নিজ দেশের বিরুদ্ধে গলা ফাটানো পাকিস্তানি সমর্থকদের সোমবার স্টেডিয়ামে দেখা যায়নি। এ সমর্থকদের প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়ে খেলা শুরুর আগে একদল যুবক সকাল থেকে মিরপুর স্টেডিয়ামের বাইরে অংশ নিয়ে স্লোগান দেয়।
বাংলাদেশ-পাকিস্তানের তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম দুটি ম্যাচে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের গ্যালারির চিত্র বিস্ময় হয়ে দেখা দেয় দেশবাসীর কাছে। বাংলাদেশের খেলা অথচ গ্যালারিতে পাকিস্তানি পতাকা, জার্সির সংখ্যা বেশি।
এই দর্শকদের সিংহভাগই বাংলাদেশে জন্মানো তরুণ, যাদের কেউ কেউ গণমাধ্যমকে এমন কথাও বলেছে, দুটি ছিল এক দেশ, দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেটি ভাগ হয়ে গেছে।
পর পর দুই ম্যাচে এই চিত্র দেখে প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানি খেলোয়াড় ফখর জামান গণমাধ্যমকে বলেন, স্টেডিয়ামের গ্যালারি দেখে তার মনে হচ্ছে তিনি নিজ দেশে খেলছেন।
গত দুই ম্যাচে গ্যালারিতে বাংলাদেশিদের হাতে পাকিস্তানের পতাকা ও গায়ে পাকিস্তান দলের জার্সি সকলকে বিস্মিত করে। ফাইল ছবি
এই অবস্থায় তৃতীয় ম্যাচের আগের রাতে ‘পাকিস্তানি দালাল রুখবে তারুণ্য’ নামে একটি উদ্যোগের কথা জানিয়ে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠায় একদল যুবক। ঘোষণা দেয়া হয়, সোমবার সকাল থেকে তারা মিরপুর স্টেডিয়ামে অবস্থান নেবে।
এই উদ্যোগটির আহ্বায়ক হামজা রহমান অন্তর নামের ছাত্রলীগের এক নেতা। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘৩০ লাখ শহীদ আর দুই লক্ষাধিক মা-বোনের আর্তনাদের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীনতা। সেই স্বাধীনতার শত্রু যারা আজও রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষমা চায়নি, ক্ষতিপূরণ দেয়নি, যারা আজও ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে - তাদের হয়ে এ দেশীয় দালাল গোষ্ঠীকে একাত্তরের মতোই প্রতিহত করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ আমরা।’
ঘোষণা অনুযায়ী পাকিস্তানের সমর্থকদের ঠেকাতে মাঠের বাইরে অবস্থান নেয় কিছু যুবক। ম্যাচ বেলা ২টায় শুরু হলেও সকাল ১০টা থেকেই তারা নানা স্লোগান দিয়ে মিছিল করে স্টেডিয়ামের বাইরের সড়ক প্রদক্ষিণ করতে থাকে।
হামজা রহমান অন্তর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার পরও যারা বাংলাদেশি হয়ে প্রকাশ্যে পাকিস্তানের সমর্থন করছে, তাদের ঠেকাতে আমরা আজ মাঠে নেমেছি। আমার যেসব বাংলাদেশির হাতে পাকিস্তানের পতাকা-জার্সি দেখছি, তাদের বুঝিয়ে বলব। না শুনলে আমরা সেগুলো ছিনিয়ে নেব।’
সকালেই অন্তর ফেসবুক স্ট্যাটাসে তার সমর্থকদেরকে সতর্ক করেন। তাদের এই উদ্যোগের সুযোগ নিয়ে কেউ যেন বিশৃঙ্খলা করতে না পারে, সেদিনে দৃষ্টি রাখতে বলেন তিনি। কোনো ধরনের আক্রমণাত্মক মনোভাব না দেখাতে তাদের সংগঠনের কর্মীদের প্রতি নির্দেশনা দেন।
অন্তর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এখানে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি নিয়ে এসেছি, কোনো বিশৃঙ্খলা করতে আসিনি। আর পাকিস্তানি নাগরিকদের নিয়ে আমাদের কোনো সমস্যা নেই আমরা তাদের কোনো বাধা দেব না।’
শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামের সামনের সড়কে পাকিস্তানের সমর্থক বাংলাদেশিদের রুখতে সোমবার সকালে মিছিল। ছবি: নিউজবাংলা
সকালে খেলা দেখতে আসা কয়েকজন নিজেদেরকে পাকিস্তানি নাগরিক পরিচয় দিলে তাদের পাসপোর্ট পরীক্ষা করেন যুবকরা। পরিচয় নিশ্চিত নিশ্চিত হওয়ার পর পাকিস্তানি পতাকা বা জার্সি পরে তাদেরকে স্টেডিয়ামে ঢুকতে বাধা দেয়া হয়নি।
তবে খেলা শুরুর কিছুক্ষণ আগে ৩ নম্বর গেটের সামনে একজন বাংলাদেশি নাগরিকের হাতে পাকিস্তানের জার্সি দেখে তা ছিনিয়ে নেন ওই যুবকরা। এরপর তারা সেটিতে আগুন ধরিয়ে দেন।
এ সময় ‘নিয়াজীর পুত্ররা হুঁশিয়ার সাবধান, টিক্কার পুত্ররা হুঁশিয়ার সাবধান, দালালের পুত্ররা হুঁশিয়ার সাবধান’সহ নান স্লোগান দেন তরুণরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিরপুর জোনের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মাহবুবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ওই যুবকদের বিষয়ে অবগত আছি। আমাদের পেট্রল টিম তাদের মনিটর করছে।’
তাদের মিছিলের কারণে দর্শকদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি হতে পারে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে তাদের সতর্ক করেছি, তারা আর মিছিল করবে না।’
পাকিস্তানি নাগরিকদের পাসপোর্ট যাচাই করার বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, ‘তারা কোনোভাবেই বিদেশিদের পাসপোর্ট যাচাই করতে পারে না। আমরা এটি যাচাই করে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেব।’