চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার সঙ্গে অসদাচরণ ও তার গাড়ির চালককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দাবি, ১৮ নভেম্বর সকালে এ ঘটনা ঘটে।
এর প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ওই উপজেলার অস্থায়ী স্বাস্থ্য কেন্দ্রের টিকা কর্মসূচি। এ ঘটনায় দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানিয়েছেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) চুয়াডাঙ্গার নেতারা।
রোববার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে টানা এক ঘণ্টা জরুরি বৈঠক করেছেন জেলার তিন উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) চুয়াডাঙ্গার সভাপতিসহ জেলার ১৭ জন চিকিৎসক।
অভিযুক্ত দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া না হলে মানববন্ধনের মাধ্যমে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হাদি জিয়া উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকালে মুন্সিগঞ্জ উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রচুর ভিড় হওয়ায় আমাকে বিষয়টি জানান সেখানে দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক। কিছুক্ষণ পর ওই কেন্দ্র পরিদর্শনে যাই। ভিড় উপেক্ষা করে আমি কেন্দ্রের ভেতরে যায়। এসময় আমার গাড়ি চালক নূর আলম টিকা কেন্দ্রে ঢুকতে গেলে সেখানে দায়িত্বরত মুন্সিগঞ্জ পুলিশ ক্যাম্পের উপপরিদর্শক সালাউদ্দিন ও সহকারী উপপরিদর্শক মখলেছুর রহমান তাকে বাধা দেয়।’
তিনি বলেন, ‘পরিচয় দেয়ার পরও বাগবিতণ্ডা শেষে ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা নূর আলমকে চড়-ঘুষি ও মারধর করে। ঘটনাটি আমার সামনে হওয়ায় এগিয়ে গিয়ে পরিচয় দেয়ার পরেও আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন তারা। একপর্যায়ে আমাকে মারার জন্য রুখে আসে তারা। পরে আমার নাম জিজ্ঞাসা করে খাতায় লিখতে যায়। আমি লজ্জায় অপমানে কেন্দ্র থেকে চলে আসি।’
হাদি জিয়া উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমার চালকও একজন স্বাস্থ্যকর্মীর মধ্যেই পড়ে। তারা তাকে মারধর করতে পারেন না। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মধ্যেই যদি পুলিশের মারধর ও লাঞ্চিতের শিকার হতে হয় তাহলে আমাদের নিরাপত্তা কে দিবে?’
তিনি বলেন, ‘আমি ঘটনার সুষ্ঠ বিচারের দাবিতে পুলিশ প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগসহ জেলা মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনকে জানিয়েছি। এছাড়া শনিবার ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সিভিল সার্জন বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়েছি। ওই ঘটনার পর থেকে আলমডাঙ্গা উপজেলায় অস্থায়ী স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে অনির্দিষ্টকালের জন্য টিকা কর্মসূচি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।’
তিনি জানান, শুধু আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টিকা কর্মসূচি চালু আছে। বাকি অস্থায়ী পাঁচটি কেন্দ্র অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) চুয়াডাঙ্গা শাখার সভাপতি ডা. মার্টিন হীরক চৌধুরী বলেন, ‘ওই ঘটনার বিষয়ে সিভিল সার্জনের সঙ্গে বৈঠক করেছি আমরা জেলার ১৭ জন চিকিৎসক। সোমবার জেলা প্রশাসকের কাছে যাব। ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তার শাস্তি না হলে মঙ্গলবার আলমডাঙ্গা উপজেলায় ও সদর হাসপাতাল চত্বরে মানববন্ধনের মাধ্যমে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।’
পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনার দিন বিকেলেই অভিযুক্ত দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে মুন্সিগঞ্জের পুলিশ ক্যাম্প থেকে আলমডাঙ্গা থানায় বদলি করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। সত্যতা পেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’