‘মোর ভাবির (রিনা বেগম) মোহের (মুখের) দিকে তাকাইতে পারি না ভাই, স্বামী (মহিউদ্দিন) ও একমাত্র পোলাকে (রবিউল ইসলাম) হারাইয়া শোকে পাথর হইয়া গেছে। ভাইপো রবিউলের ৮ বছর বয়সী মাইয়া আর ৪ বছর বয়সী পোলাডা বাপ-বাপ বইল্লা একছেড় কানতেয়াছে। হ্যার স্ত্রী (মাকসুদা বেগম) গর্ভবতী, হ্যার সন্তানডা বাপের মুখও দেখতে পাইল না।’
কথাগুলো বলছিলেন বাগেরহাটের মোংলার পশুর নদীতে কয়লা বোঝাই বাল্কহেড ডুবিতে নিখোঁজ মহিউদ্দিনের ভাই জাকির হোসেন।
তিনি বলেন, ‘মোরা গত ৬ দিন ধইরা মোংলাতে আছি ভাই। ভাইপো রবিউল ইসলামের মরদেহ শুক্রবার ১১টার দিকে নদীতে ভাইসা ওডে। এহনও মোর ভাই নিখোঁজ। জাহাজে রানতে (জিহাদ) নামের আর এক পোলাও নিখোঁজ। প্রথমদিকে কোস্ট গার্ড যারা নিখোঁজ আল্লে, তাদের খুঁজছে। শুক্রবার সকাল থাইক্কা তারা খোঁজা বন্ধ কইরা দেয়। এহন ওই জাহাজের মালিক ঢাহা থাইক্কা ডুবুরি আইন্যা খুঁজতে আছে, মোরাও ট্রলার ভাড়া হইরা খোঁজতে আছি। পেত্যাকদিন মোগো ট্রলার ভাড়াই ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা দেতে হইতাছে।’
ডুবে যাওয়া বাল্কহেডের মালিক ফজলুল হক খোকন বলেন, ‘শুক্রবার সকাল থেকে কোস্ট গার্ড উদ্ধারকাজ বন্ধ করে দেয়। তারপর ঢাকা থেকে ডুবুরিদল এনে আমরা নিখোঁজদের খোঁজ চালাচ্ছি। সেই সঙ্গে জাহাজে থাকা কয়লা উত্তোলনের জন্য ড্রেজার বসানো হয়েছে রোববার সকালে। কয়লা উঠানো হয়ে গেলে জাহাজটি উঠানো সম্ভব হবে।’
নিখোঁজ দুজন জাহাজের মধ্যেই আটকা পড়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ডুবুরিদল জাহাজের প্রায় সবখানেই খুঁজেছে।’
মোংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, পশুর নদীর হারবাড়িয়া এলাকায় কয়লা বোঝাই বাল্কহেডডুবির ঘটনায় পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের কাটাখালী গ্রামের রবিউল ইসলাম, একই গ্রামের নূর ইসলাম ও মোংলার সামসুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
এ ছাড়া বাল্কহেডের চালক ও রবিউল ইসলামের বাবা মো. মহিউদ্দিন এবং একই জেলার ভাণ্ডারিয়া উপজেলার উত্তর শিয়ালকাঠি গ্রামের আলম হাওলাদারের ছেলে জিহাদ হোসেন নিখোঁজ রয়েছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার কমান্ডার শেখ ফকর উদ্দিন বলেন, ‘ঘটনার পরপরই তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি এখন পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি। এ ছাড়া ডুবে যাওয়া বাল্কহেডের নিখোঁজ দুজনের খোঁজে জাহাজের মালিকপক্ষ কাজ করছে। আমাদের সঙ্গে তাদের সব সময় যোগাযোগ হচ্ছে, নিখোঁজদের বিষয়ে তথ্য পেতে পুলিশ ও কোস্ট গার্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছি।’
কোস্ট গার্ড পশ্চিমজোনের গোয়েন্দা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মো. হাসানুজ্জামান বলেন, ‘ডুবে যাওয়া বাল্কহেড জাহাজের নিখোঁজ ৫ জনের মধ্যে দুজনের মরদেহ উদ্ধারের পর শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) সকাল থেকে আমরা উদ্ধারকাজ বন্ধ রাখি। তবে ওই এলাকায় কোস্ট গার্ডের নিয়মিত টহল টিম রয়েছে, জেলে, নিখোঁজদের পরিবার বা অন্য কোনো মাধ্যমে আমরা কোনো তথ্য পেলে সঙ্গে সঙ্গেই কোস্ট গার্ডের টিম সেখানে ছুটে যাচ্ছে।’
সোমবার রাতে মোংলা বন্দরের হারবাড়িয়ার ৯ নম্বর বয়া এলাকায় বিদেশি জাহাজ ‘এলিনা বি’ থেকে ৬০০ টন কয়লা নিয়ে রাত ১০টার দিকে বাল্কহেড ‘ফারদিন-১’ ঢাকায় যাচ্ছিল। পণ্য খালাস শেষে বন্দর ত্যাগ করার সময় হ্যান্ডিপার্ক নামে অন্য একটি বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ বাল্কহেডটিকে ধাক্কা দেয়।