মিরপুরে অনুশীলনের সময় পাকিস্তান ক্রিকেট দল নিজেদের জাতীয় পতাকা ওড়ানোয় এবং বিজয় দিবসে মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামকে হকিতে ভারত-পাকিস্তানের ফাইনাল ম্যাচের ভেন্যু ঠিক করায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ৪০ বিশিষ্ট নাগরিক।
এমন ঘটনায় সরকারের নীরবতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা। পাশাপাশি পদত্যাগ চেয়েছেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ও হকি বোর্ডের। সেই সঙ্গে পাকিস্তান সরকারের দিক থেকে ক্ষমা ও ভুল স্বীকারের আনুষ্ঠানিক বার্তাও আশা করছেন তারা।
এক প্রতিবাদলিপিতে রোববার এই দুই ঘটনায় নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছেন ৪০ বিশিষ্ট নাগরিক। প্রতিবাদের অংশ হিসেবে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাক্ষ্যগ্রহণ এবং সোমবার সকাল ১১টায় জাতীয় শহীদ মিনারে প্রতিবাদ সভার ডাক দিয়েছেন তারা।
প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, ‘আমরা দেখতে পারছি দেশ যখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন করছে ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করছে, ঠিক সেই সময়ে ঐতিহাসিক পল্টন ময়দান অর্থাৎ আজকের মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে আগামী ১৬ ডিসেম্বরে ভারত-পাকিস্তান হকি ফাইনাল ম্যাচের ভেন্যু নির্ধারণ করে কলঙ্কিত করা হচ্ছে আমাদের হকিকে। স্বাধীন বাংলাদেশে মিরপুরের অ্যাকাডেমি মাঠে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা ওড়ানোর ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে পাকিস্তান ক্রিকেট দল।’
ঘটনা দুটিকে ‘ইচ্ছাকৃত ও ষড়যন্ত্র’ বলে উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে। এতে বলা হয়, ‘এসব কিছুই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারের সময়ে দেশে ঘটতে দেখা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। যারা এগুলো করেছে তারা কোনোভাবেই সৎ উদ্দেশ্যে করেনি।’
প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, ‘আমরা দেখলাম স্বাধীন বাংলাদেশে মিরপুরের অ্যাকাডেমি মাঠে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা ওড়ানোর ধৃষ্টতা দেখাল পাকিস্তান ক্রিকেট দল। এই ঘটনাকে কোনো ক্রমেই হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই, দেখা যাবে না। এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের পতাকা উত্তোলন সুস্পষ্টভাবেই ভিন্ন কিছুর ইঙ্গিত। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে তারা যে ইচ্ছাকৃতভাবে এটা করেনি, সেটা বলার সুযোগ নেই।
‘কারণ '৭১-এ সরাসরি যুদ্ধে পরাজিত শক্তি পাকিস্তান যে আজও আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশকে মেনে নিতে পারেনি বা স্বীকার করেনি, তা তারা নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করে এবং অতীতেও করেছে। এমন নজির আমরা পূর্বেও লক্ষ্য করেছি। আশির দশকেও দেখেছি এই বাংলায় ইমরান খানের ধৃষ্টতা!’
এমন ঘটনায় বিসিবি নীরবতায় বিস্মিত হয়েছেন বিশিষ্ট নাগরিকরা। তারা বলেন, ‘আমরা অবাক হচ্ছি এ ব্যাপারে সরকারের নীরবতা প্রত্যক্ষ করেও। এমন একটি ঘটনায় তাদের নীরবতা কী জাতি হিসেবে আমাদের দুর্বলতা ও চেতনায় কালব্যাধিকেই ইঙ্গিত করে না? আমাদের চেতনা কি এতখানিই ক্ষয়প্রাপ্ত ও বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে গেছে? এভাবে চলতে থাকলে আমাদের যে একসময় প্রতিবাদেরও কোনো সুযোগ থাকবে না- এর চেয়ে মর্মান্তিক নির্জীবতা ও দেউলিয়াপনার উদাহরণ কি পৃথিবীর কোথাও আছে?’
এমন ঘটনার দায় সরকার ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী এড়াতে পারে না বলে মনে করেন বিশিষ্ট নাগরিকরা। তারা বলেন, ‘এত কিছুর পর আমরা মনে করি না যে স্বাধীন বাংলাদেশে এই দায়িত্ব পালনের অধিকার আর তাদের আছে। আমরা ক্রীড়ামন্ত্রী, হকি ফেডারেশন ও বিসিবিকে তীব্র নিন্দা এবং ঘৃণা জ্ঞাপন করছি এবং তাদের পদত্যাগ দাবি করছি।
‘আমরা মনে করি, পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের এ আচরণ বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় পতাকা আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং এই ঘটনার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান উদ্দেশ্যমূলকভাবে ও পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশর স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে অপমান করেছে। সুতরাং আমরা এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং অনতিবিলম্বে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড তো বটেই, তাদের দেশের সরকারের তরফ থেকেও ক্ষমা ও ভুল স্বীকারের আনুষ্ঠানিক বার্তা আশা করছি।’
বিশিষ্ট নাগরিকরা হলেন : আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, ব্যারিস্টার এম আমির-উল ইসলাম, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, বিচারপতি গোলাম রাব্বানী, বিচারপতি মোহাম্মদ মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সংসদ সদস্য এরমা দত্ত, সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান, সেলিনা হোসেন, অধ্যাপক ড. ওয়াহিদুজ্জামান চান, জেনারেল হারুনুর রশিদ, আবেদ খান, রামেন্দু মজুমদার, জেনারেল মোহাম্মদ আলী শিকদার, জেনারেল আব্দুর রশিদ, সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, গোলাম কুদ্দুস, পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন প্রমুখ।
আরও হলেন ওয়ালিউর রহমান, অধ্যাপক শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, অধ্যাপক ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক, অধ্যাপক মাহফুজা খানম, আতিউর রহমান, অধ্যাপক উত্তম কুমার বড়ুয়া, জেড আই খান পান্না, মফিদুল হক, অধ্যাপক মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল, সারওয়ার আলী, কাজী মুকুল, আসিফ মুনীর, কবীর চৌধুরী তন্ময়, ক্যাপ্টেন শাহাব (বীর-উত্তম), অধ্যাপক নুজহাত চৌধুরী শম্পা, কামাল পাশা চৌধুরী, শিক্ষাবিদ মমতাজ লতিফ ও রাসেদ চৌধুরী।