বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘শুভেচ্ছাটা আরেক ধাপ বাড়ালেই’ বিদেশ যেতে পারেন খালেদা

  •    
  • ২১ নভেম্বর, ২০২১ ১৪:২৭

বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, ‘আপনি সিদ্ধান্ত নিয়ে এরই মধ্যে শুভেচ্ছা প্রদর্শন করেছেন; ফলে তিনি জেলখানার বাইরে নিজের গৃহে আছেন। কাজেই আপনার শুভেচ্ছাটা আরেক ধাপ বাড়িয়ে দিলে তিনি বিদেশ যেতে পারেন।’

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করে বাড়িতে ফেরার সুযোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাহী আদেশকে শুভেচ্ছা হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম। বলেছেন, এই শুভেচ্ছা আরেকটু বাড়ালেই বিএনপি নেত্রী চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে পারেন।

সচিবালয়ে রোববার দুপুর ১২টার দিকে ২০ দলীয় জোটের পাঁচ নেতা নিজ উদ্যোগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে খালেদাকে বিদেশ পাঠানোর দাবি নিয়ে বৈঠক করেন।

বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান ক্বারী মোহাম্মদ আবু তাহের, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা এবং লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির মহাসচিব শাহদাৎ হোসেন সেলিম এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

সাক্ষাতের সময় খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে লেখা আবেদন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন তারা। পরে সাংবাদিকদের সাথেও কথা বলেন জোট নেতারা।

২০ দলীয় জোটের অন্যতম নেতা কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম জানান, আবেদনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদারতার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করতে অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।

তিনি বলেন, ‘আমরা পাঁচটি রাজনৈতিক দলের প্রধান মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে সাক্ষাতের জন্য এসেছিলাম। আমাদের আসার উদ্দেশ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করা একটি বিষয়ে, বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা। তাকে বিদেশে পাঠানো। এটির জন্যই আমরা এসেছি।

‘লিখিত আবেদন জমা দিয়েছি। সংক্ষিপ্ত মুখে ব্যাখ্যা করেছি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে কথা শুনেছেন এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছাবেন এ বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন।’

ইব্রাহিম বলেন, ‘আমাদের আবেদনের সারমর্ম, বেগম খালেদা জিয়া এতটাই গুরুতর যে, দেশে চিকিৎসার মাধ্যমে তার সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কম। রাজনীতির সব মতপার্থক্যের ঊর্ধ্বে উঠে, অতীতের ভুলভ্রান্তি ভুলে গিয়ে একান্তভাবে মানবিকতার দৃষ্টান্তস্বরূপ সহমর্মিতা প্রদর্শন করে সরকার যেন বেগম জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দেয়। এটা প্রধানমন্ত্রীর নিকট আমাদের ব্যক্তিগত আবেদন।

‘তিনি (প্রধানমন্ত্রী) অনুমতি দিলে হয় সরকার বন্দোবস্ত করে পাঠাবে অথবা পরিবার বা দল বন্দোবস্ত করে পাঠাবে। এই কাজটি যদি করা হয় বাংলাদেশের ৫০ বছরের ইতিহাসে এটা সর্বশ্রেষ্ঠ মানবিকতার, উদারতার সৌজন্যবোধের দৃষ্টান্ত হিসেবে থাকবে, ইতিহাসে লিপিবদ্ধ থাকবে।’

বঙ্গবন্ধুর উদারতার দৃষ্টান্ত তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ আমি ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষী যেহেতু আমি একজন রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা। বঙ্গবন্ধুর আমলে আমি সেনাবাহিনীতে ছিলাম, তার আমলেই বীরপ্রতীক খেতাব পেয়েছি। তিনি কত উদার ও মহৎ ছিলেন, বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের ভুলভ্রান্তি কীরূপ ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখতেন।

‘তাই আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছি, প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি, আপনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা, আপনি তার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে এই মহানুভবতা প্রদর্শন করুন।’

অতীতে এমন কোনো উদাহরণ আছে কি না জানতে চাইলে জোটের এই নেতা বলেন, ‘আমরা বলেছি অতীতের কোনো রেফারেন্স কোনো আইন দৃষ্টান্তের প্রয়োজন নেই। আপনি (প্রধানমন্ত্রী) এককভাবে এ সিদ্ধান্ত নিন।’

তিনি বলেন, ‘আপনি সিদ্ধান্ত নিয়ে এরই মধ্যে শুভেচ্ছা প্রদর্শন করেছেন; ফলে তিনি জেলখানার বাইরে নিজের গৃহে আছেন। কাজেই আপনার শুভেচ্ছাটা আরেক ধাপ বাড়িয়ে দিলে তিনি বিদেশ যেতে পারেন।’

‘আইনে কোনো স্কোপ নেই’

২০ দলের পাঁচ নেতা খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর আবেদন করলেও আইনে এই ধরনের কোনো সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

৫ দলের নেতাদের সঙ্গে কথা শেষে তাদের দেয়া আবেদনের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে।

এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘এরা ৫ দলের ৫ প্রতিনিধি, যারা বিএনপির ২০ দলের জোটের সদস্য তারা এসেছিলেন। তাদের আবেদন ছিল খালেদা জিয়া অসুস্থ, তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন, তিনি একদম জীবনের শেষ প্রান্তে এসেছেন, সুতরাং তাকে আরও উন্নত চিকিৎসা দেয়ার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া যায় কি না, প্রধানমন্ত্রীর কাছে সে আবেদন নিয়ে এসেছিলেন।

‘আমি বলেছি, এর আগেও খালেদা জিয়ার ছোট ভাই একটি আবেদন করেছিলেন সেটিও আমি আইন মন্ত্রণালয়ে মতামতের জন্য পাঠিয়েছিলাম। আইনমন্ত্রী যথাযথভাবে পার্লামেন্টে প্রশ্ন-উত্তরের সময় বিস্তারিত বলেছেন। আমি এটা বলার পরেও তারা বলছেন, এটা মানবিক কারণে দেয়া যায় কি না সে পত্র দিয়েছেন। এটা আমি যথাযথভাবে আবার যেখানে প্রয়োজন পাঠিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দেব।’

বিদেশ থেকে চিকিৎসক আনা যাবে বলে আইনমন্ত্রী যে মন্তব্য করেছেন সে বিষয়টি তাদের জানানো হয়েছে কি না জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এখন তো যেকোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এখানে আসতে পারেন। আমাদের হাসপাতালগুলো ওয়েল ইক্যুইপড। কাজেই বিদেশি ডাক্তার আসলে যে চিকিৎসা বিদেশে করা যায় সেটা এখানেও করতে পারেন।

‘জেনারেল ইব্রাহিম আমাকে বলেছেন, এটা কোনো উদাহরণ বা আইন নয়; এটা প্রধানমন্ত্রী যেভাবে ছুটে গিয়েছিলেন কোকোর ইন্তেকালের পর, আমি তাকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছি। সে সময় কিন্তু খালেদা জিয়ার বাসভবনের গেটটিও খোলা হয়নি। এগুলো সবই তারা জানেন। তারপরও তারা এটা বলছেন। ওনারা বলেছেন অতীতে যা ঘটেছে সেগুলোকে ভুলে গিয়ে তিনি যেন উদাহরণ তৈরি করেন সেটা বলেছেন।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এটার আইন অনুযায়ী কোনো স্কোপ নেই। প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছা করলে করতে পারেন এটা ওনারা বলে গেছেন। কিন্তু আইনের ভাষায় বলতে গেলে, এটার কোনো স্কোপ নেই।’

২০১৮ সালে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় কারাগারে যাওয়ার দুই বছর পর প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী আদেশে দণ্ড স্থগিত হওয়ার পর ২০২০ সালের মার্চে মুক্ত হন খালেদা জিয়া। তাকে কারাগার থেকে বাসায় ফেরার সুযোগ দেয়া হয় দেশের বাইরে যাবেন না- এমন শর্তে।

গত এপ্রিলে খালেদা জিয়া করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর পরিবারের পক্ষ থেকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করা হয়। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্টই জানিয়ে দেন, খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে যেতে দেয়া হবে না।

সাম্প্রতিক বিদেশ সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার কাছে চান কীভাবে বলেন তো? খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে বাসায় থাকতে দিয়েছি, চিকিৎসা করতে দিয়েছি, এটাই কি বেশি না?’ আপনাকে কেউ যদি হত্যা করার চেষ্টা করত, আপনি তাকে গলায় ফুলের মালা দিয়ে নিয়ে আসতেন? বলেন আমাকে?’

আইনমন্ত্রী পরদিন সংসদে বলেন, ৪০১ ধারায় নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়া বিষয় নিয়ে পুনরায় বিবেচনার কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশের আইনের বইয়ে এটা নাই।

তিনি বলেন, ‘ওনারা যদি দেখাতে পারেন, আমরা তা বিবেচনা করতে পারি। কিন্তু এটা আইনের বইয়ে নেই। ওনারাও দেখাতে পারবেন না, বিবেচনার প্রশ্নই আসে না।’

গত ১৩ নভেম্বর শারীরিক নানা জটিলতা নিয়ে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি করা হয় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে।

সেখানে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার জন্য সম্প্রতি সরকারের কাছে আবারও আবেদন জানিয়েছেন তার ভাই শামীম ইস্কান্দার।

বিএনপি চেয়ারপারসনকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করানোর দাবিতে সারা দেশে গতকাল শনিবার গণ-অনশন কর্মসূচি পালন করেছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। সেখান থেকে সোমবার সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেয়া হয়।

এ বিভাগের আরো খবর