অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার আসামি টেকনাফ মডেল থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় অভিযোগ গঠন পিছিয়েছে।
এ মামলার অভিযোগ গঠন এবং জামিন আবেদনের শুনানি ৬ ডিসেম্বর নির্ধারণ করেছে আদালত।
সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মুন্সী আব্দুল মজিদের আদালত এ আদেশ দেয়।
দুদকের আইনজীবী মাহমুদুল হক বলেন, ‘সিনহা হত্যার আসামি কক্সবাজারের টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপের জামিনের আবেদন করেছিল আসামিপক্ষ। আদালত ওই আবেদনের শুনানি ৬ ডিসেম্বর নির্ধারণ করেছে।
‘একই সঙ্গে আসামিপক্ষ থেকে অভিযোগ গঠনের সময় চেয়ে আবেদন করা হলে আদালত ৬ ডিসেম্বর আসামির উপস্থিতিতে অভিযোগ গঠন ও জামিন শুনানির আদেশ দিয়েছে।’
এর আগে ৬ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছিলেন তদন্ত কর্মকর্তা দুদক চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন।
গত বছরের ৩১ জুলাই টেকনাফের বাহারছড়ায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা। ৬ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন ওসি প্রদীপ। এরপর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।
সিনহার বোনের করা মামলায় ২৭ জুন অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার শুরু হয়েছে। ওই মামলার আসামি প্রদীপসহ ১৫ জন।
দুদকের ঘুষ ও দুর্নীতি মামলা
এদিকে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে প্রায় ৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
পরে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের নির্দেশে প্রদীপ, তার স্ত্রী ও কক্সবাজারের পুলিশ সুপারসহ আটজনের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়।
দুদক চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন গত ২৩ আগস্ট প্রদীপ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করেন।
এজাহারে বলা হয়, প্রদীপের বাবা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তাপ্রহরী ছিলেন। ১৯৯৫ সালে উপপরিদর্শক (এসআই) পদে যোগ দেন প্রদীপ। ২০০২ সাল থেকে তার সম্পদের খোঁজ পাওয়া যেতে থাকে। নানা কারণে তিনি আলোচিত হতে থাকেন।
প্রদীপ গ্রেপ্তারের পর থেকে পলাতক রয়েছেন তার স্ত্রী চুমকি।
দুদক জানায়, প্রদীপের স্ত্রী চুমকি নগরের পাথরঘাটা এলাকায় তার বাবার কাছ থেকে একটি ছয়তলা বাড়ি পেয়েছেন বলে সম্পদ বিবরণীতে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু চুমকির দুই ভাই ও আরেক বোন বাবার কাছ থেকে কোনো বাড়ি পাননি।
এ থেকে ধারণা করা হয়, প্রদীপ ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে ওই বাড়ি করেছেন। কিন্তু কাগজপত্র তার শ্বশুরের নামে করেন। ২০১৩ সালে শ্বশুরের কাছ থেকে এটির দানপত্র করে নেন।
ওসি প্রদীপের সব সম্পত্তিই স্ত্রী চুমকির নামে। যদিও চুমকি গৃহিণী। তার বিশ্বাসযোগ্য জ্ঞাত আয়ের উৎস নেই। চুমকির নামে ৪ কোটি ৪৪ লাখ ১৮ হাজার ৮৬৯ টাকার সম্পদ থাকার প্রমাণ পেয়েছে দুদক। তার মধ্যে তিনি পারিবারিক ব্যয়সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে খরচ করেছেন ২১ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
চুমকির আগের সঞ্চয়, উপহার, বাড়ি ভাড়া থেকে বৈধ আয় হিসেবে ৪৯ লাখ ১৩ হাজার ২৩৪ টাকার সম্পদ পাওয়া যায়। বৈধ আয় বাদ দিলে চুমকির নামে মোট ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকার অবৈধ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ পাওয়া যায়। এটি তার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।
ওসি প্রদীপ ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে সম্পদ কিনে স্ত্রীর নামে রেখেছেন বলে দুদকের অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে।