জ্বালানি তেলের দাম কমাতে নিজ দেশের পেট্রোলিয়াম ভাণ্ডার থেকে ৫ কোটি ব্যারেল তেল বাজারে ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
কয়েক দিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার এমন ঘোষণা দেবে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। মঙ্গলবার কিছুক্ষণ আগে প্রেডিডেন্ট বাইডেন নিজেই সেই ঘোষণা দিয়েছেন।
টুইটারে বাইডেন লিখেছেন, ‘আমেরিকান পরিবারদের জন্য তেল এবং গ্যাসের দাম কমাতে পদক্ষেপের কথা আজ ঘোষণা করছি। আমেরিকাবাসীদের জন্য স্ট্র্যাটেজিক পেট্রোলিয়াম রিজার্ভ (এসপিআর) থেকে ৫ কোটি ব্যারেল তেল ছাড়ব আমরা, যাতে তেল এবং গ্যাসের দাম সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসে।’
দেশে তেল ও গ্যাসের মতো জ্বালানির ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধি রুখতে এই পদক্ষেপ নিয়েছেন জো বাইডেন। এর জেরে সে দেশে জ্বালানির দাম কমবে বলে মনে করছেন অনেকে। পাশাপাশি, এতে বিশ্ব জুড়ে জ্বালানির দামেও প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।
তবে, বাইডেনের এই ঘোষণার পর বিশ্ববাজারে তেলের দাম না কমে উল্টো বেশ খানিকটা বেড়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
রাত ৮টা ৪৭ মিনিটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে রয়টার্স বলেছে, বাইডনের ঘোষণার পর তেলের দাম আবার প্রতি ব্যারেল ৮০ ডলার ছাড়িয়ে ৮১ ডলারে উঠেছে।
রয়টার্স জানায়, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য ভোক্তা দেশগুলো বাজারকে শীতল করার চেষ্টা করার জন্য ৫ কোটি ব্যারেল তেল ছেড়ে দেয়ার পদক্ষেপ নেওয়ার পরে মঙ্গলবার তেলের দাম ব্যারেল প্রতি আবার ৮১ ডলার হয়েছে।
তেলের দাম বাড়তি থাকায় এবং সেই সঙ্গে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বেশ সমালোচনা হচ্ছিল। এই অবস্থায় তেলের দাম কমাতে নিজ দেশের ভাণ্ডার থেকে তেল ধার দেয়ার ঘোষণা দিলেন বাইডেন।
পাইপলাইন সমস্যাসহ নানা কারণে জ্বালানি সংকট দেখা দিলে ওই নির্দিষ্ট সময়ের চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন দেশের তেলের ভাণ্ডার আছে, যা ‘স্ট্র্যাটেজিক পেট্রোলিয়াম রিজার্ভ' বা এসপিআর নামে পরিচিত৷
এই এসপিআর থেকে তেল কোম্পানিগুলোকে অশোধিত তেল ধার দেবে যুক্তরাষ্ট্র। এই তেল সুদসহ ফেরত দিতে হবে।
একই কাজ করতে চীন, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানকেও অনুরোধ করেছে বাইডেন প্রশাসন। জাপান ও ভারত এ বিষয়ে কাজ করছে বলে জানা গেছে। বাইডেনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ভারত তাদের ভাণ্ডার থেকে মঙ্গলবার ৫ মিলিয়ন ব্যারেল ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে।
এর আগে দাম কমাতে তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর সংস্থা ওপেক ও তার সহযোগী দেশগুলোকে (যেমন রাশিয়া) উৎপাদন বাড়াতে অনুরোধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু কাজ হয়নি।
বাইডেনের এই সিদ্ধান্তে আমেরিকার সাধারণ মানুষ স্বস্তি পাবেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আমেরিকায় গত সাত বছরে তেলের দাম বেড়ে সর্বোচ্চ হয়েছে। আমেরিকান অটোমোবাইল অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, সোমবার ১ গ্যালন তেলের দাম ৩ দশমিক ৪০৯ ডলার ছুঁয়েছে। অথচ বছরখানেক আগেও এর দাম ছিল প্রতি গ্যালন ২ দশমিক ১১ ডলার।
বাইডেনের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে বিশেষজ্ঞরা। বিনিয়োগকারীদের পরামর্শদাতা সংস্থা এগেন ক্যাপিটালের কর্ণধার জন কিলডাফের বলেছেন, ‘তেলের দাম কমাতে এটি অত্যন্ত সময়োচিত পদক্ষেপ। শীতকালের আগে উৎপাদনে ঘাটতি মেটাতে এই অতিরিক্ত তেলের জোগান সহায়ক হবে।’
২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকেই বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও টানা বেড়েছে তেলের দাম। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় তা আরও ঊর্ধ্বমুখী হয়।
২৭ অক্টোবর অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮৫ ডলার ছাড়িয়ে ৮৫ দশমিক শূন্য ৭ ডলারে ওঠে। এরপর থেকে অবশ্য দাম কমতে থাকে।
৮ নভেম্বরের দর ছিল ৮২ দশমিক ৫ ডলার। টানা কয়েকদিন কমে ২০ নভেম্বর ৭৫ ডলারে নেমে এসেছিল। গত দুদিন ধরে তা আবার বাড়ছে।