বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মানহীন বাসে বাড়তি ভাড়া, কিশোরগঞ্জবাসীর দুর্ভোগের শেষ নেই

  •    
  • ২৩ নভেম্বর, ২০২১ ১০:০৬

গাজীপুরের কাপাসিয়া হয়ে ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রুটে যে দূরত্ব, ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ রুটেও দূরত্ব একই রকম। তবে দুই পথের বাসভাড়ার মধ্যে পার্থক্য আকাশ-পাতাল। সাধারণ মানের বাসে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত ভাড়া ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, কিন্তু কিশোরগঞ্জ-ঢাকা রুটের ভাড়া ন্যূনতম ২৭০ টাকা। এসব বাসে একটি আসন থেকে অন্যটির দূরত্ব খুবই কম। যাত্রীরা আরাম করে বসতে পারে না, হাঁটু ব্যথার অভিযোগ করছেন তারা।

ডিজেলের দাম বৃদ্ধির পর বাসভাড়া বেড়ে যত হয়েছে, আগে থেকেই তার চেয়ে বেশি আদায় করা বাসগুলো ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রুটে যাত্রীদের কাছ থেকে আরও বেশি টাকা আদায় করছে। কিন্তু প্রশাসন এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি, এমনকি বাস মালিকদের সঙ্গে আলোচনাও করেনি।

বাস মালিক সমিতির দাবি, আনুষ্ঠানিকভাবে ভাড়া এখনও বাড়েনি। তাহলে কেন, কোন হিসাবে বেশি নেয়া হচ্ছে- এই প্রশ্নের কোনো জবাব নেই।

দূরপাল্লার বাসে চড়া কতটা কষ্টদায়ক হতে পারে, তা কিশোরগঞ্জের মানুষ মাত্রই জানেন। বেশির ভাগ বাসেই আসনগুলো এত কাছাকাছি যে ঠিকমতো বসা যায় না। লম্বা দূরত্বের পথেও বাস চলে লোকালের মতো, যাত্রীও তোলা হয় আসনের অতিরিক্ত।

ডিজেলের দাম বাড়ানোর কারণে গত ৭ নভেম্বর বাস মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সঙ্গে বৈঠকের পর সড়ক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ ভাড়ার হার ঠিক করে দেয় কিলোমিটারপ্রতি ২ টাকা ১৫ পয়সা।

এই হারে ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ পর্যন্ত বিভিন্ন রুটে যত টাকা ভাড়া নেয়া হয়, আগে থেকেই যাত্রীদের কাছ থেকে এর চেয়ে বেশি আদায় করা হচ্ছিল। এখন নতুন করে টিকিটপ্রতি ৩০ থেকে ৫০ টাকা বাড়ানো হয়েছে।

বিভিন্ন পথ দিয়ে এই রুটে যে বাসগুলো চলাচল করে, তার মধ্যে গাজীপুরের কাপাসিয়া হয়ে যে দূরত্ব, ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ রুটেও দূরত্ব একই রকম। এই পথের বাসগুলোর মান কিশোরগঞ্জ রুটে চলা বাসের চেয়ে অনেক ভালো, কিন্তু কিশোরগঞ্জের রুটের তুলনায় ভাড়া অনেক কম।

ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে চলা এনা পরিবহনের আরামদায়ক আসনের বাসে ভাড়া নেয়া হয় ২৬০ টাকা, সাধারণ বাসের ভাড়া ১৪০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে।

কিন্তু ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রুটে গাজীপুরের কাপাসিয়া হয়ে চলা একেবারেই সাধারণ মানের বাসেও ভাড়া নেয়া হয় ২৭০ টাকা।

বাসভাড়া বাড়ানোর পর এই বিষয়গুলো সামনে এনে সমালোচনা করছেন যাত্রীরা। সেই সঙ্গে বাড়তি ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় প্রশাসনের সমালোচনাও করছেন তারা।

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মাইজকাপন এলাকার বাসিন্দা ফরহাদ হোসাইন। ঢাকার মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে ২৭০ টাকা দিয়ে টিকিট কিনে অনন্যা পরিবহনে এসে নামেন গাইটাল বাসস্ট্যান্ডে।

বাস থেকে নেমেই কাউন্টারে গিয়ে অভিযোগ করেন, আসন একটি থেকে অন্যটির দূরত্ব খুবই কম, তিনি বসার পর নড়াচড়া করতে পারেননি, হাঁটুর ব্যথা নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছে।

নিউজবাংলাকে ফরহাদ বলেন, ‘সেবার মানের নামে খবর নাই, খালি বাড়তি ভাড়া আদায় করেন পরিবহন মালিকরা।’

কাউন্টারে অভিযোগ করার পর কী বলা হয়েছে- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বেশি কথা বলিনি। কারণ কিছুদিন আগে একজন প্রতিবাদ করে লাঞ্ছিত হয়েছে আমার সামনেই।’

ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রুটে বাস চলে নানা দিক দিয়ে। কিশোরগঞ্জের একরামপুর ও গাইটাল বাসস্ট্যান্ড থেকে মহাখালী পর্যন্ত দুটি রুট দিয়ে বাস চলে। একটি রুট গাজীপুরের কাপাসিয়া দিয়ে জয়দেবপুর চৌরাস্তা হয়ে; অন্য একটি রুট নরসিংদীর পাঁচদোনা হয়ে চলে।

একরামপুর ও গাইটাল থেকে কাপাসিয়া হয়ে ঢাকার মহাখালী টার্মিনালের দূরত্ব ১১০ থেকে ১১২ কিলোমিটার। নরসিংদী হয়ে যেসব গাড়ি চলে, সেগুলোর দূরত্ব ১২০ থেকে ১২৫ কিলোমিটার।

একরামপুর থেকে মহাখালী পর্যন্ত চলা উজান-ভাটি আর গাইটাইল থেকে মহাখালী পর্যন্ত চলা অনন্যা ও অনন্যা ক্লাসিক ভাড়া নেয় ২৭০ টাকা। আর গাইটাল বাসস্ট্যান্ড থেকে ভৈরব হয়ে সায়েদাবাদ পর্যন্ত চলা যাতায়াত পরিবহনের ভাড়া নেয়া হয় ৩০০ টাকা।

করিমগঞ্জ উপজেলার চামড়াবন্দর থেকে নারায়ণগঞ্জের পঞ্চবটি পর্যন্ত চলে দুটি পরিবহন। একটি ভাটিবাংলা পরিবহন। অন্যটির নাম হাওরবিলাস। এই বাসগুলোতে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ৩০০ টাকা, যদিও দূরত্ব অনুযায়ী হওয়ার কথা ২৫০ কিলোমিটারের আশপাশে।

শাহপরান পরিবহন নামের একটি বাস যায় মিরপুর-১৪ নম্বরে। এস ইসলাম নামের একটি বাস চলে কামরাঙ্গীরচরে। যোগাযোগ নামের আরেকটি বাস চলে চাঁনখারপুলে। এগুলো ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত আদায় করে। প্রতিটি বাসেই ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেশি আদায় করা হয়।

তাড়াইল উপজেলার বাসিন্দা হাদিউল ইসলাম। বেসরকারি একটি মাদ্রাসায় চাকরি করেন। গাইটাল বাসস্ট্যান্ড থেকে যাবেন সায়েদাবাদ। কাউন্টার থেকে ৩০০ টাকায় টিকিট কিনেছেন যাতায়াত পরিবহনের। দূরত্ব ১৩০ কিলোমিটার। ভাড়া হওয়ার কথা সর্বোচ্চ ২৮০ টাকা।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা কিশোরগঞ্জবাসী যে ভাড়া দিয়ে ননএসি গাড়িতে যাতায়াত করি, অন্য জেলায় এই ভাড়া দিয়ে এসি গাড়িতে যাতায়াত করা যায়।’

বেশি ভাড়া আদায়ের ক্ষেত্রে যুক্তি দিতে গিয়ে দূরত্ব বেশি দেখাচ্ছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। গাইটাল বাসস্ট্যান্ড থেকে সায়েদাবাদ পর্যন্ত দূরত্ব ১৩০ কিলোমিটার হলেও যাতায়াত পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার আনিসুজ্জামান রিপন দাবি করেন, দূরত্ব ১৫৩ কিলোমিটার।

অন্যদিকে গাজীপুরের কাপাসিয়া হয়ে মহাখালী পর্যন্ত চলা বাস ১১০ থেকে ১১২ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করলেও কাউন্টার মাস্টার ওমর ফারুক এবং অনন্যা ক্লাসিকের মালিকদের একজন উবাইদুল হোসেন দাবি করেন, এই পথের দূরত্ব ১৩০ কিলোমিটার।

প্রতিটি বাসেই নির্ধারিত আসনের চেয়ে বেশি যাত্রী বসানোর অভিযোগ আছে। ফলে যাত্রীরা আরাম করে বসতে পারেন না।

কিশোরগঞ্জ পৌর শহরের চরশোলাকিয়া এলাকার বাসিন্দা, হাফিজুর রহমান। অনন্যা ক্লাসিক পরিবহনে গেছেন গাজীপুর। তিনি বলেন, ‘এই কোম্পানির বেশির ভাগ বাসে সিট বাড়িয়ে এমন অবস্থা করেছে যে একবার সিটে বসলে পরে আর নড়াচড়া করার কোনো উপায় থাকে না।’

৮০ কিলোমিটার দূরত্বে হাফিজুরের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করা হয়েছে ২৪০ টাকা। অথচ ভাড়া হয় ১৭০ টাকা।

ভুক্তভোগী এই যাত্রী বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত হার সারা দেশে কার্যকর হয় একভাবে আর কিশোরগঞ্জে এর ভিন্ন রূপ দেখা গেছে। পরিবহন মালিক সমিতি মনগড়া একটা ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে আর কাউন্টার থেকে সে অনুযায়ী ভাড়া আদায় করছে। তা নাহলে কিশোরগঞ্জ থেকে গাজীপুরের ভাড়া ২৪০ টাকা হয় কী করে?’

ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির আগে পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল এই রুটের কিছু গাড়ি চলে সিএনজিতে, কিছু গাড়ি চলে ডিজেলে। তেলে চললে ইঞ্জিন ভালো থাকে, তাই বেশির ভাগ মালিক তেলে চালান। তবে ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির পর তারা জানান কিশোরগঞ্জ থেকে চলা সব বাসই ডিজেলেই চলে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জ জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সদস্যসচিব শেখ ফরিদ নিউজবাংলাকে জানান, ‘ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির পর বিআরটিএ থেকে ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়ার জন্য আমরা বলেছি। এখনো ভাড়া নির্ধারণ করা হয়নি। বিআরটিএ থেকে ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়ার পর বলতে পারব।’

ভাড়া নির্ধারণ হওয়ার আগেই তাহলে অতিরিক্ত টাকা কেন নেয়া হচ্ছে- এমন প্রশ্নে তিনি দাবি করেন, বিষয়টি তার অজানা।

বিআরটিএ কিশোরগঞ্জ জেলার সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি.) বখতিয়ার উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আন্তজেলার পরিবহনের ভাড়া নির্ধারণ করে হেড অফিস। হেড অফিস থেকে ভাড়া নির্ধারণ করে ওয়েবসাইটে দিয়ে দিয়েছে।

বাসে অতিরিক্ত আসন, যাত্রীদের চলাচলে ভোগান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে গতানুগতিক জবাব আসে তার কাছে। বলেন, ‘ফিটনেসবিহীন বাসগুলো বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, ‘নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বাড়তি ভাড়া আদায়ের কোনো সুযোগ নাই। কেউ যদি বাড়তি ভাড়া আদায় করে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তা ছাড়া ফিটনেসবিহীন গাড়ি বন্ধ করতে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর