বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে হত্যা ও রাষ্ট্রদ্রোহের মামলাসহ ১১ মামলার শুনানির তারিখ পিছিয়ে আগামী বছরের ১৫ মার্চ ঠিক করেছে আদালত।
কেরাণীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের ২ নম্বর ভবনে স্থাপিত ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েশের আদালতে সোমবার মামলাগুলো শুনানির জন্য তারিখ ছিল।
হাইকোর্ট খালেদার পক্ষে অধিকাংশ মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেছে জানিয়ে সময় আবেদন করেন তার আইনজীবীরা। আদালত গ্রহণ মঞ্জুর করে পরবর্তী শুনানির তারিখ ১৫ মার্চ ধার্য করে।
নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী জিয়া উদ্দিন জিয়া।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ১১ মামলার মধ্যে আটটিই রাজধানীর দারুস সালাম থানায় করা হয়েছে; সবগুলোতেই নাশকতার অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ছাড়া, হত্যা ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে যাত্রাবাড়ী থানায় রয়েছে তিনটি মামলা।
যাত্রাবাড়ী থানার হত্যা মামলা চার্জশিট গ্রহণের বিষয়ে শুনানির জন্য রয়েছে। অপর ১০ মামলা ছিল অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যে করার অভিযোগে ২০১৬ সালের ২৫ জানুয়ারি আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলাটি দায়ের করা হয়।
যাত্রাবাড়ী থানার মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৩ জানুয়ারি রাতে যাত্রাবাড়ীর কাঠেরপুল এলাকায় গ্লোরি পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি বাসে পেট্রোল বোমা হামলা হয়। এতে বাসের ২৯ যাত্রী দগ্ধ হন। পরে তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ১ ফেব্রুয়ারি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নূর আলম নামের এক যাত্রী।
ওই ঘটনায় ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করেন থানার উপ-পরিদর্শক এসআই কে এম নুরুজ্জামান। ওই বছরের ৬ মে খালেদা জিয়াসহ ৩৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন ডিবি পুলিশের পরিদর্শক বশির আহমেদ।
২০১৫ সালে দারুস সালাম থানা এলাকায় নাশকতার অভিযোগে আটটি মামলা দায়ের করা হয়। সবগুলোতেই বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আসামি করা হয়েছে।
২০১৭ সালের বিভিন্ন সময়ে মামলাগুলোয় চার্জশিট দেয় পুলিশ। সবগুলো মামলায় খালেদা জিয়াকে পলাতক দেখিয়ে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়। পরে খালেদা জিয়া মামলাগুলোয় আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন।
নানা ধরনের শারীরিক জটিলতায় বিএনপির চেয়ারপারসন এখন রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশ নিতে আন্দোলন করে যাচ্ছে বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয় খালেদা জিয়ার। পরে উচ্চ আদালতে আপিল করলে সাজা বেড়ে হয় দ্বিগুণ।
উচ্চ আদালতের আদেশের পর দিন জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার রায় হয় বিচারিক আদালতে। এ মামলায় সাত বছরের কারাদণ্ড পান বিএনপি নেত্রী। ফলে মোট ১৭ বছরের কারাদণ্ড হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর।
দুই মামলায় জামিন পেতে বিএনপির আইনজীবীদের চেষ্টা ব্যর্থ হলে বিএনপি নেত্রীর স্বজনরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন নিয়ে যান।
সরকার প্রধানের নির্বাহী আদেশে দণ্ড স্থগিত হলে সাবেক সরকার প্রধানকে দুই শর্তে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ মুক্তি দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের প্রিজন সেল থেকে বিএনপি নেত্রী ফেরেন তার গুলশানের বাসভবন ফিরোজায়।
শর্ত দুটি হলো: বিএনপি নেত্রী দেশেই চিকিৎসা নেবেন এবং তিনি বিদেশে যাবেন না।