দল থেকে বহিষ্কারের পর জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র থাকবেন কিনা সেই আলোচনার মধ্যে ক্ষতিপূরণের দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন নগরবাসী।
৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দরা মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে বনমালা সড়কে বাঁশের খুঁটি গেড়ে ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।
তারা বলেন, ‘এই সড়কের জন্য জয়গা অধিগ্রহণ করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা বলেছিলেন মেয়র। কিন্তু তিনি যদি মেয়রই না থাকেন, আমরা ক্ষতিপূরণ পাব কীভাবে।’
বনমালা সড়কটি পড়েছে সিটি করপোরেশনের টঙ্গী জোন এলাকায়। স্থানীয়দের আন্দোলন প্রসঙ্গে এ জোনের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলতে বলেন। তবে প্রধান প্রকৌশলী ও মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ফোন না ধরায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ক্ষতিপূরণের দাবিতে সড়কে পোতা খুঁটি এদিন দুপুর ২টার দিকে সরিয়ে নেন আন্দোলনকারীরা। এর আগে তাদের সঙ্গে কথা বলেন জেলা প্রশাসকের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (দক্ষিণ) হাসিবুল আলম
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের যানজট এড়াতে বিকল্প সড়ক হিসেবে বনমালা রেললাইনের পাশে তৈরি করা হয়েছে প্রায় ৫০ ফুট প্রশস্ত সড়ক। গত জুন মাসে চালু হওয়া এই সড়ক দিয়ে টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর যেতে সময় লাগছে মাত্র ২০ মিনিট। এই সড়ক নির্মাণের সময় ১৭টি পরিবারের জমি অধিগ্রহণ করে সিটি করপোরেশন। তবে ভূমি অধিগ্রহণের কোনো নিয়ম-কানুন মানা হয়নি বলে অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্তদের।
বনমালা এলাকার বাসিন্দা মোস্তফা মিয়া বলেন, ‘আমার ৩ কাঠা জমি অধিগ্রহণ করেছে সিটি করপোরেশন। এ সময় তারা জমির কাগজপত্রও নেয়। জমির মূল্য ৯০ লাখ টাকা হলেও মেয়র দিয়েছেন মাত্র ১ লাখ টাকা।’
তিনি বলেন, ‘দল থেকে বহিষ্কার করার পর তিনি যদি মেয়র পদ হারান, তবে কে আমাদের ক্ষতিপূরণ দেবে। এ জন্য আমরা নিজেদের জায়গা পুনরায় দখল করছি।’
ফরহাদ হোসেন মোল্লা নামে একজন বলেন, ‘আমাদের পরিবারের প্রায় সাড়ে ৩৬ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। সিটি মেয়র বলেছিলেন, ক্ষতিপূরণ দেবেন। সরিয়ে নেয়ার সময় দোকান প্রতি মাত্র ৫০ হাজার টাকা দিয়েছে। বাকি টাকা আজও পায়নি ক্ষতিগ্রস্তরা।
আরেক বাসিন্দা জাহানারা বেগম বলেন, তার ১০টি রুম ভাঙা পড়েছে। একসময় নিজের বাড়িতে থাকলেও এখন তিনি অন্যের বাড়িতে ভাড়া থাকছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দা সুমন মোল্লা বলেন, ‘মেয়র বলেছিলেন আমাদের জমি কিনে দেবেন। কিন্তু তিনি যদি মেয়র না থাকেন, তাহলে আমাদের কী হবে। এ জন্য আমরা জায়গায় খুঁটি পুঁতে দখলে নেই।’
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (দক্ষিণ) হাসিবুল আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ক্ষতিপূরণের দাবিতে কয়েকটি পরিবার রাস্তার এক অংশে বাঁশের খুঁটি পুঁতে আটকে দেয়। সরকারি রাস্তা কারও আটকানোর সুযোগ নেই। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের মেয়র বরাবর আবেদন করে ব্যারিকেড তুলে নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছি। তারা আমাদের অনুরোধে সড়ক ছেড়ে দিয়েছে।’
এ বিষয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের টঙ্গী জোনের নির্বাহী কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আর রাস্তাগুলো সিটি করপোরেশনের জোন থেকে হয় না। আমরা এটার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নই। বিষয়টি নিয়ে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।’
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ডে ৮ হাজার বিঘা জমি, ৩২ হাজার বাড়িঘর ও দোকানপাট ভেঙে ৮০০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।