বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ডিজেলের বাড়তি দামে বিপাকে উপকূলের জেলেরা

  •    
  • ২১ নভেম্বর, ২০২১ ০৯:৪৮

খরচ না ওঠায় অনেক জেলে নদীতে মাছ শিকারে যাওয়াই বন্ধ রেখেছেন। ঘাটে পড়ে আছে সারি সারি ট্রলার। তবে মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে, জেলেদের সমস্যার কথা চিন্তা করে নিবন্ধিত জেলেদের ভুর্তকি দেয়ার বিষয়টি ভাবা হচ্ছে।

ডিজেলের তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ভোলার উপকূলের কয়েক লাখ জেলে। বেশি দরে তেল কিনে নদ-নদীতে গিয়ে পর্যাপ্ত মাছ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ছেন তারা।

খরচ না ওঠায় অনেক জেলে নদীতে মাছ শিকারে যাওয়াই বন্ধ রেখেছেন। ঘাটে পড়ে আছে সারি সারি ট্রলার। তবে মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে, জেলেদের সমস্যার কথা চিন্তা করে নিবন্ধিত জেলেদের ভুর্তকি দেয়ার বিষয়টি ভাবা হচ্ছে।

নদী বেষ্টিত দ্বীপ জেলা ভোলা। এখানে নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন কয়েক লাখ জেলে। এখানকার মৎস্যজীবীদের মাছ আহরণের একমাত্র মাধ্যম ডিজেলচালিত ট্রলার। সম্প্রতি হঠাৎ করে লিটার প্রতি ডিজেলের দাম এক লাফে ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৮০ টাকা করায় চরম বিপাকে পড়েছেন উপকূলীয় এলাকার মৎসজীবীরা।

তারা বলছেন, এ বছর ভরা মৌসুমেও নদীতে মিলছেনা কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। এখন শুরু হয়েছে শীতের মৌসুম। সাগর ও নদীতে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ ধরতে যে পরিমাণ জ্বালানি খরচ হয় তার তুলনায় মাছ কম ধরা পড়ে। যাও ধরা পড়ছে তা বিক্রির বড় একটি অংশ চলে যাচ্ছে ডিজেল কিনতে।

ডিজেলের বাড়তি দামে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন জেলেরা। একে তো নদীতে পর্যাপ্ত মাছ নাই, তার ওপর ডিজেলের বাড়তি দাম। অনেক সময় জমানো টাকা থেকে মেটাতে হচ্ছে তাদের।

ভোলাতে অন্য পেশার তেমন সুযোগ না থাকায় মাছ ধরতে যাওয়া ছাড়াও উপায় নেই অনেকের। এরপরও আর্থিক ক্ষতি ঠেকাতে অনেক জেলে নদীতে মাছ শিকারে যাওয়া বন্ধ রেখেছেন।

ভোলার ইলিশা চডার মাথার ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী শাহাবুদ্দিন মিয়া জানান, এ বছর এমনেই নদীতে মাছ ছিল না। ফলে অনেকে মহাজনের ধার দেনা শোধ করতে পারেনায়। তার ওপর অভিযানে অভিযানে পুরা সিজন শেষ করল। এখন জ্বালানি তেলের দাম বাড়া যেন জেলেদের জন্য মড়ারে ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এলো।

তিনি বলেন, ‘একটা ট্রলার নদীতে গেলে তার ২০-৩০ লিটার ডিজেল লাগে। আর বড় বোটে লাগে ৫০ লিটার। এখন লিটার প্রতি ১৫ টাকা বাড়ায় এখন জেলেরা নদীতে নেমে খরচ পোষাইতে পারছে না। সেই কারণে অনেক জেলে এখন মাছ ধরতে নদীতে যাওয়া বন্ধ করে দিছে। ফলে আমরা ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সমুখীন হচ্ছি। আর জেলেদের তো তাদের ধার দেনা রয়েই গেল।’

ধনিয়া মৎস্য ঘাটের ইসমাইল মাঝি বলেন, ‘তেল দিয়া শুধু লঞ্চ আর বাস চলে না। তেল দিয়া আমাগো জেলেগো পেট চলে। এই তেল না হইলে আমরা নদীতে নামতে পারি না। আগে তেলের দাম ৬০ টাকা আছিল। সেই সময় দোকানে আমাদের হাজার হাজার টেকা দেনা হইয়া গেছে।

‘এখন তেলের দাম বাইরা ৯০ টাকা হইছে। এখন আমরা আগের দেনা দিমু, নাকি নদীত নামমু। এখন কোনো জেলে নদীতে যাইতে চায় না। আবার নৌকায় গেলে মাছ পায় ২ হাজার টাকার। দোকানে বাকি ৩ হাজার। তাইলে খরচ চালামু কেমনে, আর সংসারই চলবো কেমনে।’

আরেক জেলে কামাল হোসেন বলেন, ‘মা ইলিশের ২২ দিনের অভিযান থাকায় আমরা নদীতে নামতে পারিনাই। এখন আবার জাটকা রক্ষার অভিযান চলছে। এখন নদীতে নেমে মাছ ধরমু তার মধ্য দিয়ে সরকার তেলের দাম বাড়াইছে। নদীতে গেলে ৫ থেকে ১০ লিটার ডিজেল নিয়া যাই। মাছ পাই ২ হাজার টাকার। খরচ বাদ দিয়া হাতে তেমন কিছুই থাকে না। এখন সংসার চালাইতে অনেক কষ্ট হয়।’

ইলিশা ঘাটের জেলে বাবুল বলেন, ‘আগে তেলের দাম কম ছিল। তখন নদীতে গেলে খরচ বাদ দিয়া মোটামুটি পেষাইছে। এখন সরকার হঠাৎ করে তেলের দাম বাড়ায় নদীত গিয়ে মাঝিরা পোষাইতে পারতাছে না। যেই মাছ পায় সেই মাছ বেইচা মাঝিগো খরচ উঠেনা। যার কারণে নদীতে এখন জেলেরা কম যায়। যদি সরকার তেলের দাম ইকটু কমাইতো তাহলে আমরা জেলেরা নদীত যাইতে পারতাম।’

ভোলা সদরের ধনিয়া ঘাটের বশির মাঝি বলেন, ‘আগে দেখতাম ২-৩ টাকা করে তেলের দাম বাড়াইতো সরকার। আর এখন হঠাৎ করে এক লাফে ২০ থেকে ২৫ টাকা তেলের দাম সরকার বাড়াইয়া দিছে। এত টাকা বাড়াতে জেলেরা খরচ পোষাইয়া উঠতে পারতাছে না।’

মৎসজীবীরা বলছেন, ডিজেলের দাম লিটার প্রতি বাড়ায় মাছ ধরার ব্যয় বেড়েছে ৩০ শতাংশ। এতে মৎস্য অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতি ভোলা সদর উপজেলার সভাপতি মো. এরশাদ ফরাজি বলেন, ‘উপকূলের জেলেরা মৎস্য অর্থনীতিকে টিকিয়ে রেখেছে। এভাবে তেলের দাম বাড়লে জেলেরা এই পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হবে। তখন মৎস্য অর্থনীতির ওপরে প্রভাবে পরতে শুরু করবে। উপকূলের কয়েক লাখ জেলেদের কথা চিন্তা করে সরকার যেন তেলের দাম কমিয়ে দেয় তার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’

ভোলা সদর উপজেলার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. জামাল হোসাইন বলেন, ‘দ্বীপজেলা ভোলার একটা বড় অংশ মৎস্যজীবী পেশার কিংবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এখন ডিজেলের দাম বাড়ায় জেলেদের ওপর কিছুটা প্রভাব পরতে শুরু করেছে। আমরা বিষয়টি অবগত আছি। জেলেদের ওপরে কিছুটা চাপ কমাতে আমরা মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধিত জেলেদের জন্য ভর্তুকি দেয়ার কথা জানিয়েছি।’

ভোলায় জেলায় ১ লাখ ৪২ নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। আর নিবন্ধনের বাইরে রয়েছে আর দেড় লাখ জেলে।

এ বিভাগের আরো খবর