতে।

চালকরা মালিককে প্রাপ্য দিয়ে দায় সারেন। এ কারণে গণপরিবহণের মান, যাত্রী সেবার মান, বাস টার্মিনালের পরিবেশ, যাত্রী ও গণপরিবহনসংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা তাৎক্ষণিক সমাধান হয় না।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব ও ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাজধানীর বেশির ভাগ বাসের মালিক গরিব। এ কারণে গাড়ি পুরোনো হলে তা সংস্কারের সক্ষমতা অনেকে রাখেন না। ফলে রাজধানীর বেশির ভাগ গাড়ির দশা লক্কড়ঝক্কড়।’

তিনি অবশ্য দাবি করেন, রাজধানীতে নতুন নতুন অনেক গাড়ি নামছে। বেশ কয়েকটি পরিবহন আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন সেবা দিচ্ছে। এ সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। শিগগিরই রাজধানীতে আর কোনো পুরোনো গাড়ির দেখা পাওয়া যাবে না।

ভাড়া বেশি হলেও সুবিধা কম কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, রাজধানীর গণপরিবহনে এখন বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশনের কাজ চলছে। এটা চূড়ান্ত হয়ে গেলে সড়কে কোনো লক্কড়ঝক্কড় বাস যেমন থাকবে না, তেমনি ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্যও বন্ধ হবে। তখন নির্ধারিত ভাড়ায় যাত্রীরা সর্বোচ্চ সেবা পাবেন।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মহাব্যবস্থাপক (পরিবহন) মো. মিজানুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আসলে গাড়ির নিবন্ধন ও ফিটনেসের বিষয়টি দেখে থাকে বিআরটিএ। সিটি করপোরেশন এখানে একটি সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করে। তবে আমাদের মোবাইল কোর্টের ম্যাজিস্ট্রেটরা যখন মাঠে নামেন, তখন শুধু জরিমানার কাজেই সীমাবদ্ধ থাকেন না, গাড়ির ফিটনেসের বিষয়গুলোও দেখভাল করেন। এ প্রক্রিয়ায় যখন যেটা চোখে পড়ে তা ডেভেলপমেন্টের আওতায় নেয়া হয়।’

এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপির) যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক উত্তর) আবু রায়হান মোহাম্মদ সালেহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পরিবহন সেবার মান উন্নয়নে মালিকদের ভূমিকাই মুখ্য। এ বিষয়ে মালিক ও শ্রমিক সংগঠনকে আরও কাজ করার বিষয় রয়েছে। সব মিলিয়ে সচেতনা বৃদ্ধি ও সমন্বিত প্রচেষ্টা ছাড়া আসলে কাঙ্ক্ষিত ফল আসবে না।’

এ বিভাগের আরো খবর