মাদারীপুর সদরে কুমার নদের ওপর ২০১৮ সালে প্রায় পৌনে ৭ কোটি টাকা খরচ করে নির্মাণ করা হয় সেতু। তবে দুই পাশের সংযোগ সড়ক এখনও তৈরি হয়নি।
দুর্ভোগে পড়েছে সেতুর দুই পারের ৬টি ইউনিয়নের হাজারো মানুষ। তারা ঝুঁকি নিয়ে সেতু পার হলেও চলাচল করছে না যানবাহন।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) বলছে, জেলা প্রশাসন জমি বুঝিয়ে না দেয়ায় কাজ শেষ করতে পারছে না তারা। আর জেলা প্রশাসনের ভাষ্য, সংযোগ সড়কের জন্যে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে ভুল-বোঝাবুঝির কারণে এই বিলম্ব। তবে সমস্যা সমাধানের পথে।
সেতুর অভাবে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের যাতায়াতসহ কৃষিপণ্য আনা-নেয়ায় ভোগান্তি হচ্ছে। হাঁটার যে রাস্তা রয়েছে, সেটিও বর্ষা মৌসুমে কাদায় অচল হয়ে পড়ে।
২০১৮ সালের এপ্রিলে মাদারীপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীগঞ্জ এলাকায় কুমার নদের ওপর ৯৯ মিটারের একটি সেতু নির্মাণ করে এলজিইডি। চলতি বছরের জুনে কাজের মেয়াদ শেষ হয়।
৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটির ৯৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে বলে দাবি করে হামীম ইন্টারন্যাশনাল নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এরই মধ্যে ৫ কোটি ১ লাখ টাকা বিলও তুলে নিয়েছে তারা। অথচ এখনও শেষ হয়নি সেতুটির দুই পাশে সংযোগ সড়কের কাজ।
সংযোগ সড়কের জন্য জেলা প্রশাসন জমি বুঝিয়ে না দেয়ায় পরবর্তী কাজ শেষ করা যাচ্ছে না বলে জানায় এলজিইডি।
সেতুর দুই পাশে ১১০ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণের লক্ষ্যে জমি অধিগ্রহণের জন্য ৩ কোটি ৪২ লাখ টাকা জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় জমা দেয়া হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুন।
লক্ষ্মীগঞ্জের বাসিন্দা বেলাল খান জানান, একটি পাকা রাস্তা ও কুমার নদের ওপর সেতু– এটাই ছিল এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি। সদর উপজেলার সঙ্গে পাঁচখোলা, রাস্তি, কালিকাপুরসহ অন্তত ছয়টি ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষের যাতায়াতে একমাত্র ভরসা ছিল নৌকা।
স্থানীয় বাসিন্দা রহিমন আক্তার নামের এক গৃহিণী বলেন, ‘ব্রিজ বানানোর আগে নৌকায় যেভাবে নদী পার হয়েছি, এখনও একইভাবে পার হচ্ছি। সংযোগ সড়ক দিয়ে চলা যায় না। মানুষ নৌকায়, না হয় ঝুঁকি নিয়ে খানাখন্দে ভরা সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে। প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। আমরা চাই ব্রিজটি দ্রুত চালু করা হোক।’
স্থানীয় বাসিন্দা রুবেল বলেন, ‘নদীর ওপারের প্রায় ছয়টি ইউনিয়নে হাজার মানুষের বাস। হাটবাজার, স্কুল-কলেজ সবই নদীর এ পারে। প্রতিদিন কোনো না কোনো কাজে আমাদের ওপারে যেতে হয়। ২০১৮ সালে ব্রিজ তৈরি হলেও কাজে লাগছে না।’
মাদারীপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী বাবুল আখতার বলেন, ‘সংযোগ সড়কের জন্য জেলা প্রশাসন জমি বুঝিয়ে না দেয়ায় পরবর্তী কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। কাজ বুঝিয়ে দিলে বাকি কাজ করে যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করা হবে।’
এ ব্যাপারে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুন বলেন, ‘ভূমি অধিগ্রহণে জমির মালিকানা নিয়ে জটিলতা থাকলেও দ্রুত তা সমাধানের চেষ্টা করছি। আশা করি, দ্রুত সেতুটি চালু করা যাবে।’