উৎপাদনের জন্য সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ, লাইসেন্স সংক্রান্ত ঝামেলাগুলোও মিটে গেছে অনেকটাই। কাঁচামাল মজুদ আছে, তেল উৎপাদন করে সেগুলো বাজারে সরবরাহ করতে ট্রাকও প্রস্তুত আছে।
অপেক্ষা এখন গ্যাস সংযোগের। এ জন্য তিতাস গ্যাসে টাকা জমা দেয়া হয়েছে। গ্যাস সরবরাহ শুরু হলেই উৎপাদন শুরু হবে শেরপুরে ধানের কুঁড়ার তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটিতে।
আগের মতোই স্পন্দন ব্র্যান্ডেই বাজারজাত করা হবে এই তেল।
২০১৭ সালে বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়া কোম্পানিটিতে প্রাণ ফেরাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির উদ্যোগ নেয়া হয় চলতি বছরের শুরুর দিকে। মিনোরি বাংলাদেশ নামে একটি কোম্পানিকে দায়িত্ব দেয়া হয় কোম্পানিটি চালু করতে। এর অংশ হিসেবে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়।
মিনোরি বাংলাদেশ গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে কারখানাটিতে উৎপাদন শুরুর ঘোষণা দিয়েও পারেনি। এর কারণ হিসেবে লাইসেন্সের কিছু কাজ বাকি থাকা, আগের মালিকের শেয়ার হস্তান্তর, বেসিক ব্যাংকে ঋণ ও গ্যাস সংযোগ না থাকার কথা জানানো হয়।
মিনোরি পুঁজিবাজার থেকে ৮ শতাংশ শেয়ার কিনেছে। আর আগের মালিকদের ৩০ শতাংশ শেয়ারের বিনিময়ে তাদের ঋণের দায় নিতে রাজি তারা।
সেই বিষয়টি চূড়ান্ত করতে কোম্পানিটির ভেঙে দেয়া পর্ষদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ হাসিবুল গণি গালিবের কাছে শেয়ার হস্তান্তরের কাগজপত্র যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়েছে। তিনি এই সমঝোতায় রাজি বলে জানিয়েছেন মিনোরি বাংলাদেশের পরিচালক আফজাল হোসেন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ লাইসেন্স ইতোমধ্যে নবায়ন করা হয়েছে। কয়েকটি বাকি আছে। আশা করি সেগুলোও নবায়ন হয়ে যাবে।’
এমারেল্ড অয়েলের ধানের কুঁড়ার তেল স্পন্দন ছয় বছর আগে দেশের বাজারে সাড়া ফেলেছিল। এবারও একই নামে তেল আনবে তারা
এমারেল্ড অয়েলের ঋণের সিংহভাগ নেয়া হয়েছিল বেসিক ব্যাংক থেকে। ব্যাংক এশিয়াসহ আরও কয়েকটি ব্যাংকেও ছিল ঋণ। সুদ-আসলে সব এখন একশ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
মিনোরি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সুদ মওকুফ এবং ডাউন পেমেন্ট জমা দিয়ে ঋণ পুনর্গঠনের আবেদন করা হয়েছে। তাদের এই উদ্যোগে পাশে দাঁড়িয়েছি বিএসইসি। সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে সংস্থাটির কার্যালয়ে মিনোরি ও বেসিক ব্যাংককে নিয়ে বৈঠকও করে তারা।
তবে এই সমঝোতা চূড়ান্ত হয়নি গালিবের শেয়ার হস্তান্তরের চিঠি না পেয়ে। আফজাল জানিয়েছেন, তাদের আইনজীবী সব কাগজ প্রস্তুত করে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছেন। সেখান থেকে শেয়ার হস্তান্তরের নথিপত্র এলেই ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি হবে বলে তারা আশাবাদী।
পুনর্গঠিত পর্ষদের একজন সদস্য বলেছেন, ‘শেয়ার হস্তান্তরের নথিতে সই হয়ে গেছে। সেটি দূতাবাসে জমা দেয়া হয়েছে শুনেছি। তবে এখনও আমরা হাতে পাইনি।
তবে উৎপাদন শুরুর জন্য এই চুক্তির জন্য অপেক্ষায় না থাকার কথাও জানিয়েছেন আফজল হোসেন। বলেছেন, যদি দুই মাস দেরিও হয়, তাহলেও তারা কাজ শুরু করে দেবেন।
ব্যাংকের ঋণ সমন্বয়ের বিষয়ে আফজাল হোসেন বলেন, ‘আমরা ব্যাংকের সঙ্গে ঋণের বিষয়টি নিয়ে প্রতিদিনই কোনো না কোনা কাজ করছি। আমরা আশাবাদী, কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌছাতে পারব।’
নতুন পর্ষদের অন্য একজন সদস্য নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কোম্পানির সাপ্লাই লাইন রেডি করা আছে। ট্রাকও প্রস্তুত আছে। গ্যাস সংযোগটা বাকি ছিল। সেটিও নিশ্চিত করা গেছে। টাকা জমা দেয়া হয়েছে। শেয়ার হস্তান্তরে দুই-তিন মাস দেরি হলেও আমরা আগেই উৎপাদনে চলে যাব।’
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে এই বিষয়টি নোটিশ করবেন কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এবার উৎপাদন শুরু করেই একবারে নোটিশ করব।’
কোম্পানির তথ্য
কোম্পানিটি ২০১৪ সালে ১০ টাকা করে অভিহিত মূল্যে দুই কোটি শেয়ার বিক্রি করে ২০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে পুঁজিবাজার থেকে। কোম্পানিটি ধানের কুঁড়া থেকে তেল উৎপাদন করত এবং সে সময় বাজারে তাদের ব্র্যান্ড স্পন্দন বেশ সাড়া জাগিয়েছিল।
তবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার দুই বছর পর রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি মামলার কারণে ২০১৬ সালের ২৭ জুন থেকে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় কোম্পানিটির। মামলার আসামি হয়ে মালিকপক্ষ উধাও হয়ে যায়।
শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামের নেতৃত্বাধীন বিএসইসি এ রকম রুগণ বেশ কিছু কোম্পানিকে বাঁচানোর উদ্যোগ নিয়েছে। পর্ষদ পুনর্গঠন করে স্বাধীন পরিচালক নিয়োগের পর এরই মধ্যে উৎপাদন শুরু হয়েছে আলহাজ টেক্সটাইলে, ডুবে যাওয়া রিংসাইন টেক্সটাইলেও শুরু হয়েছে পরীক্ষামূলক উৎপাদন।
এছাড়া আলিফ গ্রুপের মাধ্যমে সি অ্যান্ড এ টেক্সটাইল কোম্পানিকে চালু করারও অনুমোদন দিয়েছে বিএসইসি।
এমারেল্ড উৎপাদনে এলে এটা হবে তৃতীয় কোম্পানি, যেটিকে ডুবে যাওয়া থেকে টেনে তোলা হয়েছে।