চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর হত্যা মামলার জট পাঁচ বছরেও খোলেনি। মামলার তদন্তে অনাস্থা প্রকাশ করেছে দিয়াজের পরিবার।
পরিবারের দাবি, তদন্তকাজকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে না। সময় ক্ষেপণ করে তদন্ত বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। তদন্ত চলছে দাবি করলেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতির কথা জানাতে পারেনি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।বর্তমানে মামলার তদন্ত করছেন সিআইডি চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আবদুস সালাম মিয়া।
তিনি বলেন, ‘মামলার তদন্ত চলছে। তদন্তের অগ্রগতি আছে। আরও সময় লাগবে।’২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ ক্যাম্পাসে নিজ বাসা থেকে দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে হাটহাজারী থানা পুলিশ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র দিয়াজ বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ছিলেন।দিয়াজের বোন জুবাঈদা ছরওয়ার চৌধুরী নিপা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই মামলার তদন্তের কোনো অগ্রগতি নেই। পাঁচ বছর আগে যেমন ছিল এখনও তেমনই আছে।’এর পেছনে কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘আসামিরা সবাই প্রভাবশালী। তারা প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছে। যতটুকু জানি এই মামলার যিনি বিভাগীয় প্রধান খালেদ শাহনেওয়াজ তিনি চবির সাবেক ছাত্র। উনার সঙ্গে আসামিদের পূর্বপরিচয় আছে।’তদন্তে অনাস্থা প্রকাশ করে সিইআইডির হেডকোয়াটারে অভিযোগ দিয়েছে দিয়াজের পরিবার।
দিয়াজের বোন এ বিষয়ে বলেন, ‘বিষয়গুলো সিইআইডির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে আমরা অভিযোগ দিয়েছি। বিভাগীয় প্রধানের বাড়ি চট্টগ্রামে, কিন্তু চট্টগ্রামে বাড়ি হলে তার চট্টগ্রামে নিয়োগ পাওয়ার কথা না। আমরা শুনেছি তাকে বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে কেউ এনেছে।
‘আমাদের দুই একজন সাক্ষী আমাদের অভিযোগ করেছেন, তাদের উনি বায়াসড করার চেষ্টা করেছেন, ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছেন। বিভাগীয় প্রধানকে আসামিদের গ্রেপ্তারের কথা বললেও এই বিষয়ে তার কোনো বিকারই নাই। এইসব বিষয় উল্লেখ করে আমরা সিআইডি হেডকোয়াটারে অভিযোগ করেছিলাম।’এ ঘটনায় দিয়াজের এক বান্ধবীও ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছেন উল্লেখ করে জুবাঈদা ছরওয়ার চৌধুরী নিপা বলেন, ‘শুনেছি দিয়াজ যখন মারা যায় সে (দিয়াজের বান্ধবী) ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল বলে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। একটা হত্যা মামলায় ঘটনাস্থলে থাকা মানে সেই মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা। কিন্তু তার থেকে জবানবন্দি নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। যেহেতু প্রথম থেকে তার নাম আসছে আমরা প্রথম থেকেই বলছি তাকে গ্রেপ্তার করা হোক।’তিনি বলেন, ‘আমরা জিকে শামীমকে এরেস্ট করার জন্য আলাদতে আবেদন করেছি। আদালত ইনভেস্টিগেটিং অফিসারকে (আইও) নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু আইও এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।’দিয়াজের পরিবার ও চবি ছাত্রলীগের একাংশ দাবি করে আসছিলেন, তাকে ‘পরিকল্পিতভাবে হত্যা’ করা হয়েছে। লাশ উদ্ধারের দুই দিন পর ২০১৬ সালের ২৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে তাকে হত্যার আলামত মেলেনি বলে ‘আত্মহত্যা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ওই প্রতিবেদন প্রত্যাখান করে দিয়াজের পরিবার।ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে দিয়াজের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী ২০১৬ সালের ২৪ নভেম্বর ১০ জনকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন।এতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের ওই সময়ের সভাপতি আলমগীর টিপু, তৎকালীন সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন, ছাত্রলীগ নেতা জামশেদুল আলম চৌধুরী, তাদের অনুসারী রাশেদুল আলম জিশান, আবু তোরাব পরশ, মনসুর আলম, আবদুল মালেক, মিজানুর রহমান, আরিফুল হক অপু ও মোহাম্মদ আরমানকে আসামি করা হয়।দিয়াজ ও অভিযুক্ত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর সবাই সাবেক সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।২০১৯ সালের নভেম্বরে ক্যাসিনো-কাণ্ডে গ্রেপ্তার ঠিকাদার জিকে শামীমকে দিয়াজের পরিবারের পক্ষ থেকে আসামি করা হলে আদালত সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেয়।ওই সময় জাহেদা আমিনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত দিয়াজের লাশ কবর থেকে তুলে ফের ময়নাতদন্তের আদেশ দেয়।
২০১৬ সালের ১০ ডিসেম্বর লাশ তুলে দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগ। ২০১৭ সালের ৩০ জুলাই দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, দিয়াজের শরীরে আঘাতজনিত জখমের মাধ্যমে ‘হত্যার আলামত’ আছে।আদালতের নির্দেশে হাটহাজারী থানায় হত্যা মামলা রেকর্ড হয়। ওই সময়কার ওসি বেলাল উদ্দিন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর নিজেই তদন্ত শুরু করেন। পরে মামলার তদন্তভার যায় সিআইডির কাছে। সিআইডির প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার অহিদুর রহমান তদন্ত শুরুর পর বদলি হন। এরপর থেকে আরও দুই জন তদন্তকারী কর্মকর্তার পরিবর্তন হয়েছে।