বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে হুইলচেয়ার আটকে রাখা নারী কে?

  •    
  • ২২ নভেম্বর, ২০২১ ২১:১৭

ঘটনাটি সরাসরি ফেসবুকে লাইভের সময় হুইলচেয়ার কেড়ে নেয়া নারীর পরিচয় বেশ কয়েকবার জানতে চাওয়া হলেও তিনি কোনো জবাব দেননি। তবে নিউজবাংলার অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে ওই নারীর নাম হাজেরা বেগম। তিনি হাসপাতালটিতে ‘স্পেশাল খালা’ হিসেবে পরিচিত।

রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গত শুক্রবার গভীর রাতে অ্যাম্বুলেন্সে একজন মুমূর্ষু রোগী নিয়ে আসেন স্বজনেরা। সেই রোগীকে হাসপাতালের ভেতর নিতে প্রয়োজন হুইলচেয়ার। তবে হুইলচেয়ারের জন্য দেড়শ টাকা দাবি করে বসেন হাসপাতালের এক নারী।

এই টাকা না পেয়ে মুমূর্ষু রোগীকে অ্যাম্বুলেন্সে রেখেই হুইলচেয়ার কেড়ে নিয়ে ওই নারী চলে যেতে উদ্যত হন। এ সময় তার সঙ্গে একজনের বাগবিতণ্ডার ভিডিও ছড়িয়েছে ফেসবুকে। প্রায় ২৫ মিনিট পর ওই রোগীকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান স্বজনেরা।

ঘটনাটি সরাসরি ফেসবুকে লাইভের সময় হুইলচেয়ার কেড়ে নেয়া নারীর পরিচয় বেশ কয়েকবার জানতে চাওয়া হলেও তিনি কোনো জবাব দেননি। তবে নিউজবাংলার অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে ওই নারীর নাম হাজেরা বেগম। তিনি হাসপাতালটিতে ‘স্পেশাল খালা’ হিসেবে পরিচিত।

হাসপাতালটির কর্মকর্তারা জানান, জরুরি বিভাগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ট্রলি ও হুইলচেয়ার টানার নিজস্ব কর্মীর অভাবে গড়ে উঠেছে একটি সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চলছে ট্রলি-হুইলচেয়ার বাণিজ্য। রোগীপ্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত দিতে হচ্ছে তাদের।

ট্রলি বা হুইলচেয়ার টানার কাজ যারা করছেন তারা ‘স্পেশাল বয়’ বা ‘স্পেশাল খালা’ হিসেবে পরিচিত। হাজেরা বেগম এমনই একজন ‘স্পেশাল খালা’। সিন্ডিকেটের সদস্যরা ২৪ ঘণ্টাই পালাক্রমে হাসপাতালে অবস্থান করেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চতুর্থ শ্রেণির বেশ কয়েকজন কর্মচারী নিয়ন্ত্রণ করেন এই সিন্ডিকেট। কমিশনের ভিত্তিতে তারা সিন্ডিকেটের সদস্যদের নিয়োগ দেন। হাসপাতালের কর্মী নন এমন অন্তত ১০০ জন ট্রলি ও হুইলচেয়ার টানার কাজ করছেন।

এই হাসপাতালে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক আনসার সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্পেশাল বয় ও খালাদের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন জরুরি বিভাগের ওয়ার্ড সর্দার টুলু হাওলাদার, কিরণ মিয়া ও রায়হান মিয়া। তারা প্রকাশ্যে হুইলচেয়ার-ট্রলি বাণিজ্য করলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয় না।’

সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, জরুরি বিভাগের সামনে ট্রলি আর হুইলচেয়ার নিয়ে রোগীর অপেক্ষায় আছেন অন্তত ১৫ জন স্পেশাল বয় ও খালা। অ্যাম্বুলেন্সে রোগী এলেই তার কাছে ছুটে যাচ্ছেন। স্বজনেরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা হুইলচেয়ার বা ট্রলিতে রোগী তুলে জরুরি বিভাগে নিয়ে যাচ্ছেন। সেখান থেকে চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী ওয়ার্ডেও রোগী নিয়ে যাচ্ছেন তারা।

এমনকি রোগীর শরীরের তাপমাত্রা কেমন সেটাও এই স্পেশাল বয় ও খালাদের কাছ থেকে চিকিৎসকেরা জেনে নিচ্ছেন। করোনা সংক্রমণের ভয়ে রোগীর কাছ থেকে বেশ খানিকটা দূরত্ব বজায় রাখছেন চিকিৎসকেরা। আর রোগীদের ‘সেবা দেয়ার বিনিময়ে’ স্বজনদের কাছ থেকে ১০০ থেকে ২০০ টাকা নিচ্ছেন স্পেশাল বয় ও খালারা।

আসিয়া বেগম নামে এক ‘স্পেশাল খালা’ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি এই হাসপাতালের কেউ না। তবে পাঁচ বছর ধরে এখানে কাজ করছি। বাসা কেরানীগঞ্জ। প্রতিদিন ভোরে হাসপাতালে আসি। বেলা ২টা পর্যন্ত কাজ করে চলে যাই। প্রতিদিন ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা আয় হয়।’

এ কাজের জন্য হাসপাতাল থেকে কোনো বেতন পান কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এক টাকাও দেয় না। বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রতিদিন বিনা বেতনে ধোয়ামোছার কাজ করি। হাসপাতাল পরিষ্কার করি। এ জন্য এক টাকাও তারা দেয় না, তাই হুইলচেয়ার থেকে টাকা নেয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে।’

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগী এলে এভাবেই ছুটে যান ‘স্পেশাল বয়’ বা ‘স্পেশাল খালা’

ঢাকার বাইরে থেকে অসুস্থ বাবাকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন আমিরুল ইসলাম। অ্যাম্বুলেন্সটি হাসপাতালের সামনে থামার সঙ্গে সঙ্গে ট্রলি নিয়ে হাজির হন এক যুবক। জরুরি বিভাগে রোগী নেয়ার জন্য ১৫০ টাকা দাবি করেন। আমিরুল সেই টাকা দিয়েই বাবাকে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন।

নিউজবাংলা প্রতিবেদক সোমবার বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে স্পেশাল বয় ও খালাদের তৎপরতা দেখলেও হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. খলিলুর রহমানের দাবি, হাজেরা বেগমের ঘটনাটি জানার পর চক্রের সবাইকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।

জনবল সংকটের কারণেই এমন সমস্যা তৈরি হয় দাবি করে তিনি বলেন, ‘হুইলচেয়ার ও ট্রলি পরিচালনার জন্য হাসপাতালে অল্প কিছু লোক নিয়োগ দেয়া রয়েছে। এই সংখ্যা অনেক কম। এ কারণেই কিছু লোক সুযোগ নিচ্ছে। তাদের স্পেশাল বয় ও খালা বলে ডাকা হয়। হাসপাতাল থেকে তাদের কোনো বেতন দেয়া হয় না।’

রোগীর স্বজনের কাছে টাকা দাবি করা হাজেরার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘তাকে (হাজেরা) হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। উনারা আমাদের স্টাফ না, যে কারণে প্রতিনিয়ত এ ধরনের ঝামেলা করেন। এ ঘটনার পর তাদের সবাইকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।’

হাসপাতালে এখনও স্পেশাল বয় ও খালাদের উপস্থিতি দেখার তথ্য জানানো হলে পরিচালক বলেন, ‘আমরা যখন অভিযানে যাই, তখন কাউকে পাই না। মাঝে মাঝে অভিযান পরিচালনা করা হয়। আমি ইতোমধ্যে আদেশ দিয়েছি দেখামাত্র তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

স্পেশাল বয় ও খালাদের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে নাম আসা জরুরি বিভাগের সর্দার রায়হান মিয়া অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জরুরি বিভাগে তিনজন ওয়ার্ড সর্দার আছে। ট্রলি ও হুইলচেয়ার টানার জন্য যারা আছে তাদের আমরা তিন শিফটে ভাগ করে দিয়েছি। এদের দেখভাল আমাদেরই করতে হয়।’

কমিশন নেয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এমন অভিযোগ সত্যি না। কেউ আপনাকে মিথ্যা তথ্য দিয়েছে। আমাদের কেউ এ ধরনের ঘটনায় জড়িত নয়। আমরা হাসপাতাল থেকেই বেতন পাই।’

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে শুক্রবার রাতে নিয়ে আসা মুমূর্ষু রোগীর অবস্থা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছে নিউজবাংলা। তবে জানা গেছে, তাকে পরে অন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়।

হাসপাতালের নার্স রুবিনা আক্তার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তার শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিল। জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে আইসিইউতে ভর্তির পরামর্শ দেন। তবে সে সময় হাসপাতালে একটি আইসিইউও খালি ছিল না। এ কারণে রোগীর স্বজনেরা সেই রাতেই তাকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যান।’

এ বিভাগের আরো খবর