গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে দলীয় সদস্যপদ থেকে বহিষ্কারের পর শূন্য হয়েছে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ।
গত ১৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জাহাঙ্গীর আলমের বহিষ্কারের ঘোষণা দিলেও তার জায়গায় কে আসবেন, সে বিষয়ে কিছু জানাননি।
তবে তাকে বহিষ্কারের পর গাজীপুরের কমিটি থাকবে কি না সে বিষয়ে সংবাদকর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘একজনের জন্য তো পুরো কমিটি বাতিল করা যাবে না।’
তার এই বক্তব্যের পর থেকেই গাজীপুরে আলোচনা চলছে কে হচ্ছেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক?
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে কাউকে বহিষ্কার করা হলে শূন্য পদে সিনিয়র সহসভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এ ক্ষেত্রে ১নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মণ্ডল হতে পারেন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক।
তবে দীর্ঘদিন ধরে শারীরিকভাবে অসুস্থ আতাউল্লাহ মণ্ডল। মাঝে কিছুদিন শয্যাশায়ীও ছিলেন এ নেতা। দলের বিভিন্ন সভা-সেমিনার ও আন্দোলনেও তিনি অনুপস্থিত অনেক দিন থেকেই।
তাই বিকল্প হিসেবে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হতে পারেন মহানগর আওয়ামী লীগের ২নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতি। তিনি গাজীপুর-২ আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছোট ভাই এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের চাচা।
গাজীপুরের নেতা-কর্মীদের কাছে তিনি মতি ভাই, মতি চাচা হিসেবে ব্যাপক সমাদৃত। তৃণমূলের আস্থাও রয়েছে তার ওপর। গাজীপুরের তৃণমূলের নেতা তৈরির কারিগরও বলা হয় তাকে।
নেতা-কর্মীরা মনে করেন, জাহাঙ্গীরের বিদায়ের পর বিভক্ত মহানগর আওয়ামী লীগকে পুনরায় উজ্জীবিত ও ঐক্যবদ্ধ করার জন্য ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মতিউর রহমানকেই বেছে নেবে দল।
নগরীর ৪৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও টঙ্গী থানা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক নুরুল ইসলাম নুরু বলেন, ‘আহসান উল্লাহ মাস্টার গাজীপুরকে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে তৈরি করেছেন। তার মৃত্যুর পর মতিউর রহমান দলের তৃণমূলকে শক্তিশালী করে ঐক্যবদ্ধ রেখেছেন।
‘স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে হেফাজত ও বিএনপি-জামায়াত জোটের হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি প্রতিহত করতে নেতা-কর্মীদের নিয়ে দিন-রাত রাজপথে ছিলেন মতিউর রহমান। তাই গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তার চেয়ে যোগ্য আর কেউ হতে পারে না।’
৪৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য সচিব আহসান উল্লাহ বলেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচনে নৌকা ও আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করতে হলে তৃণমূল নেতা তৈরির কারিগর মতিউর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করলে দল উপকৃত হবে।’
টঙ্গী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুল হক বলেন, ‘জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুরের আওয়ামী লীগকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। সেখান থেকে পুনরায় গাজীপুরকে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী ঘাঁটি বানাতে হলে মতিউর রহমানের বিকল্প নেই।’
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের ১নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মণ্ডল মুঠোফোনে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মহানগর কমিটি গঠনের সময় ছেলের বয়সী একজনের সঙ্গে আমাকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিল। জাহাঙ্গীরের বহিষ্কারের পর দল আমাকে দায়িত্ব দিলে আমি দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত আছি।’
শারীরিক অসুস্থতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি সুস্থ আছি। দায়িত্ব পালনে সমস্যা হবে না।’
গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতি বলেন, ‘প্রয়োজনে দল আমাকে যে দায়িত্ব দিবে তা পালনে আমি প্রস্তুত আছি। দুর্দিনে দলের জন্য রাত-দিন কাজ করেছি। ভবিষ্যতেও সর্বোচ্চ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করতে কাজ করে যাব।’
দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে মহানগরে ডেপুটি হিসেবে মতিউর রহমানকে চান গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খানও। বিভিন্ন সমাবেশে দুজনের একসঙ্গে উপস্থিতি সেই ইঙ্গিতই জানান দিচ্ছে। তবে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন জানিয়ে আজমত উল্লাহ খান বলেন, ‘আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হবে। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন। আমরা সেই অপেক্ষায় আছি।’