মেহেরপুরের গাংনীর একটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের কর্মিসভায় নৌকা মার্কায় প্রকাশ্যে ভোট দেয়ার কথা বলেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
ঘরোয়া ওই বৈঠকে দেয়া বক্তব্যের ভিডিও ফাঁস হয়েছে ফেসবুকে।
চাপে পড়া ওই নেতা এখন বলছেন, এটি তার বক্তব্য নয়; যে ভিডিও ফাঁস হয়েছে, সেটি সুপার এডিট করা।
আগামী ২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রার্থীদের জয়ী করতে মাঠে নেমেছে জেলা আওয়ামী লীগ। বিভিন্ন ইউনিয়নে চলছে কর্মিসভা ও পথসভা।
উপজেলার ষোলটাকা ইউপি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী দেলবার হোসেনের পক্ষে গত শুক্রবারের কর্মিসভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও গাংনী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ খালেক।
ওই সভারই একটি ফাঁস হওয়া ভিডিও নিয়ে জেলায় চলছে সমালোচনা।
১ মিনিট ৩৮ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে এম এ খালেক বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগ করি। আমার ভোট আমি দেব। প্রয়োজনে টেবিলে ওপেন সিল মেরে দেব। নৌকার সিলটি আমরা টেবিলে দেব। প্রয়োজনে একটা, দুইটি, তিনটি ভোট দেব; নৌকাতেই দেব। এখানে পুলিশ, প্রশাসন, প্রিসাইডিং কর্মকর্তা যারা থাকবেন, তাদের কিছু করার নাই।
‘যদি পুলিশ প্রশাসন বাধা দেয়, আমরা লন্ডনে থাকব না; আপনাদের আশেপাশেই থাকব। ফোন খোলা থাকবে। আমাদের সাথে যোগাযোগ রাখবেন। আপনাদের সাথে আমি আছি, এমপি আছেন; মন্ত্রী আছেন, গণ্যমান্য নেতারা আছেন। আপনাকে ভোট দেয়ার সময় কেউ ঠেলা দিলে আপনিও তাকে ঠেলা দেবেন। আপনারা সেন্টার নিয়ন্ত্রণে নেবেন।’
এ বিষয়ে ষোলটাকা ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ার হোসেন পাশা বলেন, ‘জেলার একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তিনি (খালেক)। জেলা আওয়ামী লীগের অভিভাবক হয়ে নৌকাতে ওপেন সিল মারতে হবে, এমনটি বলতে পারেন না তিনি।
‘এটি বলার কারণে সাধারণ ভোটার ভোটকেন্দ্রে যেতে নিরুৎসাহিত হতে পারে। এমন ব্যক্তির কাছে এমনটি আমরা আশা করিনি।’
ফাঁস হওয়া ভিডিওর বিষয়ে জানতে চাইলে মেহেরপুর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেক বলেন, ‘আসলে এই বক্তব্যটি সুপার এডিট করা হয়েছে আমাকে এবং আমার দল আওয়ামী লীগকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য। তা ছাড়া আমি আমার দলীয় মেম্বার প্রার্থীদের বলেছিলাম, আপনারা নিজ নিজ ভোট করেন; সমস্যা নেই, তবে নৌকার ভোটের কথা যেন ভুলে যাবেন না।’
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিও নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে তুমুল আলোচনা হলেও জেলা নির্বাচনি কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবু আনসার বলছেন, অভিযোগ না আসায় তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমরা গাংনী উপজেলার কোনো ইউনিয়ন থেকে এখনও অভিযোগ পাইনি; পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
গত ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে মেহেরপুরে ভরাডুবি হয়েছে আওয়ামী লীগের। ওই দিন নয়টি ইউনিয়নের সাতটিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পাওয়া বিদ্রোহী নেতা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হন।