বন্ধ হয়ে যাওয়া ওপেক্স অ্যান্ড সিনহা টেক্সটাইল গ্রুপের ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণের অর্থ তুলতে তৎপর ব্যাংকগুলো।
দুই-একটি ব্যাংক আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছে। পাশাপাশি গ্রুপ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শুরু হয়েছে আলোচনা। দ্রুতই অর্থ ফিরে পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছে না।
এশিয়ার বৃহত্তম গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল শিল্প গ্রুপটির কাছে ব্যাংকগুলোর অনিয়মিত ঋণের পরিমাণ চার হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
চলতি বছরের জুন শেষে গ্রুপটির কাছে এবি ব্যাংকের ঋণ দাঁড়িয়েছে ৭০ কোটি টাকা। স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের কাছে ওপেক্স অ্যান্ড সিনহা গ্রুপের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৫০ কোটি টাকা। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের কাছে গ্রুপটির বকেয়া ঋণের পরিমাণ ৭০ কোটি টাকা। গত জুন শেষে পূবালী ব্যাংকে গ্রুপটির ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭৫ কোটি টাকা।
ঢাকা ব্যাংকের কাছে ওপেক্স গ্রুপের বকেয়া ঋণ জুন পর্যন্ত প্রায় ৬০ কোটি টাকা। একই সময় পর্যন্ত সিটি ব্যাংকে গ্রুপটির বকেয়া ঋণ ছিল ১৫০ কোটি টাকা। এ ছাড়া জুন পর্যন্ত মেঘনা ব্যাংকে ৪০ কোটি ও ট্রাস্ট ব্যাংকে ১২ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে গ্রুপটির।
রাষ্ট্রায়ত্ত, বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকের কাছে ঋণ রয়েছে সিনহা গ্রুপের। ঋণের টাকা উত্তোলনে নড়েচড়ে বসেছে কয়েকটি ব্যাংক।
এবি ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর তারিক আফজাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঋণের টাকা আদায়ের জন্য আমরা এনআই অ্যাক্ট অর্থাৎ দ্য নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্টে মামলা করেছি।’
তিনি বলেন, ‘মামলা করা ছাড়া উপায় ছিল না। আইনগত দিকেই এগোচ্ছে এবি ব্যাংক। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যু করা হয়েছে। সাধারণত চেক প্রত্যাখ্যাত হলে এনআই অ্যাক্টে মামলা করা যায়।’
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ওপেক্স অ্যান্ড সিনহা গ্রুপের অধিকাংশ ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘গ্রুপটির প্রধান আনিসুর রহমান সিনহা কাউকে প্রতিনিধি না করে তার সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নিজেই পরিচালনা করছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, এটাই গ্রুপটির আজকের এই দশার কারণ।’
ব্যাংক এশিয়ার এমডি মো. আরফান আলী বলেন, ‘এত বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলেও গ্রুপটির ব্যাংক ঋণ আদায় করা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। ব্যাংকগুলো সময়মতো ঋণের টাকা পেয়ে যাবে। কারণ এটা খুব বড় এবং ভালো শিল্প গ্রুপ। ইমেজ ধরে রাখতে ঋণ বাধা হবে না হয়তো।’
রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, ‘প্রায় ৪৫ হাজার কর্মচারীর পোশাক শিল্প কারখানাটি বন্ধ হয়ে যাওয়াটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা চাই এ ধরনের প্রতিষ্ঠান টিকে থাকুক।
‘কারণ একটি প্রতিষ্ঠান অনেক পরিশ্রমের মাধ্যমে এই পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে। প্রণোদনা দিয়ে হলেও এ ধরনের প্রতিষ্ঠান বাঁচানো প্রয়োজন।’
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা বলেন, ‘হঠাৎ করে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ ঘোষণায় ব্যাংক খাতে দুশ্চিন্তা বেড়েছে। এখন প্রতিষ্ঠানটি ঋণ পরিশোধ করছে খুবই ধীরগতিতে, তবে সমস্যা হয়তো মিটে যাবে। সেই উপায় বের করা হচ্ছে।’
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ওপেক্স অ্যান্ড সিনহা টেক্সটাইল গ্রুপের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান সিনহার মোবাইল ফোন নম্বরে একাধিকবার কল করলেও সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক
ওপেক্স গ্রুপের বিপুল পরিমাণ অনাদায়ি ঋণের বিষয়ে অবগত আছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে ঋণ পুনরুদ্ধার বা এ সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আবেদন করেনি কোনো ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন নির্বাহী পরিচালক বলেন, এক ডজনেরও বেশি ব্যাংকের কাছে ওপেক্সের অনাদায়ি ঋণ রয়েছে। বিষয়টি পর্যালোচনা করা হচ্ছে, তবে এখনও ওপেক্স গ্রুপ থেকে ঋণ পুনঃতফসিল বা সুদ মওকুফের আবেদন করেনি।
হঠাৎ করেই বন্ধ
তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনিসুর রহমান সিনহা ১৯৮৪ সাল থেকে ওপেক্স গ্রুপের অধীনে দুই ডজনেরও বেশি কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের গুণগত মানের পণ্যের কারণে দেশে-বিদেশে সুনাম অর্জন করে।
পোশাক খাতে এশিয়ার বড় এই প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরেই ব্যাংকিং খাতে বিপুল পরিমাণ ঋণসহ নানা জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল।
এরই ধারাবাহিকতায় বিশাল আর্থিক ক্ষতির কারণ দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটি গেল ১৯ অক্টোবর তাদের নারায়ণগঞ্জের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়।
এর আগের দিন ১৮ অক্টোবর গ্রুপটির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (প্রশাসন) বানিজ আলী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে কারখানাগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়।