নোয়াখালীর সুবর্ণচরের চর জুবিলী ইউনিয়নের দক্ষিণ কচ্ছপিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধ এলাকা দখল করে একটি চক্র গড়ে তুলেছে মাদ্রাসা। এই মাদ্রাসার কারণে কমছে স্কুলের শিক্ষার্থী। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অভিভাবক, শিক্ষকসহ স্থানীয়রা।
মঙ্গলবার সকালে এলাকাবাসী, বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানান, করোনা মহামারিতে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার সুযোগ নিয়ে একটি চক্র পাউবোর জায়গা দখল করে মদিনাতুল উলূম নূরানী তালিমুল কুরআন মাদ্রাসা নামে একটি নূরানী (কওমি) মাদ্রাসা গড়ে তোলে। বাণিজ্যিক এই মাদ্রাসা বানাতে কাটা পড়েছে বন বিভাগের অনেক গাছ।
স্থানীয়রা জানান, মাদ্রাসাটি সুকৌশলে দক্ষিণ কচ্ছপিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তাদের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করিয়ে নেয়।
দক্ষিণ কচ্ছপিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.আবুল হাসেম বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ের পাশে অবৈধভাবে মাদ্রাসা গড়ে তোলা হয়েছে। করোনার সময়ে অভিভাবকদের ভুল বুঝিয়ে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীকে সেখানে ভর্তি করিয়ে নেয় একটি চক্র।। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতি দেখা দিয়েছে। আমার নানা চেষ্টা করেও তাদেরকে বিদ্যালয়মুখী করতে পারছি না।’
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবুল বাসার, সাইফুল ইসলাম, কংকর চন্দ্র দাস ও সীমান্তী বালা দাস বলেন, এই মাদ্রাসায় তিন শতাধিক ছাত্রছাত্রী থাকলেও বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিকে কোনো শিক্ষার্থী নেই। প্রথম শ্রেণিতে ৮ জনের মধ্যে নিয়মিত একজন, দ্বিতীয় শ্রেণীতে ১৪ জনের মধ্যে নিয়মিত চারজন, তৃতীয় শ্রেণীতে ২১ জনের মধ্যে নিয়মিত তিনজন, চতুর্থ শ্রেণিতে ৩৫ জনের মধ্যে নিয়মিত ১৯ জন ও পঞ্চম শ্রেণিতে ৬০ জনের মধ্যে নিয়মিত ৩১ জন বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়। পুরো স্কুলে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৫৮।’
শিক্ষকরা জানান, এই বিদ্যালয় থেকে গত বছর আটজন ট্যালেন্টপুলসহ ১৪ শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছে।
স্থানীয় মফিজুল হক, আলী আহম্মদ ও নুর নবী বাহার বলেন, সরকারি বিদ্যালয়ের পাশে সরকারি সম্পত্তি দখল করে মাদ্রাসা করায় বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কমছে। এ অবস্থা চলমান থাকলে বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
ছাত্রছাত্রীমুখর বিদ্যালয় ফিরে পেতে সংশ্লিষ্টদের দ্রুত পদক্ষেপ চেয়েছেন তারা।
মদিনাতুল উলূম নূরানী তালিমুল কুরআন মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক (মুহতামিত) মাওলানা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওই জায়গাটি আমরা দখল সূত্রে ক্রয় করেছি। সেখানে অস্থায়ীভাবে মাদ্রাসাটি গড়ে তোলা হয়েছে। তবে আমরা ওই জায়গা থেকে বন বিভাগের কোনো গাছ কাটি নাই।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য ও দক্ষিণ কচ্ছপিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবদুল কাদের সেলিম বলেন, ‘মাদ্রাসাটি গড়ে তোলার শুরুতেই আমরা বাধা দিয়েছি। মাদ্রাসার মালিকানায় থাকা ব্যক্তিরা বলেছেন, এটা তারা অস্থায়ী ভিত্তিতে করছেন। তারা মাদ্রসার জন্য জায়গা ক্রয় করেছেন, শুকনো মৌসুমে নিজস্ব জায়গায় মাদ্রাসাটি সরিয়ে নিয়ে যাবেন। যেহেতু এখনো তারা মাদ্রাসা সরিয়ে নেননি, তাই শিগগিরই আমরা প্রশাসনকে লিখিত অভিযোগ দেব।’সুবর্ণচর উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আজিজুর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে তিনি অবগত ছিলেন না। বিষয়টি বিস্তারিত জেনে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা পরিদর্শন করে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে।’পাউবো নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সী আমির ফয়সাল জানান, তিনি এ বিষয়ে কোন অভিযোগ পাননি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেবেন।সুবর্ণচর উপজেলা বন কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন জানান, এ ঘটনা দুই বছর আগের। তবে বন বিভাগের গাছ কাটা হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।
সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৈতি সর্ববিদ্যা জানান, মাদ্রাসার কারণে সরকারি বিদ্যালয় হুমকির মুখে পড়লে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অভিযোগ জানালে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।