পিরোজপুরের নাজিরপুরে এক চা দোকানির ছাগল চুরি করে ভূরিভোজের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে।
তাদের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), উপজেলা চেয়ারম্যান ও থানাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ছাগলের মালিক আবদুল লায়েক ফরাজী।
স্থানীয়রা জানান, লায়েক উপজেলা সদরের আওয়ামী লীগ অফিসসংলগ্ন স্থানে চায়ের দোকানি। আর্থিক সংকটের কারণে ছাগল পালন করেন তিনি।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, গত শুক্রবার দুপুরে লায়েকের একটি ছাগল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসংলগ্ন এলাকা থেকে চুরি হয়। সেই ছাগলের চামড়া স্থানীয় চামড়া ক্রেতা বিশ্বনাথের কাছে পাওয়া যায় সোমবার।
দুপুরে চামড়াটি পাওয়ার পর বিশ্বনাথ জানান, চামড়াটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সুইপার বাশার শেখ তাকে দিয়েছেন।
বাশার শেখ বলেন, ‘চামড়াটি হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মচারীদের ভূরিভোজের জন্য জবাই দেয়া ছাগলের। স্যারেরা ছাগলটি গত শুক্রবার রাতে খেয়েছেন। আমি এ বিষয়ে বাজলে (অভিযুক্ত হলে) সব তথ্য ফাঁস করে দেব।’
ছাগলটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রান্না হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালে রান্নার কাজে থাকা খাদিজা বেগম। আর ওই রাতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার অফিসকক্ষে ভূরিভোজের আয়োজনটি করা হয় বলে জানিয়েছেন একাধিক অংশগ্রহণকারী।
ভূরিভোজে অংশ নেয়া একাধিক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তারা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ফজলে বারীর দাওয়াতে সেখানে গিয়েছিলেন। সেখানে পরিবেশন করা মাংস চুরি করা না কেনা ছাগলের তা তাদের জানা নেই।
ভোজে অংশ নেয়া এক নারী চিকিৎসক জানান, ‘ওই রাতে স্যার ফোন দিয়ে আমাকে সেখানে নিয়েছেন।’
প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করা সজল হোসেন হাওলাদার নামে একজন বলেন, ‘শুক্রবার দুপুরে সন্তান প্রসবের জন্য স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালের দোতলায় কেবিনের পাশের একটি কক্ষে অবস্থান করছিলাম আমি। এ সময় হাসপাতালের ঝাড়ুদার আবুল বাশারসহ তিনজন একটি খাসি দোতলায় হাসপাতালের কেবিনের একটি টয়লেটে রাখে ও জবাই দেয়।
‘আমি তাদের নিষেধ করলেও তারা একটি বঁটি দিয়ে তা জবাই করে বাজারের শপিং ব্যাগে নিয়ে যায়।’
নাজিরপুর উপজেলার ইউএনও ওবায়দুর রহমান জানান, ভুক্তভোগী আবদুল লায়েক ফরাজীর অভিযোগ পেয়েছি। তিনি উপজেলা চেয়ারম্যানকেও অভিযোগ দিয়েছেন।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘ছাগল চুরির একটি অভিযোগ জমা হয়েছে বলে শুনেছি। আমি থানায় ছিলাম না, তাই ওই বিষয়ে খোঁজ নেয়া হয়নি।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ফজলে বারী বলেন, ‘আমি গত সোমবার আমার শ্বশুরের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় এসেছি। এখন ব্যস্ত আছি, বাসায় ফিরে আপনাকে ফোন দেব।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকায় ছাগল হারানো অবশ্য নতুন কিছু নয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, গত ৬ মাসে হাসপাতালসংলগ্ন এলাকা থেকে প্রায় ১০টি ছাগল হারিয়েছে। তবে কীভাবে হারাচ্ছিল তা জানা ছিল না তাদের।