ময়মনসিংহ নগরীর কেওয়াটখালী থেকে গুমটি পর্যন্ত ১০টি রেলক্রসিং। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ২৬টি ট্রেন ৪৭ বার এসব ক্রসিং দিয়ে চলাচল করে।
শহরের ভেতর এত রেলক্রসিংয়ের কারণে প্রতিদিন যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। বছরের পর বছর নগরবাসীসহ নাগরিক আন্দোলনের নেতারা রেললাইন শহরের বাইরে সরিয়ে নেয়ার দাবি তুলছেন।
রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, রেললাইন সরানো একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ ছাড়া এটি সরানো সম্ভব না।
জেলা ট্রাফিক বিভাগ সূত্র জানায়, প্রতিবার ট্রেন পার হওয়ার সময় অন্তত পাঁচ মিনিট আগে সড়ক বন্ধ করে দেয়া হয়। সড়ক বন্ধ থাকায় দুই পাশে বিভিন্ন যানবাহন এলোমেলো দাঁড়িয়ে যায়। ব্যারিকেড খুললেও কমপক্ষে ১০ মিনিট যানবাহনের জট লেগে থাকে।
এক হিসাবে ১০টি রেলক্রসিংয়ে যানজটে পড়ে প্রতিদিন ৪৭০ মিনিট সময় ব্যয় হয় যানজটে, যা প্রায় ৮ ঘণ্টার সমান।
নগরবাসীর অভিযোগ, রেলক্রসিংয়ের কারণে সময়ের কাজ সময়ে করা যাচ্ছে না। দিনের বেশির ভাগ সময় লেগে থাকে যানজট। জনদুর্ভোগ লাঘবে রেললাইন শহরের বাইরে নেয়ার দাবি তোলেন তারা।
কেওয়াটখালী এলাকার বাসিন্দা আহম্মেদ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার বাসা থেকে ১০ মিনিট পর রেলক্রসিংয়ের অবস্থান। খাদ্যপণ্যের ডিলারশিপে মার্কেটিং ম্যানেজার হিসেবে কাজ করি। প্রতিদিন সকালে মোটরসাইকেল নিয়ে যাওয়ার সময় রেলক্রসিংয়ে আটকে থাকতে হয়। ট্রেন চলে গেলেও তীব্র যানজটের কারণে ১০ থেকে ১৫ মিনিটের ভোগান্তি নিয়মিত।’
একই এলাকার আফসর আলী বলেন, ‘আমাদের দুর্ভোগের কথা কেউ চিন্তা করে না। সম্প্রতি কেওয়াটখালী হয়ে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক প্রসূতি নারীকে ভর্তির জন্য অটোরিকশা করে নিয়ে যাচ্ছিল তার পরিবার। কিন্তু এই রেলক্রসিং পর্যন্ত যেতেই ট্রেনের কারণে অন্তত ১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়। ট্রেন চলে যাওয়ার পর যানজটের কারণে ওই নারীর রক্তক্ষরণ শুরু হয়। যানজট কমলে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়।’
জেলা নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক নূরুল আমীন কালাম বলেন, ‘নগরের ভেতরে রেলক্রসিংয়ের কারণে তীব্র যানজটে মানুষ অতিষ্ঠ। আশা করছি, রেল মন্ত্রণালয় ক্রসিংগুলো নগরের বাইরে স্থাপন করে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করবে।’
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল বলেন, ‘গত ৯ নভেম্বর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রামকৃষ্ণ মিশন রোডে যাচ্ছিলাম। নতুন বাজার রেলক্রসিংয়ের সামনে আসামাত্র ২০ মিনিট যানজটে আটকে যাই। এমন অবস্থা খুবই বিরক্তিকর।
‘নগরীর ভেতর দিয়ে চলা রেললাইনটি নগীর দক্ষিণ দিকে ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে সরিয়ে নেয়া প্রয়োজন। তা না হলে এই ভোগান্তির কোনো সমাধান নেই।’
ময়মনসিংহ ট্রাফিক বিভাগের পরিদর্শক (প্রশাসন) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘নগরের ভেতরের সবগুলো সড়ক অপ্রশস্ত। এর মধ্যে রেলক্রসিং। ময়মনসিংহ বিভাগ ঘোষণার পর থেকেই মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধু ট্রাফিক পুলিশ দিয়ে যানজট নিরসন করা যাচ্ছে না। এ জন্য অন্যত্র রেললাইন সরিয়ে নিতে হবে।’
এ বিষয়ে রেলওয়ের ময়মনসিংহের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী নারায়ণ প্রসাদ সরকার বলেন, ‘আমরা জানি রেলক্রসিংয়ের কারণে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। তবে রেললাইন সরানো অনেক কঠিন বিষয়। রেল মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিলে দীর্ঘদিনের এ সমস্যার সমাধান হবে।’