কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে পরীক্ষা শেষে বের হচ্ছিলেন মাস্টার্সের ছাত্র নাছিম আহমেদ। কলেজের নির্মাণাধীন ১০ তলা অ্যাকাডেমিক ভবনের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় একটি রড ছুটে তার পিঠে পড়ে। তাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়।
এ ঘটনা রোববার দুপুরের। শিক্ষার্থীরা তখনই ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয়। সোমবার কলেজের সামনে মানববন্ধন করে তারা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এই ভবন নির্মাণকাজের মেয়াদ ছিল ১৮ মাস। এখন ৩০ মাস পেরিয়ে গেলেও মাত্র ৩ তলার পর্যন্ত ছাদ ঢালাই হয়েছে। নির্মাণকাজে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের সামগ্রী। কোনো নিরাপত্তা বলয়ও দেয়া নেই চারপাশে। প্রায়ই ভবনের ইট-সুরকি সিমেন্ট খসে মানুষের গায়ে পড়ে।
সবশেষ নাছিমের ঘটনার পর থেকে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও যোগ দেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। মাথায় লাগলে মৃত্যুও হতে পারে। তারা নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে এরপর নির্মাণকাজ শুরুর দাবি জানান। দাবি না মানা হলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে তারা জানান।
তাদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আনসার জানান, নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নিলে আর কাজ করতে দেয়া হবে ঠিকাদারদের। নাছিমের ঘটনাটি তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তারা রিপোর্ট দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রড খসে গায়ে পড়ায় আহত হন মাস্টার্সের ছাত্র নাছিম আহমেদএই ভবনের নির্মাণকাজ যৌথভাবে করছেন ঠিকদার এন হোসেন ও মো. শামীম। ২০১৯ সালের ২০ মে তারা কার্যাদেশ পান। দরপত্রে খরচ ধরা হয় ১২ কোটি ৪৫ লাখ টাকার ওপরে। ১৮ মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়।
ঠিকাদার এসএম শামীম বলেন, ‘প্রথমে ভবনের জন্য রাস্তার উল্টোপাশের জায়গা নির্ধারণ করা হয়। পরে পরিবর্তন করে সয়েল টেস্ট করাসহ নানা কারণে কাজ শুরু করতেই ৮ মাস লেগে যায়। তাছাড়া করোনার কারণ ও আমার অন্য কাজ চলায় এই বিলম্ব হয়েছে।’
তিনি জানান, বড় কোনো বিপর্যয় না হলে আগামী ১ বছরের মধ্যেই কাজ শেষ হবে।
রড পড়ে দুর্ঘটনার বিষয়ে ঠিকাদার শামীম বলেন, ‘যে ছাত্র আহত হয়ে সে আমার আত্মীয়। তার সঙ্গে সমঝোতা করে নিয়েছি। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়ার অনুমোদন দেয়া হয়েছে, এখন আর কোনো সমস্যা হবে না।’
নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেছেন ঠিকাদাররা।
কলেজের সামনে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনএই নির্মাণ প্রকল্পের প্রকৌশলী সাহেব আলী বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে এভাবেই শিডিউল করা হয়েছে। তারপরও আমরা নিরাপত্তা বলয় তৈরির জন্য ঠিকাদারকে বলেছিলাম। তিনি কাজও শুরু করেছিলেন, এর মধ্যেই এই দুর্ঘটনা। এখন ঠিকাদারকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তারপর কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে।’
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী সাহেব আলী বলেন, ‘অন্য কাজের কারণে দেরি করায় ঠিকাদার নিজেই এখন বিপাকে পড়েছেন। রডসহ সব কিছুর দাম বেড়ে গেছে। এখন লোকসান দিয়েই কাজ করতে হচ্ছে। তবে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেই আগামী দেড় বছরের মধ্যে ভবন নির্মাণ শেষ করা যাবে।’